ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণের সরকারি সিদ্ধান্তকে একপেশে ও গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর স্বার্থ সংরক্ষণে করা হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। একইসঙ্গে নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বিক্রি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে তারা। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, বেশ কয়েকমাস ধরে অস্থির ভোজ্যতেলের অস্থিরতা ঠেকাতে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন-সংক্রান্ত সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় কমিটি। অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণ সরকারের শীর্ষ মহলের আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু নির্ধারিত মূল্য কার্যকরে মাঠপর্যায়ে যথাযথ নজরদারিতে ঘাটতি হলে এ উদ্যোগের সফলতা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর সফল নেতৃত্বে দেশ করোনা মোকাবিলায় অনেকটা সফল। এ ছাড়াও, অনেকগুলো সূচকে অনেক অগ্রগতি লাভ করলেও গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে সরকারের পুরো অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আবার ব্যবসায়ীরা তাদের অপকর্ম ঢাকতে সরকারি দলে নাম লেখাতেও প্রতিযোগিতায় মেতেছে। ফলে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন সরকারদলীয় অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। যা দেশে ন্যায্য ব্যবসার প্রসারে বড় বাধা।
এতে বলা হয়, ইতোপূর্বে সরকার আলুর দাম বেঁধে দিয়েছিল, কিন্তু বেঁধে দেয়া দামে আলু পাওয়া যায়নি। দু-একটি জায়গায় স্থানীয় প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলে ব্যবসায়ীরা দোকান-পাট বন্ধ করে ধর্মঘট করলে আর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজারেও দাম বেঁধে দিয়ে, শুল্ক কমিয়ে, বিদেশ থেকে চাল আমদানি করেও কোনোভাবেই অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। চিহ্নিত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী মাসে পাম ও সয়াবিন তেল উৎপাদনের মৌসুম। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমতে পারে। আসন্ন পবিত্র রমজানে ভোজ্যতেল নিয়ে যেন কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি না করে, সেজন্য এখন থেকে আমদানি, বিতরণ ও ভোক্তা পর্যায়ে বিপণনে কঠোর তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়াও, পেঁয়াজের মতো কৃষকদের প্রণোদনা নিয়ে সরিষার উৎপাদন বাড়িয়ে সরিষার তেল উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহার বাড়াতে উদ্বুদ্ধকরণ করে বিকল্প বাজার তৈরি করতে হবে। এতে আরো বলা হয়, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা। জেলা, উপজেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, সিটি করপোরেশন, ভোক্তা প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত বাজার তদারকির মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও অস্থিরতা ঠেকানো সম্ভব। মজুদদারি ঠেকাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ, ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে নগদ অর্থদন্ডের পাশাপাশি প্রয়োজনে জেল-জরিমানা নিশ্চিত করতে হবে। আর এ ধরনের সমাজবিরোধী কাজে জড়িতদের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিসিবির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে নিত্যপণ্যের আপৎকালীন মজুদ বাড়াতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন