‘ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। আজ পহেলা ফাল্গুন; সত্যিই আম গাছে মৌল ধরেছে। ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত’ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় এই পঙক্তি লিখলেও ফুল ফুটেছে, বসন্ত এসেছে। শীত বিদায় জানিয়ে প্রকৃতিতে লেগেছে ফাল্গুনের হাওয়া। নতুনরূপে সেজেছে ঋতুরাজ। দখিনা হাওয়া, মৌমাছিদের গুঞ্জরণ, কচি-কিশলয় আর কোকিলের কুহুতানে জেগে ওঠার দিন আজ- ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়’।
করোনার কারণে বাংলা একাডেমির বইমেলা এবার নেই। করোনায় স্বাস্থ্যবিধির কারণে অনুষ্ঠানাদির লাগাম টানা হলেও লাল আর বাসন্তী রঙে প্রকৃৃতির সঙ্গে নিজেদের সাজিয়ে আজ বসন্তের উচ্ছলতা ও উন্মাদনায় ভাসবে বাঙালি নারীরা। বসন্ত অনেক ফুলের বাহারে সজ্জিত হলেও গাঁদা ফুলের রংকেই এদিনে তাদের পোশাকে ধারণ করে তরুণ-তরুণীরা। খোঁপায় শোভা পাবে গাঁদা ফুলের মালা। বসন্তের আনন্দযজ্ঞ থেকে বাদ যাবে না গ্রামীণ জীবনও। বসন্তকে তারা আরও নিবিড়ভাবে বরণ করে। বসন্তের বন্দনা আছে কবিতা, গান, নৃত্য আর চিত্রকলায়।
কেউ কেউ ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ নামের বেলেল্লাপনা জোড়া দিলেও বাঙালির সংস্কৃতিতে এটা নেই। কিন্তু পহেলা ফাল্গুন সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনে বসন্ত ঠাঁই করে নিয়েছে তার আপন মহিমায়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে আধুনিককালের বাউল-কবির মনকেও বার বার দুলিয়েছে ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন। বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাংলাদেশের মানুষ পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসবে এ উৎসব এখন গোটা বাঙালির কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে।
প্রতিবছর পহেলা ফাল্গুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় আয়োজন করা হয়েছে বসন্ত উৎসব। চারুকলা থেকে শুরু হয়ে এ উৎসব ছড়িয়ে পড়বে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চ, লক্ষীবাজারের বাহাদুর শাহ্ পার্ক এবং উত্তরার ৩ নং সেক্টরের রবীন্দ্র সরণির উন্মুক্ত মঞ্চে। কিন্তু এবার করোনার কারণে আড়ম্বর কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের খবর পাওয়া যায়নি। তবে দিবসটি যে নানাভাবে পালিত হবে তা বলাইবাহুল্য।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন