বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বেক্সিমকো পিপিই পার্কের উদ্বোধন

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যকে আরো শক্তিশালী করবে : মার্কিন রাষ্ট্রদূত সাভারে ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে গড়ে উঠেছে প্লান্টটি

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বেক্সিমকোর নতুন পিপিই পার্ক উদ্বোধন করলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার। গতকাল বুধবার সাভারে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে গড়ে তোলা এই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) উৎপাদন কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন তিনি।

বেক্সিমকোর সিইও এস নাভেদ হুসাইন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এছাড়া ইন্টারটেকের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক স›দ্বীপ দাস, উত্তর আমেরিকার গ্লোবাল সফটলাইন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট রক করোনা, উত্তর আমেরিকার পিপিই কারিগরি প্রধান জ্যাশন অ্যালেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রায় ২৫ একরের বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে পিপিই পার্কটি। বাড়তি চাপ সামলাতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সুযোগ রাখা হয়েছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও স্থাপত্যের সংমিশ্রণে মাত্র ছয় মাসে সকল অনুমতিসহ উৎপাদনক্ষম করে গড়ে তোলা হয় কারখানাটি। এখানে কাঁচামাল থেকে বিভিন্ন ওজনের লেমিনেটেড ফেব্রিক্সস ও মেল্টব্লোন পদার্থ তৈরি হবে। তারপর এসব থেকে প্রস্তুত করা হবে জীবাণুমুক্ত ডিজপজেবল আইসোলেশন ও সার্জিক্যাল গাউন, পুনঃব্যবহারযোগ্য আইসোলেশন গাউন, এন-৯৫ ক্যাপ টাইপ ও ফোল্ডেবল টাইপ মাস্ক, সার্জিক্যাল মাস্ক ক্স ডিজপজেবল স্ক্রাবস, উভেন ও কিটেন সু কভার ও হেড কভার, পুনঃব্যবহারযোগ্য পানিরোধী স্ক্রাবস।

কারখানাটি ঘুরে দেখা গেছে, পুরো কারখানাটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এখানে জীবাণুমুক্ত গাউন তৈরির জন্য একটি আলাদা ইটিও স্টেরালাইজেশন সুবিধা সম্পন্ন কক্ষ রয়েছে। এছাড়া বেক্সিমকো ও ইন্টারটেকের যৌথ উদ্যোগে পার্কের অভ্যন্তরে ১২ হাজার বর্গফিট জায়গাজুড়ে একটি সর্বাধুনিক ‘পিপিই সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি রয়েছে। এই পিপিই ল্যাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের মানদ- অনুসারে পিপিই তৈরির জন্য সকল ধরনের পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে।

এই চুক্তি সম্বন্ধে ইন্টারটেকের সিইও আন্দ্রে লাক্রোইক্স জানান, ইন্টারটেকের লক্ষ্য হল, জীবনমান, নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে একটি উন্নততর ও অধিক নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলা। এই লক্ষ্যেই আমরা বেক্সিমকোর সঙ্গে আমাদের চুক্তি স¤প্রসারিত করেছি। এর ফলে এই পিপিই উৎপাদন কেন্দ্রে সঠিক মান নিশ্চিত করে পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

বেক্সিমকোর সিইও সৈয়দ নাভেদ হুসাইন বলেন, বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বেক্সিমকো অবিচ্ছিন্নভাবে অবদান রেখে চলেছে। আমি এই নতুন সূচনার জন্য আনন্দিত, কেননা এটি বাংলাদেশকে বিশ্বের পিপিই উৎপাদন মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে। ইন্টারটেকের মান নিশ্চিতকরণের প্রক্রিয়া আমাদের বিভিন্ন আইনি ও সম্মতিপত্র গ্রহণে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছে এবং আমাদের সম্পর্ককে আরো মজবুত করেছে। এই উৎপাদন কেন্দ্রটি একাধারে উৎপাদক, ক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা, বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও সরকারকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করতে সক্ষম হবে। কারণ এখানে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানদ- অনুসারে একইসাথে সকল প্রকার পণ্য উৎপাদন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে বিশ্বের বৃহত্তম পিপিই উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এটি সেই লক্ষ্যকে দৃশ্যায়মান করছে। বেক্সিমকো পিপিই পার্কটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় বাজারেই পণ্য সরবরাহ করবে। এর লক্ষ্য হল নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চল কেন্দ্রিক না হয়ে সকল ধরনের পিপিই উৎপাদন ও রপ্তানি। বেক্সিমকো গ্রুপ তাদের নতুন বেক্সিমকো স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারীদের কাছে মাস্ক এবং প্রতিরক্ষামূলক গাউনসহ পিপিই সরবরাহের চুক্তি করেছে। তৈরি পোশাকের বাইরে রপ্তানির জন্য সঠিক মানদ- বজায় রেখে পণ্য উৎপাদন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির সক্ষমতা ও এগিয়ে যাওয়ার প্রমাণ হিসাবে এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলার।

উদ্বোধনের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, বেক্সিমকোর এই প্লান্টটি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শক্তিশালী এবং ক্রমবর্ধমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে আরো শক্তিশালী করবে। সা¤প্রতিক সময়ের সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রতিবছর আমেরিকায় ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন পণ্য রপ্তানি করে, যা বিগত দশকের তুলনায় দ্বিগুণ। অপরদিকে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চাহিদা পূরণে যথোপযুক্ত হওয়ায় আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য চারগুণ বেড়েছে। মিলার বলেন, আমরা উভয় জাতিই দেশের উন্নয়নে বাণিজ্য ও স্বাধীন উদ্যোগের মূল্য সম্পর্কে সাধারণ কিছু দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করি। বেক্সিমকো এই মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে। সবশেষে কারখানা ঘুরে দেখেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলার। কারখানার পরিবেশ ও কমপ্ল্যায়েন্স দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন