করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পরীক্ষা ছাড়াই প্রকাশ করা হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের ফল। রেওয়াজ অনুযায়ী, প্রতিবছর শিক্ষামন্ত্রী বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পরীক্ষার ফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। এবার ছিল ব্যতিক্রম। গতকাল শনিবার সকালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে সরাসরি অনলাইনে যুক্ত হয়ে একযোগে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণার উদ্বোধন করেন। করোনার কারণে এবার এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় পূর্বের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়ন করে প্রকাশ করা হয়েছে এবারের এইচএসসির ফলাফল।
এবার এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। আর ২০১৯ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪৭ হাজার ২৮৬ শিক্ষার্থী। সেই হিসেবে আগের বছরের ‘এ’-প্লাস বেড়েছে ৩.৪২ গুণ। এ ছাড়া ২০১৮ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২৯ হাজার ২৬২ শিক্ষার্থী।
তবে শতভাগ পাস ও প্রায় সাড়ে তিনগুণ জিপিএ-৫ অর্জণের দিনে অন্যান্য বছরের মতো ফল পেতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কোনো ভিড় ছিল না। কলেজ প্রাঙ্গণে ছিল না কোলাহল। শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই এসএমএস ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফল জেনে নিয়েছে। ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস-আনন্দও ছিল ঘরবন্দি।
এইচএসসি ফল প্রকাশের দিনে রাজধানীর বিখ্যাত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছিল সুনসান নীরবতা। নেই এইচএসসি উত্তীর্ণদের চিরচেনা সেই উল্লাস কোলাহল। এ যেন ভিকারুননিসায় এক অচেনা দৃশ্য। সেই অচেনা দৃশ্য আগে ফল প্রকাশের সময় কখনো দেখা যায়নি। করোনা মহামারির সময় ফল প্রকাশে সেই দৃশ্যই দেখা গেলো। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন থাকে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস। কিন্তু মহামারি করোনায় সেই বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস নিবৃত্ত করে দিলো।
গতকাল ভিকারুননিসা কলেজে গিয়ে দেখা গেল এক নম্বর গেট বন্ধ রয়েছে। গেটে গিয়ে নিরাপত্তা কর্মীকে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের বিষয়ে জানতে চাইলেই গার্ড রমজান আলী বলেন, স্যার এবার করোনা তো, তাই ফলাফল অনলাইনে দেওয়া হবে, কলেজে জড়ো হওয়া নিষেধ, তাই শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা আসেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, এবার এইচএসসি ফল প্রকাশের পর মিডিয়ায় কোনো ব্রিফিংও করবে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। অন্য বছর ফল প্রকাশের সময় থাকে প্রাণচাঞ্চল্য। বাঁশি আর হারমনিয়াম নিয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
স্কুলের গার্ড আরও বলেন, দুই দশক ধরে এখানে চাকরি করছেন। পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখেননি। করোনা সেই প্রাণচাঞ্চল্য কেড়ে নিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন