রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গ্রেফতারের ৫ ঘণ্টার মধ্যে রন হক সিকদারের জামিন

এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৬ এএম

হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেফতার সিকদার গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদারের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শুক্রবার দুপুর সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. আশেক ইমাম এ রায় ঘোষণা করেন। গ্রেফতারের প্রায় ৫ ঘণ্টার মধ্যেই জামিন পেলেন রন হক সিকদার। রায়ে মো. আশেক ইমাম বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত তাকে জামিন দেয়া হলো। গতকাল সকাল ১০টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) গুলশান বিভাগের একটি দল রন হক সিকদারকে গ্রেফতার করে।

আদালত পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুর তিনটার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান জোনাল টিমের এসআই রিপন উদ্দিন আসামি রন হককে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এ কে এম ফুরকান আলী ও সোহেল আমিন তার জামিনের জন্য আবেদন করেন।

শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, সিকদার গ্রæপ দেশের একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। রন হক সিকদারের বাবা এই গ্রæপের চেয়ারম্যান, যিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বাবার জানাজায় অংশ নিতে তিনি দেশে এসেছেন। এ অবস্থায় মানিবক বিবেচনায় আমরা তার জামিনের প্রার্থনা করছি। বিচারক দুই পক্ষের শুনানি নিয়ে ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় রন হক সিকদারের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
ডিবির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম সাকলায়েন বলেন, এক্সিম ব্যাংকের করা একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এই মামলার অপর আসামি রন হক সিকদারের ভাই দিপু হক সিকদার দেশে ফেরেননি। এ কারণে তাকে গ্রেফতার করা যায়নি।

এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদারকে আসামি করে মামলা করেছিল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
গত ১৯মে গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, এক্সিম ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ পেতে আবেদন করে সিকদার গ্রæপ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ মে দুপুর ১২টায় এক্সিম ব্যাংকের গুলশানের প্রধান কার্যালয়ে আসেন রন হক সিকদার ও ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি চৌধুরী মোসতাক আহমেদ। তারা এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডিকে ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে রূপগঞ্জের আদি নওয়াব আসকারি জুট মিল পরিদর্শনে নিয়ে যান। পরিদর্শনে গিয়ে জামানত হিসেবে ওই সম্পত্তির বন্ধকি মূল্য নথিপত্রে দেখানো মূল্যের চেয়ে কম উল্লেখ করলে রন হক সিকদার তাদের আরেকটি প্রজেক্ট পূর্বাচলের আইকন টাওয়ার পরিদর্শনে যেতে বলেন। তাতে রাজি হয়ে টাওয়ার পরিদর্শনে গেলেও রন হক সিকদার ও চৌধুরী মোসতাক আহমেদকে না পেয়ে ও প্রকল্পের ভেতরের সড়ক অপরিচিত হওয়ায় এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডি ৩০০ ফিট সড়ক ধরে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেন। ওই সড়কেই রন হক সিকদার ও ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডিকে দেখতে পেয়ে থামেন তারা। সে সময় ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি, এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডিকে জানান, বলে দেয়া নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হওয়ায় রন হক অত্যন্ত মনোঃক্ষুণœ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

এজাহারে বলা হয়, এরপরই রন হক সিকদারের কাছে এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডিকে মাফ চাইতে বাধ্য করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরই রন হক সিকদার গাড়ির গøাস নামিয়ে এক্সিম ব্যাংকের এমডির উদ্দেশ্যে গুলি ছুঁড়লে তা তার বাম কানের পাশ দিয়ে চলে যায়। এরপর আবারও তিনি গুলি করতে উদ্যত হলে এক্সিম ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডির গাড়ির পেছনে আশ্রয় নেন। এরপর এক্সিম ব্যাংকের এমডির গাড়িতে ব্যাংকটির অতিরিক্ত এমডিকে তোলা হয়। সে সময় রন হক সিকদারের একজন নিরাপত্তাকর্মীও গাড়িতে ওঠেন এবং এমডি ও অতিরিক্ত এমডির মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বনানীর সিকদার হাউজে নিয়ে যান।

এজাহারে আরও বলা হয়, সেখানে দিপু হক সিকদার ব্যাংকটির অতিরিক্ত এমডিকে মারধরের চেষ্টা করেন। পরে দু’জনকে বিদেশি নিরাপত্তাকর্মীর পাহারায় বসিয়ে রাখা হয়। এরপর রন হক সিকদার ও দিপু হক সিকদার ব্যাংকটির এমডির কাছে একটি সাদা কাগজে জোর করে সই আদায় করে নেন। সই না করলে বিদেশি নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন চালানো হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। আবার আর এই সইয়ের সাক্ষী করা হয় অতিরিক্ত এমডিকে। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টায় সিকদার গ্রæপের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের কাছে নিয়ে তার সঙ্গে ছবি তোলা হয়। এরপর দুই গাড়িচালকসহ রাত সাড়ে ৭টায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। রন হক সিকদার বাসার নিচে এসে সবার মোবাইল ফোন ফেরত দেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (15)
Mukit Tutul ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৪ এএম says : 0
ওয়াও এই তো খেলা!! সকালে ধরে দুপুরে জামিন!!! আসেন মামা বসেন বসেন
Total Reply(0)
Yeakub Ali ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৪ এএম says : 0
আইনের শাসন অর্থের নিকট পরাস্ত। ধন্যবাদ জানাই সাহসী পুলিশ প্রশাসন কে।
Total Reply(0)
Nishad Kamol ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৫ এএম says : 0
"আইন মাকড়সার জালের মত। বড় কিছু পড়লে ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে, ছোটরা আটকে যায়।"
Total Reply(0)
Shimul Mahmud ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৫ এএম says : 0
এজন্যই তারা এতো বেপরোয়া
Total Reply(0)
Nasir Ahmed Manik ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৫ এএম says : 0
এমন কিছুর নিশ্চয়তা ছিল,তাইতো ভাই চলে আসছি..
Total Reply(0)
Didarul Islam ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৬ এএম says : 0
রন হক শিকদারের নিজস্ব বিমানে দেশ ছেড়ে পলায়ন টা যেমন নাটকীয় তেমনি উনার গ্রেফতারের পাঁচ ঘন্টার মধ্যে জামিন হওয়াটা সুপার নাটকীয়, এমনকি উনাকে অাদালতেও যেতে হয়নি। কিছুক্ষন পরে সবাই বলবে " অাইন তার নিজস্ব গতিতে চলে! " রন হক শিকদার এতদিন ছিলেন ফেরারি অাসামী - এখন হলেন রাস্ট্রের সিঅাইপি !
Total Reply(0)
Sarafat Ul Alam Chowdhury ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৬ এএম says : 0
সব কিছু ঠিক করে তবেই তো দেশে আসা।
Total Reply(0)
Kabir Hossain ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৭ এএম says : 0
তার গ্রেফতারই ছিলো আই ওয়াশ!!
Total Reply(0)
Hafizur Rahman ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৭ এএম says : 0
আইন যারা করেছে বা লিখেছেন তারা কেউ গরীব লোক ছিলেন বলে মনে হচ্ছে না, তাই আইন ধনীদের জন্য মুড়ির মোয়া।
Total Reply(0)
Ataur Rahman ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৭ এএম says : 1
এই পরিবারের বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনেক অবদান আছে তার উপর ভিত্তি করেই উনাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। আমরা কমেন্টস করছি এই ব্যাপারটা একটু খতিয়ে দেখবেন।
Total Reply(0)
MD Akkas ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৬:১৬ এএম says : 0
হাহাহা ব্যাপারটা বখাটেদের শাসনের মত হল। বেয়াদবি করেছে গ্রামের মুরুব্বী ডেকে এনে কান ধরে মাড় দুই থাপ্পর।যাহ এরকম বেয়াদবি আর করবি না।
Total Reply(0)
আঃ রহমান, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৭:৫০ এএম says : 0
কোন ব্যাক্তি, পরিবার,বা প্রতিষ্ঠান দেশের জন্য কোন ভালো কাজ করলেই, পরবর্তিতে তারা সকলে অপরাধ করা ও দেশের আইনের উর্দ্ধে ওঠার অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়ে যায় এ দেশে। তাই নয় কি?
Total Reply(0)
আঃ রহমান, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৭:৫০ এএম says : 0
কোন ব্যাক্তি, পরিবার,বা প্রতিষ্ঠান দেশের জন্য কোন ভালো কাজ করলেই, পরবর্তিতে তারা সকলে অপরাধ করা ও দেশের আইনের উর্দ্ধে ওঠার অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়ে যায় এ দেশে। তাই নয় কি?
Total Reply(0)
Mohammad+Maniruzzaman ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১০:০৮ এএম says : 0
Father can be freedom fighter. It is not relevant to son getting bail on a crime.
Total Reply(0)
Bhuiyan ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:১২ এএম says : 0
টাকার কাছে আইন শুধুই বোবা !
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন