রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

চৌদ্দগ্রামে যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা

প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আ’লীগ নেতা ও তার পুত্রসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সংবাদদাতা : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পূর্ববিরোধের জের ধরে আবু বকর ছিদ্দিক প্রকাশ রানা নামে এক যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকেরা। নিহত রানা উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের গুর্নিশকরা গ্রামের শহিদ উল্যাহর পুত্র। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয় পাতড্ডা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় বছির নামে তার এক বন্ধুও আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার রানার মা রেহানা বেগম বাদী হয়ে আ’লীগ নেতা আবদুল হাই কানু, তার ছেলে গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বিপ্লবসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় রেহানা বেগম উল্লেখ করেন, রানা একজন প্রবাসী ছিল। কিছুদিন পূর্বে সে দেশে আসে এবং নিজেকে সমাজসেবামূলক কর্মকা-ে জড়িত করে। আসামীদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কা-ে বাধা দিলে শত্রুতার সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে আসামীরা রানাকে প্রকাশ্যে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। যা ইউপি চেয়ারম্যানকে মৌখিকভাবে জানানো হয়। গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় রানা পাতড্ডা বাজারে গেলে তার বন্ধু সনপুর গ্রামের আবদুল হাকিমের ছেলে বছির (২৬), লুদিয়ারার রুহুল আমিন চৌধুরীর ছেলে প্রান্ত, বাবুল মিয়ার ছেলে রিয়াজ, আলাউদ্দিনের ছেলে ফাহাদ, মৃত আফজাল হোসেনের ছেলে আহাম্মদ, মৃত সোহরাবের ছেলে রহিমের সাথে দেখা হয়। তারা বাজারের সৌদিয়া হোটেলে নাস্তা শেষে রাত ৮টার দিকে বাজারের পশ্চিম পাশে লুদিয়ারা ব্রিজের উপর বসে আড্ডা দিচ্ছিল। হঠাৎ করে আবদুল হাই কানুর হুকুমে তার ছেলে গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বিপ্লবের নেতৃত্বে একদল যুবক পিস্তল, কাটা রাইফেল, পাইপগ্যান, কিরিচ ও লোহার রড দিয়ে তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় হামলাকারী বিপ্লব বলে, ‘সব শালার বাচ্চাদের শেষ করিয়া দে। মামলা মোকদ্দমা আমি দেখব।’ হামলায় রানার বুকে ও দুই পায়ে মোট আটটি গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে অস্ত্রধারীরা মুখে, মাথা ও পায়ে কোপাইয়া মারাত্মক আহত করে। এছাড়া তারা বছিরকে একইভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে অস্ত্রধারীরা পালিয়ে যায়। আহত অবস্থায় রানা ও বছির উদ্ধার শেষে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার রানাকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বছিরকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ নিহতের লাশটি উদ্ধার শেষে ময়নাতদন্তের জন্য গতকাল শনিবার সকালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় নিহত রানার মা বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা(নং-০২, তারিখ-০৩.০৯.১৬) দায়ের করেছেন। মামলার আসামীরা হচ্ছেÑলুদিয়ারা গ্রামের আ’লীগ নেতা আবদুল হাই কানু, তার পুত্র বাতিসা ইউপি নির্বাচনের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বিপ্লব, একই গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে আবদুল হান্নান, আবদুর রহমানের ছেলে মাসুম, নুর মোহাম্মদ ভূঁইয়া মানিকের ছেলে সজিব, মকবুল আহমেদের ছেলে মহিন, আশ্ববের ছেলে মোজাম্মেল, আবদুল মমিনের ছেলে মামুন, তাজুল ইসলামের ছেলে জয়নাল, কাজল মিয়ার ছেলে সুজন, মৃত আবদুর রশিদের ছেলে শুক্কুল, মমতাজ মিয়ার ছেলে নুরু, সেরাজুল হক ভূঁইয়া কিরণ, শফিকুর রহমানের ছেলে রানা, আলেক হোসেনের ছেলে ফারুক, দুর্গাপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আবদুল মন্নান, মৃত রুহুল আমিনের ছেলে এমরানসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জন। তবে ঘটনার পর থেকে আসামীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না শর্তে স্থানীয়রা জানান, বাতিসা ইউপি নির্বাচনে আ’লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম টিপু ও নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বিপ্লবের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরেই রানাকে নির্মমভাবে হত্যা করে বিপ্লব ও তার সমর্থকরা।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম থানার সেকেন্ড অফিসার মোসলেহ উদ্দিন জানান, ‘নিহতের লাশটি উদ্ধার শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বতর্মানে ওই এলাকায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন