শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দোকানের সাথে পুড়েছে বহু মানুষের স্বপ্নও

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আগুন

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

রাজধানীর কারওয়ান বাজার হাসিনা মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ছোট বড় প্রায় ৩০টি দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। আগুনে শুধু দোকানই পোড়েনি, পুড়েছে পুঁজি, পুড়েছে বহু মানুষের স্বপ্নও। গত শনিবার রাত ৯টা ৮ মিনিটে কারওয়ান বাজারের কাঁচা-পাকা টিনশেড আর কাঠের পাটাতন ব্যবহৃত হাসিনা মার্কেটে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১০টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে অগ্নিকান্ডের কারন এখনও বলতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

গতকাল রোববার সকালে আগুনে পোড়া হাসিনা মার্কেটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটটিতে মোবাইলের দোকানের আসবাবপত্র, বিকাশ লেনদেনের দোকান, হোটেল, সবজির দোকান, সবজির আড়তঘর পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা তাদের পুড়ে যাওয়া দোকান ঘর থেকে বেঁচে যাওয়া মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন, পরিষ্কার করছেন। ব্যস্ত মার্কেটের আশপাশের এলাকা দেখে বোঝার উপায় নেই গত শনিবার রাতে আগুন লেগে ছাই হয়েছে হাসিনা মার্কেটের ২৫ থেকে ৩০টি দোকান। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দোকান পরিষ্কারে ব্যস্ত। আর যাদের দোকান আগুনের ছোবল থেকে রক্ষা পেয়েছে, তাদের কেউ কেউ সকাল সকাল সব গুছিয়ে নিয়ে দোকান খুলে বেচাকেনা শুরু করেছেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের ডিডি দেবাশিষ বর্ধন বলেন, প্রথমে যখন আমরা খবর পাই, তখন দুটি ইউনিট পাঠানো হয়। আগুনের ভয়াবহতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউনিট বাড়ানো হয়। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। একে একে আটটি ইউনিট কাজে লাগানো হয়।
আগুন নেভাতে এক ঘণ্টা কেন লাগল জানতে চাইলে তিনি বলেন, মার্কেটটি কাঠের পাটাতনে দোতলা করা হয়েছে। নিচে দোকান ও উপরে থাকা ঘর তৈরি করা হয়েছে। প্রচুর দাহ্যপদার্থ ছিল। লেপ তোশকের দোকানও ছিল। ভেতরে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে। যে কারণে খুব দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আমরা প্রথমেই অগ্নিকান্ডস্থলে পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ পাইনি। মার্কেট থেকে পানির সরবরাহ সম্ভব ছিল না। আবার সামনে পেছনে কোথাও পানির সরবরাহ করার মতো ব্যবস্থাও মেলেনি। আগুন নেভাতে গিয়ে পরে যুক্ত হওয়া ছয়টি ইউনিটের সঙ্গে একটি করে পানির গাড়িও নিতে হয়। যে কারণে আগুন নেভাতে দেরি হয়।

পাশেই একটি খোলা জায়গায় বিকাশের লেনদেন ব্যবসা করতেন আব্দুর রহমান। তিনি রাতের আগুনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বলেন, রাত ৯টার কিছু পরই যখন আগুন লাগলে প্রথমে আমি ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিই। তারা খুব দ্রুত মার্কেটে আসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। আগুনে আমার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দোকানের চেয়ার, টেবিল, ফ্যানসহ সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। তবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে আমি আমার ব্যবসার নগদ পুঁজি ৯ লাখ টাকা নিয়ে বের হতে পেরেছিলাম।
ক্ষতিগ্রস্ত আড়তদার মো. বাচ্চু খান দাবি করেন, তার প্রায় ৩৫ লাখ টাকা আগুনে পুড়ে গেছে। শুধু বাচ্চু নন, এমন বেশ কয়েকজন আড়তদারের নগদ পুঁজি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আগুন যখন লাগে তখন আমি উত্তরা বিমানবন্দর এলাকায় ছিলাম। আগুন লাগার খবর পেয়ে ছুটে যাই কারওয়ান বাজারে। হাসিনা মার্কেটের কাঠের পাটাতনের উপর দোতলায় আমার গদিঘর, সেখানে আমার ব্যবসার সব টাকা ছিল। শুক্র-শনিবার পড়ায় ওই টাকা আমি ব্যাংকে রাখতে পারিনি। রোববার সেই টাকা ব্যাংকে জমা করার কথা ছিল। কিন্তু রাতের ওই আগুনে আমার ৩৫ লাখ টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, ব্যবসাটা কেবল বাড়িয়েছি। নাটোরেও সবজির বড় আড়তঘর খুলেছি। এক রাতের আগুনে আমার তো ভাই সব শেষ। সারা জীবনের পুঁজি আগুনে পুড়ে গেছে। জানি না কি হবে। এর আগেও আগুন লেগেছিল মার্কেটে। তখন আমি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই। আমার গদিঘরে সেবার আগুন লাগেনি। ব্যাংকে যোগাযোগ করেছি আমি, টাকা রাখি পূবালী ব্যাংকে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগাযোগ করতে বলেছেন, জানি না কি হবে।

হাসিনা মার্কেটে নয়টি দোকান রয়েছে আব্দুল মান্নানের। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সবজি কিনে দোকানগুলো পরিচালনা করেন আড়তদার মান্নান। শনিবার রাতের আগুনে তার সবগুলো দোকানই পুড়ে গেছে। তিনি দাবি করেন, সব মিলিয়ে কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে তার। বারবার আগুনে পুড়েছি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সব গুছিয়ে যখন আবার ব্যবসা করছি, তখন আবার আগুন লেগে নিঃস্ব হচ্ছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন