শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দন্ডিত পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল

গেজেট প্রকাশ করেছে সংসদ সচিবালয়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

কুয়েতের আদালতে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দন্ডিত হওয়ায় লক্ষীপুরের এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করেছে সংসদ সচিবালয়।

রায় ঘোষণার দিন থেকে তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করে গতকাল সোমবার গেজেট জারি করা হয়েছে বলে জানান সংসদের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান। গেজেটে বলা হয়, কুয়েতের ফৌজদারি আদালতে ঘোষিত রায়ে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হওয়ায় লক্ষীপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য নন।

অর্থ ও মানবপাচার এবং ঘুষ দেয়ার অভিযোগে গত বছর জুনে কুয়েতে গ্রেফতার হন পাপুল। ব্যবসার সূত্রে সেখানে তার বসবাসের অনুমতি ছিল। ওই মামলার বিচার শেষে গত ২৮ জানুয়ারি তাকে চার বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয় কুয়েতের একটি আদালত। সেদিন থেকেই তার সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের কোনো আইন প্রণেতার এভাবে বিদেশে দন্ডিত হওয়ার এবং সাজার কারণে পদ বাতিলেরও এটাই প্রথম ঘটনা।

মানবপাচার, অর্থপাচার, ঘুষ দেয়া এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় হুমকির অভিযোগ আনা হয়েছিল কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হলে সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবে না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না। ওই অনুচ্ছেদেই বলা আছে, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে আর এমপি হিসেবে থাকতে পারবে না।

পাপুলের সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করে গেজেট জারির পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, নিয়ম অনুযায়ী তা ইসিতে পাঠিয়েছে সংসদ সচিবালয়। আর নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, আসন গেজেটর কপি আমরা হাতে পেয়েছি। পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে।

নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সাংবিধানিকভাবে পাপুলের আসন শূন্য ঘোষণার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সেখানে নির্বাচনের ব্যবস্থা নেবে ইসি। সংসদ সচিবালয়ের চিঠি কমিশন সভায় উপস্থাপনের পর সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করব। নির্বাচন করতে ৪০-৪৫ দিন সময় হাতে লাগবে আমাদের। ২ মার্চ হালনাগাদের চ‚ড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপরই তফসিল ঘোষণা করা হবে।

সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে লক্ষীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে ওই আসনটি আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেষ মুহূর্তে ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে ‘বিএনপি ঠেকানোর’ কথা বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ পাপুলের পক্ষে কাজ করে বলে দলটির নেতাদের ভাষ্য। তখন থেকে সরকারদলীয় নেতারা তার পক্ষে কাজ করছেন। পাপুল নিজে এমপি হওয়ার পর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কোটায় পাওয়া সংরক্ষিত একটি আসনে তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামকে এমপি করে আনেন। প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে। পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে কুয়েতে বাংলাদেশি কমিউনিটির ধারণা।

পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে গত জুনে গ্রেফতারের পর পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনা হয়। পরে তদন্ত করে পাপুলসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, মানবপাচার, ঘুষ লেনদেন ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ভঙ্গের অভিযোগ আনে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পাপুলের মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু হয়। জানুয়ারিতে আদালত যে রায় ঘোষণা করে, এতে পাপুলের কাজে সহায়তাকারী হিসেবে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জারাহ এবং কুয়েতি দুই কর্মকর্তাকেও চার বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। ওই দুই কর্মকর্তা ছিলেন পাপুলের বিভিন্ন কাজের মধ্যস্থতাকারী এবং এজেন্ট। পাপুলসহ দন্ডিত প্রত্যেককে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে ওই রায়ে। বাংলাদেশে দুদকও পাপুল, তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম সেই মামলায় জামিনে আছেন। পাপুল গ্রেফতার হওয়ার এবং সাজা পাওয়ার পর তা বিধি অনুযায়ী না জানায় তখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সংসদ।

গত শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এক অনুষ্ঠানে জানান, কুয়েত থেকে রায় পাওয়ার পর তা স্পিকারের কাছে পাঠিয়েছে তার মন্ত্রণালয়। এরপরই পাপুলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কাজ শুরু করে সংসদ সচিবালয়।

১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচনের সময় সাবেক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ জনতা টাওয়ার দুর্নীতি মামলা, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পাওয়া উপহারসামগ্রী আত্মসাৎ-সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলাসহ তিনটি মামলায় নিম্ন আদালতে দন্ডিত ছিলেন। নিম্ন আদালতের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে এরশাদ নির্বাচন করেন এবং সংসদ সদস্য পদে বহালও থাকেন। নিম্ন আদালতে দন্ডিত হওয়ার পর একাধিক মামলায় তিনি জামিন পেয়েছিলেন। জনতা টাওয়ার মামলায় সর্বোচ্চ আদালত তার সাজা বহাল রাখায় এরশাদ ২০০১ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন