শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

ইসলামে মাতৃভাষা চর্চা

আবু তালহা রায়হান | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৬ এএম

মানুষের মনের অভিব্যক্তি প্রকাশের ধ্বনিকে ভাষা বলে। ভাষার উদ্ভব ও উৎস সন্ধানে ভাষাতাত্ত্বিকদের অনুসন্ধানী করেছে বটে; কিন্তু ভাষার আবির্ভাব তত্ত্বের কোনো সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য আবিষ্কার করা যায়নি। নানা ধরনের থিওরি তত্ত্ব আবিষ্কারের মোদ্দা কথা হচ্ছে, ভাষা আল্লাহ প্রদত্ত দান। এর সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তা’য়ালা। পৃথিবীতে অসংখ্য ভাষার মধ্যে থেকে প্রত্যেক জাতিরই স্বীয় ভাষা রয়েছে। ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। অপরিসীম গুরুত্বের সঙ্গে মাতৃভাষাকে স্মরণ করে ইসলাম। মাতৃভাষা শিক্ষা ও বিকাশে ইসলামের রয়েছে অকুণ্ঠ সমর্থন। আমরা বাঙালি। আমাদের মাতৃভাষা বাঙলা। পৃথিবীতে বাঙলাই একমাত্র ভাষা যার মর্যাদা আদায়ে মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। অসংখ্য মায়ের কোল খালি হয়েছে। জগতের এ-এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।
পবিত্র কুরআন থেকেই আমরা জানতে পারি যে, ইসলামী আদর্শ যেমন সর্বজনীন ইসলামের ভাষাও সার্বজনীন। এ কারণেই দেখা যায়, নবীজি সা.-এর ইন্তেকালের পর ইসলাম প্রচারকগণ পৃথিবীর যে অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে গেছেন, সেই অঞ্চলের মানুষের ভাষা আয়ত্ব করে সে ভাষাতেই ইসলামের সুমহান বাণী তাদের কাছে তুলে ধরেছেন।
সুতরাং মুসলমানরাই বাঙলা ভাষাকে স্বমহিমতায় সমুন্নত করেছে। বস্তুত ভাষা স্বয়ং মহান আল্লাহর নিদর্শনরাজির অন্যতম। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে হলো আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা।’ (সূরা আর রূম; ২২)
অন্যত্র বলা হয়েছে -’তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশের ভঙ্গি।’ (সূরা আর রাহমান;৩-৪)।
মাতৃভাষা চার্চার প্রতি গুরুত্বারোপ করে ইরশাদ হয়েছে -’আমি রাসূলগণকে স্বজাতির ভাষা দিয়েই প্রেরণ করেছি,যেনো তাঁরা আপন জাতিকে সুষ্ঠুভাবে বোঝাতে পারেন।’ (সূরা ইবরাহিম;৪)
দ্বানী দাওয়াতের ক্ষেত্রে মাতৃভাষার সঙ্গে বিশুদ্ধভাষী হওয়াও জরুরি। হযরত মূসা আ.এর মুখে জড়তা ছিলো। হযরত হারুন আ.সালাম তাঁরচে’ অধিক বিশুদ্ধভাষী ছিলেন। তাই হযরত মূসা আ. আল্লাহর নিকট দরখাস্ত করেছিলেন -’আর আমার ভাই হারুন আমারচে’ অধিক বিশুদ্ধভাষী,সুতরাং তাঁকে আমার সহায়ক হিসেবে আমার সঙ্গে নবুওয়াত দান করুন। সে আমাকে সত্য প্রতিপন্ন করবে। আমি আশঙ্কা করি তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে সাব্যস্ত করবে।’ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর উপর নাযিল হয়েছে আমাদের হিদায়াতের জন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠগ্রন্থ আল কুরআনুল কারীম; আর তা হচ্ছে আরবী ভাষার সর্বাধিক বিশুদ্ধ রূপ। স্বয়ং নবীজি সা.ও ছিলেন সবচেয়ে বিশুদ্ধ আরবীভাষি। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আনা আফসাহুল আরব।’ (আমি আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক।) দৈনন্দিন জীবনে নবী সা.বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন।ভাষার ব্যবহারে তিনি অশুদ্ধতা ও আঞ্চলিকতা এড়িয়ে চলতেন। নবী কারীম সা.-এর কাছ থেকে হাজারো হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হাদিসগুলো আমাদের কাছে হুবহু পৌঁছেছে।হাদিসগ্রন্থাদি আমাদের সামনেই আছে। এগুলো তো আর কেউ সম্পাদনা করে সংকলন করেনি। অথচ বিশুদ্ধতার মানদন্ডে আরবী ভাষা ও এসব হাদিস সবার উপরে।বরং হাদিস গবেষকগণ কোনো হাদিস মাওযু বা জাল কিংবা বানোয়াট কিনা তা পরিচয়ের ক্ষেত্রে একটা নীতি নির্ধারণ করেছেন, কথাটিতে কোনো অশুদ্ধ শব্দ থাকলে সেটা মাওযু ও জাল বলে পরিগণিত হবে।সম্ভবত এসব দিক বিবেচনায় উলামারা বলেন,নিজ ভাষায়ও বিশুদ্ধ কথা বলা সুন্নাত। অতএব মাতৃভাষাকে রূপে-গুণে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে আমরা নিজেরা বিশুদ্ধভাবে ভাষা ব্যবহার করাসহ সর্বস্তরে বাঙলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে। জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় বিশ্বখ্যাত মূল্যবান গ্রন্থগুলো মাতৃভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশ করারও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন