বিশেষ সংবাদদাতা : পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে গতকাল সোমবার থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে। গতকাল সকাল ৮টা থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিন আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের টিকিট নিতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল।
অগ্রিম টিকিটের জন্য আগের দিন রোববার রাত থেকেই মানুষ কশলাপুর রেল স্টেশনে জড়ো হতে থাকে। শত শত যাত্রী সারা রাত জেগে ভোরে লাইনে দাঁড়ায় টিকিট নেয়ার জন্য। সকালে টিকিট প্রত্যাশীদের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। লাইন ছাপিয়ে যায় স্টেশনের গ-ি পেরিয়ে বহুদূর। রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, টিকিট প্রত্যাশীদের নিরাপত্তার জন্য আগে থেকে র্যাব, পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োজিত রাখা হয় কমলাপুর স্টেশনে। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৮টা বাজার সাথে সাথে কাউন্টার খোলা হয়। লাইনে তখন হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে। প্রথম টিকিট পাওয়া সৌভাগ্যবান ব্যক্তি মোহাম্মদ সাদেক। রাজধানীর নবাবপুরে বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। যাবেন চট্টগ্রামে। সোনারবাংলা এক্সপ্রেসে আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের যাত্রী হিসেবে টিকিট পেয়েছেন তিনি। সাদেক বলেন, রোববার সন্ধ্যা ৭টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছিলাম। আমি যখন এসেছিলাম তখন হাতেগোনা ৮-১০ জন ছিলাম এখানে। এরপর রাত যতই বাড়ে মানুষের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। আমরা যারা প্রথমে এসেছিলাম এই টিকিট কাউন্টারের নিচেই সারারাত জেগে কাটিয়েছি। নির্ঘুম রাত শেষে আজ (সোমবার) খুব সকালে লাইনে দাঁড়াই। সবার সামনে থাকায় ট্রেনের প্রথম টিকিটটা আমিই পেয়েছি। তিনজনের জন্য টিকিট কেটেছি। খুব ভাল লাগছে। পরিবারকে নিয়ে একসঙ্গে বাড়ি ফিরতে পারব।
গতকাল সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয়। তাদের কেউ চট্টগ্রাম, কেউ রাজশাহী, রংপুরে, খুলনা যাবেন। তারা জানান, শত শত টিকিট প্রত্যাশী রোববার রাত থেকেই কমলাপুর রেল স্টেশনের প্লাটফরমে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তাদের কেউ সন্ধ্যায়, কেউ মধ্যরাতে পৌঁছান কমলাপুরে। ফ্লোরে কাগজ বিছিয়ে কাউন্টারের সামনে কেউ গল্প-গুজব করে, কেউ কেউ তাস খেলে আবার কেউ কেউ মোবাইলে গান শুনে, ভিডিও দেখে অথবা গেমস খেলে সময় পার করেছেন। প্রথম দিনে কমলাপুরে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের উপস্থিতিও ছিল উল্লেখ করার মতো।
এদিকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি উপলক্ষে কমলাপুর রেলস্টেশন জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। টিকিট কালোবাজারি রোধে সব ধরণের ব্যবস্তা নেয়া হয়েছে বলে জানান কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে আন্তঃনগর ও ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট পর্যায়ক্রমে বিক্রি করা হবে। আজ মঙ্গলবার অগ্রিম টিকিটের দ্বিতীয় দিনে দেয়া হবে ৮ সেপ্টেম্বর, ৩১ আগস্ট ও ৯ সেপ্টেম্বরের টিকিট। একইভাবে আগামীকাল ১ সেপ্টেম্বরে ১০ সেপ্টেম্বর, ২ সেপ্টেম্বরে ১১ সেপ্টেম্বরের টিকিট বিক্রি করা হবে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টিকিট বিক্রির কার্যক্রম চলবে এবং ১ জন যাত্রী সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট কিনতে পারবেন।
চট্টগ্রামে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু
চট্টগ্রাম ব্যুরো : ঈদুল আযহা উপলক্ষে চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়েছে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি। গতকাল (সোমবার) সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি করা হয় রেলস্টেশনের কাউন্টারগুলোতে। তবে প্রথম দিনে স্টেশন ছিল একেবারে ফাঁকা। ছিল না যাত্রীদের লাইন। যারাই এসেছেন কোনো ধরনের অপেক্ষা ছাড়াই কিনতে পেরেছেন টিকিট। তবে আজ থেকে টিকিট কিনতে যাত্রীদের ভিড় বাড়বে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
প্রথম দিনে বিভিন্ন রুটের ৭ সেপ্টেম্বরের টিকিট দেয়া হলেও যাত্রীদের তেমন কোনো লাইন দেখা যায়নি। যারা কাউন্টারে এসেছেন তারা মূলত নিচ্ছেন ১ বা ২ তারিখের নিয়মিত যাত্রার টিকিট। আজ মঙ্গলবার ৮ সেপ্টেম্বর, আগামীকাল দেয়া হবে ৯ সেপ্টেম্বরের টিকিট। ১ সেপ্টেম্বর ১০ সেপ্টেম্বরের, ২ সেপ্টেম্বর ১১ সেপ্টেম্বরের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে। একইভাবে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে ফিরতি টিকিট বিক্রি। তা চলবে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
খুলনায় আগ্রহ নেই ট্রেনের অগ্রিম টিকিটে
খুলনা ব্যুরো : ঈদুল আযহা উপলক্ষে খুলনায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিটে আগ্রহ নেই যাত্রীদের। তবে ফিরতি টিকিট পেতে কর্মস্থল ফেরা মানুষের জটলা বাঁধবে খুলনা রেল স্টেশনে। ঈদে সাধারণত খুলনা ছেড়ে বাইরে যান খুব অল্পসংখ্যক মানুষ আর প্রিয়জনের টানে খুলনাতে আসেন বিপুলসংখ্যক কর্মজীবী। ফলে অগ্রিম টিকিটের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি চাহিদা থাকে ফিরতি টিকিটের।
গতকাল সোমবার সকালে খুলনা রেল স্টেশনে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলেও বেলা ১১টা পর্যন্ত কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়নি। অন্য সাধারণ দিনের মতোই অনেকটা ফাঁকা রেল স্টেশন। অলস সময়ই পার করতে দেখা গেছে টিকিট বিক্রেতাদের।
ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৫ সেপ্টেম্বর। যা চলবে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ওই সময়ে ১৪ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বরের ফিরতি টিকিট পাওয়া যাবে। এক যাত্রী সর্বাধিক চারটি টিকিট ক্রয় করতে পারবেন।
খুলনা স্টেশন মাস্টার মোঃ আমিরুল ইসলাম বলেন, খুলনাতে অগ্রিম টিকিটের আগ্রহ নেই যাত্রীদের। জটলা বাঁধবে ফিরতি টিকিটে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন