স্টাফ রিপোর্টার : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে দীর্ঘ ৩৫ মিনিটের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন, মানবাধিকার রক্ষাসহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে এ বৈঠকে। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
গতকাল মহানগরীর বারিধারায় যুক্তরাষ্ট্রের চেন্সারি কমপ্লেক্স ভবনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একথা জানান। এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে একটি লিখিত রিপোর্ট জন কেরিকে তুলে দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে জন কেরির সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব সহকারে কাজ করতে চান, আগ্রহী। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আশাবাদী, আমরাও (বিএনপি) আশাবাদী, যে মার্কিন সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নও হবে, একই সঙ্গে এখানে (বাংলাদেশ) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। আগামী নির্বাচন সম্পর্কে, গণতন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে নির্বাচনের বিষয়ে কী ধরনের আলোচনা হয়েছে, তার বিস্তারিত কিছু বলেননি বিএনপি মহাসচিব।
সূত্র জানায়, বৈঠকে খালেদা জিয়া দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরলেও গণতন্ত্রের ব্যাপারেই বেশি গুরুত্ব দেন। গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকায় দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটছে বলেও তিনি কেরিকে অবহিত করেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিকেই ফোকাস করেন। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিকল্প নেই বলে তিনি জানান। এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
খালেদা জিয়া তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। তারা হলেন- দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ।
বিকাল সোয়া ৪টায় দলীয় পতাকাবাহী ক্রীম রঙের নিশান পেট্রোল গাড়িতে বিএনপি চেয়ারপার্সন গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে বারিধারা দূতাবাসে আসেন। এর কিছুক্ষণ আগেই বিকাল ৪টায় ধানমন্ডির অনুষ্ঠান শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দূতাবাসে আসেন। বৈঠক শেষ করে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে দূতাবাস থেকে বেরিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিদল ছাড়াও ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাটও উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল আরও জানান, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে ৪টা ৩৫ মিনিট থেকে ৩৫ মিনিট স্থায়ী এই বৈঠক হয়। বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরে তিনি বলেন, জন কেরি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। আমাদের দলের চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার সঙ্গে আরো তিন সদস্যসহ বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে আমরা বৈঠকে বসি। এতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অবস্থা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকারের বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে। আইনের শাসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশে যেটা এখন অত্যন্ত সংকটময় বিষয় যে, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস এ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা হয়েছে। দেশের একটা স্থিতিপূর্ণ অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সঙ্গে তারা সহযোগিতা করতে চায়।
বৈঠক সূত্র জানায়, দলীয় সরকারের অধীনে কোন নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় জানিয়ে বর্তমান সরকারের আমলে উপ-নির্বাচন, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখলসহ নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়। এছাড়া বিরোধী দলের উপর হামলা মামলা, গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইনের শাসনে হস্তক্ষেপসহ সার্বিক বিষয়ে একটি ডকুমেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরা হয়। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে বিএনপি সবসময় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এ ইস্যুতে বিএনপি জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানালেও তা সরকারের তরফ থেকে প্রত্যাখ্যানের কথাও জানানো হয়।
২০১২ সালের ৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন্ দুইদিনের সফরে ঢাকায় আসলে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিলো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন