শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

জিকা শনাক্তে বিমানবন্দরে তদারকি জোরদার-স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশীদের জিকা ভাইরাসে সংক্রমণের খবরের পর মশাবাহিত এ রোগ শনাক্ত করতে বিমানবন্দরে তদারকি জোরদার করার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। ঢাকার একটি হোটেলে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভায় এ তথ্য জানান তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জিকা ভাইরাস শনাক্ত করতে বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং জোরদার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে স্ক্রিনিং ছাড়া কেউ দেশে ঢুকতে পারবেন না।
এজন্য সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান তিনি। এর আগে সিঙ্গাপুরে অন্তত ১০ বাংলাদেশীর মশাবাহিত রোগে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানায় হাই কমিশন।
সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাই কমিশনার মাহবুব উজ জামান বলেন, এ পর্যন্ত যাদের শরীরে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশী রয়েছেন বলে সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ পর্যন্ত তারা ১১৫ জনের শরীরে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আসা নির্মাণ শ্রমিক। আক্রান্ত সবাই সিঙ্গাপুরের একই অঞ্চলের বাসিন্দা বা একই এলাকায় কাজ করেন।
গত বছর ব্রাজিল ও আশপাশের দেশগুলোতে জিকার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জিকার কারণে বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।
এর পর জিকা ভাইরাস শনাক্ত করতে ও সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সব আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বারে চিকিৎসক দল নিয়োগ করা হয়। বিশেষ করে জিকা ভাইরাস স্ক্রিনিং মনিটর করতে শাহজালাল বিমানবন্দরে ওয়েব ক্যামেরা স্থাপন করার কথা জানায় সরকার। এছাড়া দেশে কেউ মশাবাহিত জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সরকার তার চিকিৎসার ভার নেবে বলেও তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেন। এর তিন মাসের মাথায় সিঙ্গাপুরে প্রথম জিকা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী করা শনাক্ত হয়। ৪৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ব্রাজিল ভ্রমণে গিয়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হন।
গত শনিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক মালয়েশীয় নারীর সিঙ্গাপুরে এসে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ করলে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল বলছে, সিঙ্গাপুরের জিকা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটায় শহরটিকে তারা গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় যুক্ত করেছে।
জিকার লক্ষণ
প্রতি পাঁচজন রোগীর একজনের মধ্যে হালকা জ্বর, চোখে লাল হওয়া বা কালশিটে দাগ পড়া, মাথা ব্যথা, হাড়ের গিঁটে ব্যথা ও চর্মরোগের লক্ষণ দেখা যায়। বিরল ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি গিলিয়ান-ব্যারি সিনড্রোমেও ভুগতে পারেন; এর ফলে সাময়িক পক্ষাঘাত কিংবা ‘নার্ভাস সিস্টেম ডিজঅর্ডারের’ মতো ঘটনা ঘটতে পারে। গর্ভবতী মা মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হলে তার অনাগত শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে, মস্তিষ্কের গঠন থাকতে পারে অপূর্ণ। এ রোগকে বলে মাইক্রোসেফালি। এ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম ও বেশি করে তরল খাবার খেতে পরামর্শ দেয়া হয়।
১৯৪৭ সালে উগান্ডায় প্রথম জিকা ভাইরাস ধরা পড়ে। এতে সচরাচর মৃত্যুর ঘটনা দেখা যায় না। তবে এর লক্ষণও সবসময় স্পষ্ট থাকে না। তবে কোনও গর্ভবতী নারী জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার গর্ভের শিশু ‘ছোট মাথা’ নিয়ে জন্মাতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় শিশুদের এই অবস্থাকে মাইক্রোসেফালি বলে।
মাতৃগর্ভে থাকার সময় মাইক্রোসেফালি আক্রান্ত শিশুর মস্তিষ্কের গঠন সম্পূর্ণরূপে হয় না। ফলে ওই সব শিশু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধী এমন কি জন্মের পরপর তার মৃত্যুও হতে পারে।
জিকা ভাইরাস ছোঁয়াচে নয়। তবে যৌন সংসর্গের মাধ্যমে জিকা সংক্রমণের কয়েকটি ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে ধরা পড়েছে। গত মার্চে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চট্টগ্রামের এক ব্যক্তির রক্তের পুরনো নমুনায় জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব পেয়েছে জাতীয় রোগ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইইডিসিআর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে জিকা নিয়ে এখনই শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ ঘটেনি। তবে এ ভাইরাস ঠেকাতে হলে মশা নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে। মশা নিয়ন্ত্রণের কাজটি করতে হবে প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে; কারণ এডিস মশা ঘরের মধ্যে ফুলদানি বা পাত্রে জমানো পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন