মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিজিবিকে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার সীমান্ত ব্যাংক

প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৯ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হতে পারে, তারা যেন বিপথে চলে না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকা- চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে কাজ করতে হবে। এদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, মাত্র কয়েকদিন পরে আমাদের ঈদুল আজহা। সীমান্ত ব্যাংকের উদ্বোধন এই বাহিনীর সকল সদস্যের জন্য আমার ঈদের শুভেচ্ছা উপহার।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিজিবি সদর দফতরে সীমান্ত ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের জন্য চালু হওয়া সীমান্ত ব্যাংক লিমিটেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে বাহিনীটির সদস্যদের যোগ্য সন্তানদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এসময় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ও আর্থিক বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান, বিজিবি’র মহাপরিচালক ও সীমান্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, সীমান্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোখলেসুর রহমান।
প্রথম গ্রাহক হিসেবে সীমান্ত ব্যাংকে একাউন্ট খুলে এর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বিজিবি’র প্রতিটি সদস্যের আনন্দের দিন। সামনে পবিত্র ঈদুল আজহা। তার আগে সীমান্ত ব্যাংক উদ্বোধন করলাম। এটা তাদের জন্য ঈদের শুভেচ্ছা।
তিনি জানান, এই ব্যাংকে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের কর্মসংস্থান ও জনকল্যাণ সম্ভব হবে। এই ব্যাংকে নিয়োগে বিজিবি সদস্যদের যোগ্য সন্তানদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যেন বেকার সমস্যার সমাধান হয়। আর এই ব্যাংক থেকে যেন সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া যায়, সে ব্যবস্থাও করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী সীমান্তরক্ষী বাহিনীটির অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অসাধারণ ভূমিকা রয়েছে। ঠিক যে মুহূর্তে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা চালিয়েছিলো পাকিস্তানি হানাদাররা, ঠিক সেই মুহূর্তে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণায় আমাদের সীমান্তরক্ষীরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অসংখ্য যোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক বেদনাদায়ক ঘটনায় আমাদের এ বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা শহীদ হয়েছেন। আজকের দিনে তাদের আমি স্মরণ করছি। ‘যে সময় যে দায়িত্বই দেওয়া হয়েছে, এ বাহিনী তার ওপর অর্পিত সব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে। আমরা অগ্নিসন্ত্রাস থেকে যে দেশের মানুষকে বাঁচাতে পেরেছি, সেক্ষেত্রেও আমাদের এ বাহিনী ভূমিকা রেখেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিজিবি ও ভারতের বিএসফের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় এখন সীমান্তে নিহত হওয়ার ঘটনাও কমে এসেছে। তিনি বিজিবিকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে সরকারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০ পাস করেছি। এতে এ বাহিনী আরও শক্তিশালী হয়েছে- গতিশীল হয়েছে। নারীরা কোনো ক্ষেত্রে এখন পিছিয়ে নেই। বিজিবিতেও নারী সদস্য অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রতিটি বাহিনীকেই যুগোপযোগী ও শক্তিশালী করতে তার সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, নৌ বাহিনী এবং বিমান বাহিনীর জন্য যৌথ একটি ব্যাংক চালু করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছিটমহলবাসীর সমস্যা আমরা যতো সহজভাবে করতে পেরেছি, অন্য কোনো দেশে তা পারেনি। কোনো কোনো দেশে এ নিয়ে যুদ্ধ বেঁধে যায়। আমরা ৬৮ বছর পর ছিটমহল সমস্যার সমাধান করতে পেরেছি।
জাতির পিতা বলেছিলেন, ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না- এ কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ভিক্ষুক জাতি হতে চাই না। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমাদের জন্য সুবিধাজনক ছিলো না, দেশের মানুষের জন্যও না। কিন্তু সে অবস্থা এখন কেটে গেছে।‘দেশের দারিদ্র্য ৫৭ ভাগ ছিলো, সেটা এখন ২২ ভাগে নামিয়ে আনতে পেরেছি। ইতোমধ্যে ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে আনতে পেরেছি। প্রবৃদ্ধি অর্জনে আমরা বিশ্বে ৫ নম্বরে রয়েছি। আজকে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যের অভাব নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শুধু খাদ্যের নিরাপত্তাই নিশ্চিত করিনি, হতদরিদ্র, পঙ্গু, প্রতিবন্ধী ও বয়োবৃদ্ধদের বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করছি। আমরা শিগগির পল্লী রেশনিং চালু করতে যাচ্ছি। সেখানে হতদরিদ্র ও পঙ্গুদের রেশনিং ব্যবস্থা করবো। এই রেশন কার্ড যাদের কাছে থাকবে, তারা মাত্র ১০ টাকায় চাল কিনতে পারবেন।
তিনি সরকারের ডিজিটাল কার্যক্রমের পদক্ষেপও তুলে ধরেন। বলেন, প্রযুক্তি আমাদের আরও দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারে। আমাদের সম্পদের হয়তো সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু তা যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা মতো ব্যবহার করা যায়, তবে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারবো।
শিক্ষা খাতের উন্নয়ন এবং চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা ঐতিহ্যবাহী বাহিনী বিজিবি’র পরিচালনায় এই ব্যাংকের উদ্বোধন করতে পেরে নিজের আনন্দের কথা প্রকাশ করেন এবং বিজিবি আরও নতুন নতুন ‘উপার্জনশীল প্রকল্প’ গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
৪০০ কোটি টাকা অনুমোদিত এবং ১০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে গঠিত সীমান্ত ব্যাংক লিমিটেডকে তফসিলী ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে গত ১০ আগস্ট গেজেট প্রকাশ করে সরকার। এর মধ্য দিয়ে অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ তৈরি হয় এ ব্যাংকের জন্য।
সীমান্ত ব্যাংকের মালিকানা থাকবে বিজিবি কল্যাণ ট্রাস্টের হাতে। ঢাকার জিগাতলায় সীমান্ত স্কয়ারের কাছে নির্মিত নতুন ভবনে এর প্রধান কার্যালয়। এ বছরই খুলনা, সিলেট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহসহ ছয়টি স্থানে সীমান্ত ব্যাংকের শাখা খোলা হবে। আর আগামী বছরের মধ্যে আরও ২০টি শাখা খোলার লক্ষ্য ঠিক করেছে কর্তৃপক্ষ। এই ব্যাংক বিজিবি সদস্য এবং তাদের পরিবারের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে বলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
২০১৪ সালে পিলখানার দরবারে বিজিবির পক্ষ থেকে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আবেদন জানানো হলে তাতে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী। গত বছর বিজিবি দিবসের অনুষ্ঠানে নতুন ব্যাংকের ‘লোগো’ উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এ ব্যাংকের আয় বিজিবির মুক্তিযোদ্ধা সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং তাদের পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। এ ব্যাংক সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, পেনশন স্কিম, গৃহনির্মাণ ঋণ, দুরারোগ্য রোগের জন্য দেশে-বিদেশে চিকিৎসা সহায়তা, কৃষি ঋণ, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মত বহুবিধ খাতে ঋণ সহায়তা দেবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Arman ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১০:৩০ এএম says : 0
Nice gift
Total Reply(0)
শাহে আলম ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ৩:৩৬ পিএম says : 0
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)
শেখ মোহাম্মদ হোসাইন ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ৩:৩৭ পিএম says : 0
এই ব্যাংকে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের কর্মসংস্থান ও জনকল্যাণ সম্ভব হবে।
Total Reply(0)
আনোয়ার হোসেন ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ৩:৩৯ পিএম says : 0
সকল উন্নয়ন কার্যক্রমকে দুর্নীতি মুক্ত রাখতে হবে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন