সোনার মদীনার নমুনায় সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পীর-মাশায়েখ-ওলামাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ হযরত মাওলানা আযীযুর রহমান কায়েদ সাহেব হুজুরের প্রতিষ্ঠিত ঝালকাঠির নেছারাবাদ দরবার শরীফে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক ঈছালে ছওয়াব ও ওয়াজ-মাহফিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বয়ানে তিনি এ আহ্বান জানান। এনএস কামিল মাদরাসা ময়দানে গতকাল বিকেল ৩টা থেকে এ মাহফিল শুরু হয়ে শেষ হবে আগামীকাল বুধবার বাদ ফজর।
নেছারাবাদী হুজুর বলেন, ‘ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে সুসভ্য হতে পথ-প্রদর্শন ও সমাজ-গর্হিত কর্ম থেকে ফিরিয়ে রাখার দায়িত্ব পালন প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরয। অধিকাংশ পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলামা দলীয়-রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে ওয়াজ-মাহফিল ও বিভিন্ন পন্থায় আওলিয়ায়ে কেরামের অনুসৃত পথে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের আদর্শে এ দায়িত্ব নিঃস্বার্থভাবে পালন করে থাকেন। এর বিনিময়ে তাঁরা ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক ফায়দা কামনা করেন না। অথচ ধর্মদ্রোহী ও ইসলাম-বিদ্বেষী মুযাবযাবীন-চক্র ও তাদের সাংস্কৃতিক-দোসররা ঈমান-আকীদা নস্যাত ও সার্বভৌমত্ব বিনাশের ষড়যন্ত্রে প্রায়ই পীর-মাশায়েখদের বিরুদ্ধে বিষোদগার, কট‚ক্তি ও নানাপ্রকার অশালীন মন্তব্য করার স্পর্ধা দেখায়। এটা ওলামায়ে কেরামের পারস্পরিক অনৈক্যের প্রতিফল। তাই প্রথমে পীর-মাশায়েখ-ওলামাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তা হলে কট‚ক্তিকারীরা আর সাহস পাবে না।
হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুরের একমাত্র ছাহেবজাদা আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী বলেন, ‘ন্যায় ও ধর্মের প্রতিষ্ঠায় মানুষকে তাঁর মানবীয় গুণাবলী অর্জনের দীক্ষা দিতেই পীর-মাশায়েখ-ওলামায়ে কেরামকে নবীদের উত্তরসূরী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেই ঘোষণা অনুযায়ী কুফরীর সমুদ্র মাঝে জেগে ওঠা তৌহীদের দ্বীপ বাংলাদেশকে সর্বপ্রকার অন্যায়-অবিচার, সুদ-ঘুষ, প্রতারণা-ভন্ডামি, ব্যাভিচার-বেপর্দেগীর অমানবিকতা থেকে মুক্ত করে সোনার মদীনার নমুনায় গড়ে তোলা ওলামায়ে কেরামের অন্যতম দায়িত্ব। সেই ঘোষণা অনুযায়ী ব্যক্তিগত, পারিবারিক, আর্থ-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলেই কেবল মুক্তি, উন্নতি ও প্রকৃত শান্তি লাভ হতে পারে।
নেছারাবাদী হুজুর বলেন, মনে রাখতে হবে, স্থায়ী বস্তু যেমন অস্থায়ী বস্তুর ওপর নির্ভরশীল নয় তেমনি চিরস্থায়ী ইসলামও অস্থায়ী ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল নয়; বরং ক্ষমতা-ইচ্ছুই ক্ষমতার স্বার্থে ইসলামের ওপর নির্ভরশীল। অতএব পীর-মাশায়েখ-ওলামায়ে কেরামকে অবশ্যই সময়ের দাবিতে ইসলামী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’
আমীরুল মুছলিহীন বলেন, ‘আন্তরিক ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও পীর-মাশায়েখ-ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ না হওয়ার পেছনে একমাত্র কারণ তাদের ইত্তেহাদে-কুল্লী তথা এখতেলাফ বিহীন ইত্তেহাদের কামনা। ব্যক্তির নিজস্বতার মতো দলীয় স্বাতন্ত্র্যও তার পরিচয় বহন করে; তদুপরি হক-নাহক ফের্কা ও বর্তমান সংঘাতক্ষুব্ধ বিশ্বে বিভেদ-মতবিরোধ অবশ্যম্ভাবী হওয়ায় এ ধরনের ইত্তেহাদ যে একেবারেই অবাস্তব ও অসম্ভব তা যদি ওলামায়ে কেরাম এখনও বুঝতে ব্যর্থ হন তাহলে তার খেসারত আজকের মতো আগামীতেও তাদেরকেই দিতে হবে। এজন্যই হাদীয়ে যামান, মুজাদ্দেদে মিল্লাত হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) দল-মত-ছেলছেলা নির্বিশেষে সকল হকপন্থী কলেমাগো মুসলমানের মধ্যে ইত্তেহাদের ফরযিয়াত রক্ষায় উদ্ভাবন করেছিলেন-‘ইত্তেহাদ মায়াল ইখতেলাফ’ তথা ‘মতানৈক্যসহ ঐক্য’ নীতির এক অবিস্মরণীয় পন্থা। সুতরাং বিভিন্ন দল ও ছেলছেলার স্বকীয়তা বজায় রেখেই ইত্তেহাদ মায়াল ইখতেলাফের ভিত্তিতে সোনার মদীনার নমুনায় সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পীর-মাশায়েখ-ওলামাদের সর্বাত্মক ঐক্য চাই। আল্লাহ আমাদের তৌফীক দান করুন। আমীন!’
দেশের ৬৪টি জেলা থেকে আগত লক্ষাধিক ভক্ত-আশেকের সমাবেশে অনুষ্ঠিত প্রথম দিনের মাহফিলে অন্যদের মধ্যে নসীহত পেশ করেন শায়খুল মুফাস্সের হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইদ্রিছ আলী, প্রখ্যাত মুফাস্সের ড. মাওলানা আবু বকর সিদ্দীক, খতীব ও মুফতী হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল কাদির আল-মাদানী, শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মদ মনিরুজ্জামানসহ দেশবরেণ্য মুহাক্কেক ওলামায়ে কেরাম। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। আগামীকাল বাদ ফজর হযরত নেছারাবাদী হুজুরের আখেরী মুনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে এ বছরের এ মাহ্ফিল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন