বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্র ভারত জাপান জোটের কাছে কোণঠাসা হওয়ার অনুভূতি চীনের

প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : এমনটা কি হতে পারে যে অন্যান্য দেশের সাথে তার প্রতিবেশীদের জোটবদ্ধ হওয়ার সাস্প্রতিক উদ্যোগের প্রেক্ষিতে চীন নিজেকে আসলেই কোণঠাসা মনে করছে?
১ সেপ্টেম্বর চীনের সরকার পরিচালিত একটি সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়তে জোর ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে বেইজিং কার্যত নিজেকে হুমকিগ্রস্ত বলে মনে করছে। সম্পাদকীয়তে এও বলা হয় যে এর অর্থ হচ্ছে চীন এখন প্রকৃত প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
গ্লোবাল টাইমস পত্রিকার এ সম্পাকীয়তে বিভিন্ন ফ্রন্টে চীনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ব্যাপারে বলা হয় সেগুলো কৌশলগত অংশীদারত্বের চেয়ে কল্যাণকর এবং তারপর বলেছে যে অন্যদেশগুলোর একই ধরনের উদ্যোগ আসলে হচ্ছে চীনকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা। এ প্রেক্ষিতে সম্পাদকীয়তে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন রাশিয়া সফরের কথা উল্লেখ করা হয় যা তাদের মধ্যকার দীর্ঘকালের আঞ্চলিক বিরোধে কোনো অগ্রগতি ছাড়াই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দু’দেশের নেতারা ৮টি অর্থনৈতিক সহযোগিতা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবেন।
সম্পাদকীয়র ব্যাখ্যায় বলা হয়, জাপানের পদক্ষেপকে সহজেই রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করার মাধ্যমে চীনের উপর ভূরাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হিসেবে দেখা যেতে পারে।
গ্লোবাল টাইমসের বিশ্লেষণে বলা হয়, এরপর রয়েছে আগামী সপ্তাহের গোড়ায় চীনের হ্যাংঝুতে জি২০ বৈঠকের পর লাওসে বারাক ওবামার আসন্ন সফর। তিনি হবেন লাওস সফরকারী প্রথম কোনো ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং তাকে তার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেয়ার আগে এশিয়া-প্রশান্ত কৌশল জোরদারে তার শেষ উদ্যোগ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
তারপর আছে বিষফোঁড়া ভারত।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ হচ্ছে
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, অতি সম্প্রতি ভাতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর যুক্তরাষ্ট্রে একটি লজিস্টিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন এবং কিছু মার্কিন মিডিয়া পরিষ্কারভাবে বলেছে যে এটা এ ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে ভারত মার্কিন জোট ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, মনে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও তাদের বর্ধিত মিত্র ভারতের ভূরাজনৈতিক মহড়ার কেন্দ্রবিন্দুতে চীনকে স্থাপন করা হয়েছে। এতে চীনকে হালকাভাবে না নেয়ার জন্য হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়। এতে বলা হয়, বাইরের বিশ্ব চীনের কূটনীতিকে ব্যাখ্যা করে ভূরাজনীতি সম্পর্কে ভুলভাবে হিসাব করেছে।
গ্লোবাল টাইমস দু’দিন আগে এক নিবন্ধে বলে, এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের চুক্তি স্বাক্ষর চীনকে ক্ষুব্ধ করেছে। সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ভারত যদি তড়িঘড়ি করে মার্কিন জোট ব্যবস্থায় যোগ দেয় তা চীন, পাকিস্তান বা এমনকি রাশিয়াকেও ক্ষুব্ধ করতে পারে। এ পদক্ষেপ ভারতকে নিরাপদ নাও করতে পারে, বরং তার জন্য কৌশলগত সমস্যা ডেকে আনবে এবং তাকে এশিয়ায় ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রে পরিণত করবে।
রাষ্ট্র পরিচালিত চীনা মিডিয়া এ ইঙ্গিতও দিয়েছে যে পাকিস্তানের সাথে ভারতের কৌশলগত আচরণের পরিবর্তনে চীন অত্যন্ত নাখোশ। এ ক্ষেত্রে বেলুচিস্তানে ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে পাকিস্তানের নিষ্ঠুরতা বিষয়ে ভারতের অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়।
এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে একটি প্রভাবশালী চীনা থিংক ট্যাংক হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলে, গোলযোগ কবলিত বেলুচিস্তানে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর প্রকল্প ব্যাহত করতে কোনো ভারতীয় চক্রান্ত হলে বেইজিংকে তাতে সম্পৃক্ত হতে হবে।
চায়না ইনস্টিটিউট অব কনটেমপোরারি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস-এ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশীয় ও ওশানিয়ান স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের চীনা থিংক ট্যাংক চীনের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং দেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের সাথে সংযুক্ত। সেখানকার একজন গবেষক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের ক্রমবর্ধমান সামরিক সম্পর্ক, পাশাপাশি বিরোধীয় দক্ষিণ চীন সাগর বিষয়ে ভারতের পরিবর্তিত মনোভাবে চীনের জন্য বিপদ সংকেত ধ্বনিত হচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ৩১ আগস্টের বিবৃতিতে চীনের মোটেই শিহরিত হওয়ার কিছু নেই। কেরির বক্তব্যে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মানতে বাধ্য নয় এমন রায় মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে বেইজিং নয়াদিল্লীর কাছে শিক্ষা নিতে পারে।
চীনের নিজ ভূরাজনৈতিক আক্রমণের ব্যাপারে নিবন্ধটি ছিল ক্ষমাশীল।
সম্পাদকীয়তে প্রশ্ন করা হয়, চীনা নেতারা কিউবা বা মেক্সিকো ভ্রমণের সময় চীন কি যুক্তরাষ্ট্রকে ঘিরে ফেলে? চীন যখন ল্যাটিন আমেরিকার কোনেদেশের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করে তার অর্থ কি চীন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চাৎভূমিতে তার পদছাপ সম্প্রসারিত করছে? এশিয়াতে চীন শ্রীলংকায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। চীন কি ভারতের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে? এ সকল প্রশ্নের ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে ‘না’ না বলে এতে বলা হয় চীন কৌশলগতভাবে এসবের কিছুই করছে না।
সম্পাদকীয়তে অন্যদেশগুলোর ব্যাপারে বলা হয়, সবাই মিলে চীনকে দমনের জন্য কাজ করছে। গ্লোবাল টাইমস এ বলে ইতি টেনেছে যে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের চীনের সাথে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা শুরুর ইচ্ছা রয়েছে, কিন্তু চীন নতি স্বীকার করবে না। সূত্র দি টাইমস অব ইন্ডিয়া।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন