বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ইনকিলাবের খবরে তোলপাড়

মেঘনা গ্রুপের পেটে নদী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

মেঘনা গ্রুপের নদী চুরির নিয়ে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে ‘মেঘনা গ্রুপের পেটে নদী’-শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছে। একই সাথে সর্বত্রই আলোচনা হয়েছে মেঘনা গ্রুপের নদী দখলের প্রসঙ্গ। বছরের পর বছর প্রভাব খাটিয়ে ও মিডিয়া ব্যবহার করে মেঘনা গ্রুপ যেভাবে নদী গিলে ফেলেছে তার চিত্র ফুটে উঠেছে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনে। কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে গিয়ে মেঘনা গ্রুপের ৭টি প্রতিষ্ঠান প্রবাহমান মেঘনা নদীর ২৪১ দশমিক ২৭ একর জমি অবৈধ দখল করে নিয়েছে। এর মধ্যে ৮৪ দশমিক ৭৭ একর নদীর জমিতে মূল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আবার ৫ দশমিক ৫ একর জমিতে নির্মাণ করেছে নিজস্ব রাস্তা। অবৈধভাবে দখল করা এসব জমি এক মাসের মধ্যে উদ্ধার করে নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। এ ছাড়া নদী রক্ষায় ব্যর্থ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করেছে জাতীয় নদী কমিশন। বিশেষজ্ঞদের মতে, কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক এক্ষুণি ব্যবস্থা নিতে না পারলে দখলদারদের কবল থেকে নদী উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে। মেঘনার ক্ষেত্রে এটি আরও কঠিন হবে। কারণ এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে মেঘনা নদী দখলদকারি মদীনা গ্রুপের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মেঘনা গ্রুপের দখলকৃত নদীর জায়গা উদ্ধার করা হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, মেঘনা গ্রুপের দখলে থাকা নদীর জায়গা দখলমুক্ত করতে একাধিকবার অভিযান শুরু হলেও মাঝপথে তা আটকে গেছে। এরপর আরে সেখানে অভিযান পরিচালিত হয়নি। এতে করে অন্যান্য দখলদাররাও ছাড় পেয়ে গেছে। নারা

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনটি আমরা এখনও পাইনি। তবে গত ২৮ জানুয়ারি জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের সাথে এ বিষয়ে সভা হয়েছে। মেঘনা গ্রুপের নদী দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের গঠিত ১২ সদস্য তদন্ত কমিটি দীর্ঘ দুই বছর সরেজমিনে তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন গত ১৪ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিয়েছে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান হাওলাদার স্বাক্ষরিত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, নারায়গঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলা এলাকায় মেঘনা গ্রুপ প্রবাহমান মেঘনা নদী দখলের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করার জন্য ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সকল সদস্য তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে কিন্তু দুভাগ্যবত ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে করোনার প্রাদর্ভাবের কারণে কমিটির তদন্ত কার্যক্রম কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে। পরে তা আবারো কার্যক্রম শুরু করে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মেঘনা শাখা নদী মারাখালী নদীর অংশের উত্তর ও দক্ষিণ অংশের পাড় থেকে নদীর ভেতরে প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত দখল করার অভিযোগ উঠেছে। মেঘনা নদীর অন্তত ৩০০ বিঘা জমি দখল করেছে মেঘনা গ্রুপ। দখলকৃত স্থানে ইতোমধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে মেঘনা গ্রুপের মালিকানাধিন ফ্রেস টি ফ্রেস সুগার মিলস, পেপার মিলস, কেমিক্যাল ফ্যাক্টারিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান। ভুমি দস্যুতার এই প্রতিযোগিতায় পিঠিয়ে নেই মেঘনার পারিবারিক প্রতিষ্ঠানগুলোও। গ্রুপের ভাগ্নিজামাই বলে পরিচিত আল মোস্তফার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গ্রুপ ও নদী দখল করে ব্যাগের কারখানা গড়ে তুলেছেন। যা বিগত ২০১০ সাল থেকে ধাপে ধাপে এবং একটু একটু করে এসব জমি দখল করে নেয়া হয়। মেঘনা গ্রুপের এমন অবৈধ দখলে ভরাট হওয়ায় সাধারন গতিপথ হারাতে বসেছে প্রবাহমান মেঘনা। নদী ডাকাতির এক কর্মকান্ডে অস্তিত্ব সংকটের হুমকিতে আছে আশেপাশের নদী সংলগ্ন বিভিন্ন নিচু এলাকা ও চরে জমিগুলো। আনন্দ বাজার এলাকায় মেঘনা নদীর প্রায় ৫০০ ফুট জায়গা দখল করে মাটি ভরাট করেছে মেঘনা গ্রুপ এবং প্রায় ৫০ একর জমি। পিরোজপুর ইউনিয়নের ছয়হিস্যা জৈনপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ১০০ বিঘা জমি গ্রাস করেছে। আষাড়িয়ার চড় ও ঝাউচর এলাকায় নদীর অধিকাংশ বালু ভরাট করেছে। নদীর প্রায় ৭০০ ফুট দখল করে সীমানা প্রাচীর নিমাণ করেছে মেঘনা গ্রুপ। গতকাল এ বিষয়ে সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে মদিনা গ্রুপের দখলে থাকা নদী ও নদীর তীরবর্তি সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু মেঘনা গ্রুপের দখলে থাকাই নয় ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের দখলের তালিকা করে জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে নদীর জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (22)
Anowar Hossain Rasel ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৩৮ এএম says : 0
এস আলম যে কর্নফুলী নদী খেয়ে ফেলছে তা কেন চোখে পড়েনা ?
Total Reply(0)
আরাফাত ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৪০ এএম says : 4
এই রিপোর্টটির জন্য দৈনিক ইনকিলাবকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
হেদায়েতুর রহমান ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৪১ এএম says : 3
এভাবে সমাজের ও দেশের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরুন। তাহলেই দেশ ও মানুষ উপকৃত হবে।
Total Reply(0)
অমিত ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৪১ এএম says : 3
এটা হলে সাংবাদিকতা। যার মাধ্যমে জাতী উপকৃত হয়।
Total Reply(0)
নিয়ামুল ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৪২ এএম says : 0
দ্রুত সময়ের মধ্যে নদীর জমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক
Total Reply(0)
রায়হান ইসলাম ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৪৩ এএম says : 0
তরল বর্জ্য নদীর পানিতে ফেলেও পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রের জন্য বিপদজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
Total Reply(0)
হুমায়ূন কবির ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৪৩ এএম says : 0
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, বিআইডব্লিটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড আসল অপরাধী
Total Reply(0)
Zahir Islam ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:১৭ পিএম says : 0
Go ahead, very good, save the country, give information of other culprits.
Total Reply(0)
MANNAN SARKER ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৮:১৪ এএম says : 0
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় থ্রি এংগেল মেরিন লিমিটেড কোম্পানিটি মেঘনা ও ফুলদি নদীর বিশাল একটা অংশ বালি ভরাট করে শিপইয়ার্ড করেছে। এদের ধরেন
Total Reply(0)
সালাহউদ্দিন ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:৪৩ এএম says : 0
নদীর ম্যাপ দেখলেই কিন্তু বোঝা যায় কে কে নদী দখল করেছে
Total Reply(0)
Anwar ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৭:২২ পিএম says : 0
রাঘব বোয়াল এরা কিছু হবে না,,,,,
Total Reply(0)
King ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১২ এএম says : 0
টাকা পেলে তো প্রসাশন সব কিছু ভুলে যায়।
Total Reply(0)
Biswa ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৫৯ এএম says : 0
সব নদী খেকো দের ধরতেই হবে
Total Reply(0)
সাদনান বিন রতন ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৭:৩৯ এএম says : 0
দখল মুক্ত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে
Total Reply(0)
সাদনান বিন রতন ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৭:৩৯ এএম says : 0
দখল মুক্ত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে
Total Reply(0)
Saif Khan ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:৫৫ পিএম says : 0
Please be strict to this kind of group who are environment hazards.
Total Reply(0)
Saif Khan ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:৫৫ পিএম says : 0
Please be strict to this kind of group who are environment hazards.
Total Reply(0)
kazi Abdul Hamid ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:১১ পিএম says : 0
সব আই ওয়াশ কিচ্ছু হবেনা এবং এদের ধারে কাছেও সরকার এবং প্রশাসন যেতে পারবেনা!
Total Reply(0)
সাংবাদিক এম কে মনির ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:০৭ পিএম says : 0
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে হাজার হাজার একর জমি দখলে মেতে ওঠেছে বিভিন্ন শিল্প গ্রুপগুলো। বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা,সলিমপুর, বারআওলিয়াসহ পুরো উপজেলায় কৃষি জমি বিলীন করে ধ্বংসাত্মক শিল্প গড়ে তুলতে মরিয়া তারা।
Total Reply(0)
সাংবাদিক এম কে মনির ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:০৮ পিএম says : 0
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে হাজার হাজার একর জমি দখলে মেতে ওঠেছে বিভিন্ন শিল্প গ্রুপগুলো। বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা,সলিমপুর, বারআওলিয়াসহ পুরো উপজেলায় কৃষি জমি বিলীন করে ধ্বংসাত্মক শিল্প গড়ে তুলতে মরিয়া তারা।
Total Reply(0)
তৌহিদুল ইসলাম ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:২২ পিএম says : 0
খুবই ভালো সংবাদ তবে টাকা মেরে মুখ বন্ধ করে দিবে প্রশাসনের ডাবল রুজির কমিশনের ব্যবস্থা হলো ।ডিসি এসপি এসিল্যন্ড সাহেবেরা কি প্রতি মাসে বেতন নেয় না?
Total Reply(0)
Nannu chowhan ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৭:৪১ এএম says : 0
Prothomei ami inquilab potrikakar shangbadik shompadokke janai amar antorik mobarokbad,
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন