আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসের সভায় মির্জা ফখরুল
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশকে জঙ্গল রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। মিডিয়ার কেউ কথা বলতে পারছে না, অসহায় হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, একদিকে ভয়াবহ জঙ্গিবাদ, আক্রমণ-আগ্রাসন, অন্যদিকে এই ফ্যাসিবাদের আক্রমণ-আগ্রাসন এদেশকে পুরোপুরিভাবে একটা, আমি বলি যে এখানে টার্নিং এ জঙ্গল স্টেইটÑএকটা জঙ্গল হয়ে গেছে। একটা জঙ্গলের মধ্যে বাস করছি আমরা। এখানে মনে হয় যে, চতুর্দিকে পশু। এজন্য আসুন আমাদের প্রিয় দেশ ও রাষ্ট্রকে রক্ষা করবার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। অনুষ্ঠানে দলের পক্ষ থেকে ‘ধানের শীষ’ পত্রিকার সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ান্থ ‘অনন্ত অপেক্ষা....’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করেন। যাতে ২০০৯-২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজ বা গুম হওয়া দলের নেতা-কর্মীদের পরিচয় তুলে ধরা হয়।
প্রতিবছর জাতিসংঘের ঘোষণায় তার সদস্য দেশগুলো ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস পালন করে।
বর্তমান সরকারের আমলে সরকারের দমনপীড়নের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এনফোর্স ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (জোর করে অপহরণ বা তুলে নিয়ে যাওয়া) এটা জাতিসংঘের ঘোষণায় ঘৃণ্যতম অপরাধ। আজকে বাংলাদেশে যারা এই ঘৃণ্যতম অপরাধ করছেন, তারা যদি মনে করে থাকেন, তারা রেহাই পেয়ে যাবেন, এটা ভুল। তারা কেউই রেহাই পাবেন না। একদিন না একদিন জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন অবশ্য এই ঘৃণ্যতম অপরাধের জন্য দায়ী তাদেরকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গোটা দেশ আজ কারাগারের বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। এখানে কেউই নিরাপদ নয়। যেমন আজকের আমাদের অনুজ সাথীরা-সহকর্মীরা, ছাত্রদল-যুবদলের ছেলেরা, আমাদের ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমরা যখন নিখোঁজ হয়ে যায়। তারপরই কিন্তু একেক সময়ে নতুন নতুন ইস্যু বা বিষয় তুলে নিয়ে এসে একেকটা ইস্যু তৈরি করে আবার নতুন করে গ্রেফতার শুরু হয়, হত্যা শুরু হয়।
এখন বলা হয় যে জঙ্গি, ধরে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ার, গান ব্যাটেলে হত্যা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, জঙ্গিদের জন্য কোনো আইন থাকবে না। অথচ আইনের সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলা আছে। জঙ্গিদের নাম করে সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদের কেউ কিন্তু আর জীবনে ফিরে আসতে পারছেন না, তাদের বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে আজ ভোটের অধিকার নেই, মানবাধিকার নেই, মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নেই।
সংবাদপত্রকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, মিডিয়া অসহায় হয়ে পড়েছে। তারা (মিডিয়া) পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারের দ্বারা। কেউ যদি এদিক-সেদিক করেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ধমক দিয়েছেন মিডিয়া দিতেও পারি, নিতেও পারি। এরপরে কোন মিডিয়ার মালিকের ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে, দেশে আপনার সরকারের নির্দেশের বাইরে যাবে। কেউই সরকারের নির্দেশের বাইরে যেতে পারছে না।
আদালতের প্রতি ইঙ্গিত করে সেখানে এসেও ‘অনেক সময়’ সুবিচার পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, হাজারো সহকর্মী আমাদের নিহত হয়েছেন, গুলিতে নিহত হয়েছেন। গুম ছয়শ’র ওপরে, অসংখ্য পঙ্গু হয়েছেন। হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আসুন আমরা অধিকার আদায়ের জন্য আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। নিজেরা কিছু ত্যাগ স্বীকার করার জন্য প্রস্তুতি নেইÑএই হোক আজকে আমাদের আন্তর্জাতিক গুম দিবসে শপথ।
দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার ‘সরকারি চক্রান্তে’র সমালোচনা করে ফখরুল ইসলাম বলেন, এই সরকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম মুছে দিতে যাচ্ছে ইতিহাস থেকে। নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, তার স্বাধীনতার পদক কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমরা বলতে চাই, জিয়াউর রহমান নাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধÑএই দুইটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, অবিচ্ছেদ্য। যারা জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করবেন, তারা স্বাধীনতা যুদ্ধকে অস্বীকার করবেন। তার পদক কে নিলেন, তার পদক কে কোথায় রাখলেন, এটা এখন বিচার্য বিষয় নয়।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আজকে গণতন্ত্র নেই বলে রাজনীতি নেই। যে রাজনীতি আছে সেটা একদলীয় একটি অপরাজনীতি। এটা সুষ্ঠু রাজনীতি নয়। গণতন্ত্র নেই বলে, মানুষের অংশীদারিত্ব নেই বলে, সরকারের জবাবদিহিতা নেই বলেই আজকে সমাজে নানা রকমের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে যে বিষয়টি আমাদের উদ্বিগ্ন করে, তা হচ্ছে জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ-সন্ত্রাসবাদ।
এই সংকট থেকে উত্তরণে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে শক্তিশালী করার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মানবাধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, ছাত্র দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
নিখোঁজ হওয়া পরিবারের মধ্যে সাবেক এমপি হুমায়ুন কবীর পারভেজের স্ত্রী শাহনাজ আখতার, ছাত্রদলের আদনান চৌধুরীর বৃদ্ধ পিতা রুহুল আমিন চৌধুরী, নাজমুল ইসলামের স্ত্রী সাবেরা নাজমুল, নিজামউদ্দিন আহমেদ মুন্নার পিতা শামসুদ্দিন আহমেদ, সেলিম রেজা পিন্টুর বোন মুন্নী আখতার, খালেদ হাসান সোহেলের শিশুপুত্র আরিয়ান, চঞ্চল আহমেদের শিশুপুত্র আহাদ, সেলিম শাহিনের শিশুপুত্র আফতাব আহমেদ, পারভেজ হোসেন শিশুকন্যা হৃদি হোসেন তাদের স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আর্তির কথা জানান।
অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হক, কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, কায়সার কামাল, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আব্দুুল আউয়াল খান, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন