মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

স্থবির চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, হঠাৎ চাঙ্গা ১৪ দল

প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকা- স্থবির হলেও হঠাৎ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ১৪ দলীয় জোট। জোটের সমন্বয়ক, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে চলমান জঙ্গি বিরোধী গণ পদযাত্রা কর্মসূচি চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় ইস্যুতেও সরকারি দলের শরিকেরা এক সুরে ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফরম থেকে কথা বলছে।
এদিকে শরিক দলের নেতাদের নিয়ে মহানগর সভাপতি মাঠে সরব থাকলেও নিজ দলের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ অনেক নেতার সাথে তার স্নায়ুযুদ্ধ লেগেই আছে। এতে করে নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে দূরত্ব দিনে দিনে বাড়ছে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।
চট্টগ্রামের উন্নয়ন, চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এখানকার সরকারী দলের নেতা, মন্ত্রী, মেয়র ও এমপিদের বিপরীতমুখী অবস্থান দলে নানামুখী মেরুকরণ হচ্ছে। এ মেরুকরণে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও বহুধা বিভক্ত হয়ে পড়ছে। এতে করে সাংগঠনিক বন্ধন দিনে দিনে শিথিল হচ্ছে।
সারা দেশের মতো চট্টগ্রামের রাজপথেও বিরোধী দলের কোন কর্মসূচি নেই। সেদিক থেকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবেলার ঝামেলা নেই। তবে মাঝে মধ্যে চট্টগ্রামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বলিষ্ঠ ভূমিকা কিছু সময়ের জন্য হলেও রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি তার সরকার ও চট্টগ্রামের দলীয় মেয়রের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হচ্ছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব বিরোধ দীর্ঘদিনের। নেতাদের বিরোধে বিভক্ত কর্মী সমর্থকরাও। বিভিন্ন ইস্যুতে এসব দ্বন্দ্ব চরমে উঠে। বিশেষ করে নেতাদের অনুসারী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে কলহ বিবাদ ক্ষণে ক্ষণে সহিংসতায় রূপ নেয়। সংঘাত সহিংসতা ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে পাড়া মহল্লা পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে।
নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়রের সাথে নগর সভাপতির দূরত্ব বেশ পুরানো। বিভিন্ন ইস্যুতে এই দূরত্ব বাড়ছে। মাঝে মধ্যে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছেন। আবার একে অপরের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ করছেন। কখনো আবার একই মঞ্চে উঠছেন দুই জন। নেতাকর্মীরা মনে করেন এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে নগর আওয়ামী লীগের সার্বিক সাংগঠনিক কর্মকা-ে।
মহানগর আওয়ামী লীগের অন্য নেতা বিশেষ করে মন্ত্রী এমপিদের সাথেও মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্নায়ুযুদ্ধ, কিংবা দূরত্ব ও মন কষাকষি রয়েছে। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথেও কিছু নেতার সম্পর্কে চলছে নানা টানাপোড়েন।
চট্টগ্রামের চলমান উন্নয়ন প্রশ্নেও নেতাদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। ফ্লাইওভারের পক্ষে বিপক্ষে মতামত দিতে গিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী এবং দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সাথে সাবেক মন্ত্রী ও নগর কমিটির সহ-সভাপতি ডা. আফছারুল আমীন বাকবিত-া থেকে অনেকটা হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। নগরীর পানিবদ্ধতা সমস্যা নিরসন নিয়েও নেতাদের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। মেয়র যা বলছেন, অন্যরা বলছেন তার উল্টোটা।
মেয়রের একবছর পূর্তিতে পৌরকর বাড়ানোসহ নানা বিষয়ে বাকযুদ্ধে জড়ান এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মেয়র নাছির উদ্দীন। নগরবাসীর উপর অতিরিক্তি কর আরোপ করা হলে রাস্তায় নামার হুশিয়ারী দেন তিন তিন বারের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী। কর বাড়ানো হয়নি, দাবি করে মেয়রও পাল্টা জবাব দেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর বক্তব্যের।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকটি এলাকায় ছাত্রলীগের মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রুপ ও আ জ ম নাছির গ্রুপ দফায় দফায় সংঘাত সহিংসতায় জড়ায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়েও রাস্তায় নামে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।
নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব কলহের অবসানে দলে হাইকমান্ড বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ নিলেও তা সফল হয়নি। বরং বিভিন্ন ইস্যুতে কলহ আরও প্রকট হয়েছে। চট্টগ্রামের প্রবীণ নেতাদের অনেকে এই বিরোধ নিয়ে প্রকাশ্যে সংশ্লিষ্ট নেতাদের ভর্ৎসনা করেছেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী প্রকাশ্যে নেতাদের এধরনের বিরোধে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তিনি দলের মধ্যে দেওয়াল না তুলে সেতু নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছেন অনেকবার। তবে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি।
বিভিন্ন ইস্যুতে দলের অভ্যন্তরে যখন অস্থিরতা তখন জঙ্গি বিরোধী কর্মসূচিতে সরকারী জোটের শরিকদের সাথে নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন মহিউদ্দিন চৌধুরী। আর তাতে দলের চেয়ে ১৪ দলের সাংগঠনিক কাজে গতি সঞ্চার হতে শুরু করে। গত পহেলা আগস্ট থেকে জঙ্গিবাদ বিরোধী গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করছে ১৪ দল। এতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ছাড়াও শরিক দলের নেতাকর্মী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও শরিক হচ্ছে।
বিভিন্ন কর্মসচিতে মহিউদ্দিন চৌধুরী সাথে শরিক হয়েছেন দলের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এবং ১৪ দলের শীর্ষ নেতারাও। জঙ্গিবাদের পাশাপাশি হরতালসহ সরকার বিরোধী বিভিন্ন কর্মকা-ের প্রতিবাদও এক মঞ্চ থেকে করছে ১৪ দলীয় জোট।
বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিরোধী আন্দোলনে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী নেতৃত্বে চট্টগ্রাম থেকে ১৪ দলের জোটগত আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে জাতীয়ভাবে ১৪ দলীয় জোটে রূপ নেয়। তবে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্র্বাচনে মহাজোটের ব্যানারে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে ১৪ দলীয় জোটের বন্ধন কিছুটা শিথিল হয়ে পড়ে। এবার জঙ্গি বিরোধী ইস্যুতে মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামে ফের ১৪ দলকে সুসংহত করেছেন বলে মনে করেন তার অনুসারীরা। তারা মনে করেন ১৪ দলের ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে একদিকে সরকারের শরিক দলের ঐক্য সুদৃঢ় হচ্ছে, অন্যদিকে দলের কলহ বিরোধের বিষয়টি কিছুটা হলেও চাপা পড়েছে।
উল্লেখ্য, হজ পালনের উদ্দেশ্যে বর্তমানে সউদী আরব অবস্থান করছেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন