সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কেরির সফর দু’দেশের সম্পর্কে আস্থা ফেরাবে

প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৭ পিএম, ৩১ আগস্ট, ২০১৬

বাংলাদেশের অগ্রগতিতে শরিক হয়ে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত : মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী


কূটনৈতিক সংবাদদাতা : সম্পর্ক আরও জোরদার করার প্রত্যয় নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সফর করলেন বাংলাদেশ। আর তার সফরের পর সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠেছেন। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনার সময়ে দু’দেশের মধ্যে তৈরী হওয়া কুয়াশা কেটে যেন আলোর মুখ দেখা দিয়েছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরাও বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন। এদিকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জন কেরির সফরের ফল সম্পর্কে জানাতে একটি বিবৃতি দিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি গত সোমবার বাংলাদেশে এক দিনের সংক্ষিপ্ত সফরকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইএমকে সেন্টারে নাগরিক সমাজ, তরুণ ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখানে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নির্মাণের ক্ষেত্রে আমরা সবাই কঠোর পরিশ্রম করছি। এখানে যে সংবর্ধনা পেয়েছি, তার জন্য অন্তরের অন্তস্তল থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও বিশদ আলোচনা হয়েছে। আমি বাংলাদেশের সংস্কৃতি নিয়ে বলতে চাই, এ সংস্কৃতি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত, বৈচিত্র্যপূর্ণ ও সুন্দরগুলোর একটি। এ দেশ সত্যিকার অর্থেই ‘সোনার বাংলা’। আমি আপনাদের জানাতে চাই, বাংলাদেশের অগ্রগতিতে শরিক হতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট গর্ববোধ করে। কেরি বলেছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ তাদের আবাস হারাতে পারে। আর এসবের কারণেই যুক্তরাষ্ট্র, প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং আমি আমাদের স্থানীয় সহযোগীদের নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি।
ঢাকায় দেয়া বক্তব্যে সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবিলা করতে গিয়ে বিরোধী দলগুলোর কণ্ঠরোধ এবং জনসমক্ষে বিতর্ক বন্ধ করার প্রলোভনের ফাঁদে পা না দিতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জন কেরি সফরকালে বাংলাদেশের কাছে শুভেচ্ছা বার্তা এবং বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমর্থন পৌঁছে দিয়েছেন। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জঙ্গিবাদ দমনে আরও নতুন সহযোগিতার বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন।
এদিকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রেখে সন্ত্রাস দমনের তাগিদ দিয়েছেন জন কেরি। তিনি সব রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে এ সংক্ষিপ্ত সফরেই সাক্ষাৎ করেছেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রভাবশালী নেতা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এসব কারণে কেরির এ সফরকে সরকারের পর্যায় থেকে মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। জন কেরির সফর কোনো বিশেষ এজেন্ডা পূরণের সফর ছিল না। দুই দেশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের সফর হিসেবে বিবেচিত ছিল। সেই দিক থেকে এই সফরকে ফলপ্রসূ বলছেন অনেকেই। তার ওপর কেরির সফর দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সম্পৃক্ততার সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে আগামী ২ অক্টোবর ঢাকায় নিরাপত্তা সংলাপের আগে এ সফর নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ধানম-িতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শনের দিকটি সরকারের উচ্চমহলে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। সেখানে কেরি বলেছেন, আমরা শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে ও একসঙ্গে কাজ করতে চাই। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার অভিযান তুঙ্গে রয়েছে। এই ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে তিনি ঢাকা সফর করে দুই দেশের সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন। ফলে নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের বিজয় হলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অভাবনীয় উন্নতি ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। রিপাবলিকান দলের বিজয় হলেও পররাষ্ট্রনীতিতে ধারাবাহিকতায় কেরির সফরের সুফল অনেক বেশি পাওয়া যাবে।
এ নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, জন কেরি ঢাকায় বলেছেন ভিয়েতনাম ও জাপানের মতো দেশের সঙ্গে যুদ্ধ করেও যুক্তরাষ্ট্র এখন ওইসব দেশের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক গড়ে তোলেছে। আমাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকালে মার্কিন প্রশাসনের কেউ কেউ বিরোধিতা করলেও অনেকেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছেন। এখন জন কেরি ধানম-ির ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যার প্রশংসা করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আমেনা মহসিন জন কেরির সফরকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আমি এই সফরকে খুবই ইতিবাচকভাবে দেখছি। ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল; জন কেরি সেটা শুধরানোর চেষ্টা করেছেন। তার সফরের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতাও এগিয়ে যাবে। এটাও ইতিবাচক। এছাড়াও, সবাইকে নিয়ে গণতন্ত্র এগিয়ে নেয়া এবং নাগরিক সমাজসহ সবার অংশগ্রহণে সন্ত্রাস দমনের কথাও তিনি বলেছেন। এসব কারণে কেরির এই সফর ইতিবাচক।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্বপালনকারী বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির মনে করেন ঢাকা-ওয়াশিংটন রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নতিতে জন কেরির সফরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তার সফরে ভালো আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের শরীরী ভাষা অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল। এতে বোঝা যায় সহযোগিতার জন্য প্রযোজ্য প্রায় সব বিষয়েই তাদের মধ্যে কথা হয়েছে। নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি বলেন, এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সহযোগিতা আছে এবং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আগামী দিনে এ সহযোগিতা আরো বিস্তৃত হবে বলে আশা করেন সিনিয়ন এ কূটনীতিক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Pabel ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ৯:৫৮ এএম says : 0
Allah e valo jane.
Total Reply(0)
হাসান ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১:০১ পিএম says : 0
তাহলে জিএসপি সুবিধা দিন।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন