হজ টিকিট ভাগ্যে জুটেনি : হজযাত্রায় অনিশ্চয়তা
শামসুল ইসলাম : প্রতারক হজ এজেন্সি’র মালিকদের খপ্পরে পড়ে ১২৫ জনের হজযাত্রায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এসব অসহায় হজযাত্রীদের হজ প্যাকেজের টাকা নিয়ে প্রতারক চক্র গা-ঢাকা দিয়েছে। প্রতারক হজ এজেন্সির মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আশকোণাস্থ হজ অফিসের নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। হজ টিকিটের ১ লাখ ২৬ হাজার ৬শ’ ৮৯ টাকা ৬৮ পয়সা দীর্ঘ ৫ মাস আগে বাণিজ্যিক ব্যাংকে জমা দেয়ার পরেও গতকাল পর্যন্ত এসব হজযাত্রীদের ভাগ্যে হজ টিকিট জুটেনি। প্রতারণার শিকার এসব হজযাত্রীরা এহরামের কাপড় নিয়ে আশকোনাস্থ হাজী ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছেন। হতাশাগ্রস্ত এসব হজযাত্রী বিমানের টিকিট হাতে না পেয়ে হাজী ক্যাম্পে কান্নাকাটি করে দিন কাটাচ্ছেন। এ যাবত ১ লাখ ১ হাজার ৪ জনের হজ ভিসা ইস্যু করেছে ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। নানা কারণে এখনো ৭শ’ ৫৪ জনের ভিসা হয়নি। জানা গেছে, এসব কোটায় হজযাত্রীদের হজ ভিসা ইস্যুর জন্য ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান আজ সউদী রাষ্ট্রদূতের কাছে লিখিত অনুরোধ জানাবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে হজ এজেন্সি শুভ ইন্টারন্যাশনাল (১৩৭১)-এর স্বত্বাধিকারী মমিন খান গত ১৪ জুলাই মতিঝিলস্থ একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়ার ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা বিধি বর্হিভূতভাবে কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (প্রা.) লিমিটেডের নিজস্ব ব্যাংক একাউন্টে সরিয়ে নিয়ে যায়। এতে সহযোগী হজ এজেন্সি ট্রাভেল নূরানী (১২৭৬) ও মেরাজ এয়ার ইন্টারন্যাশনাল লি. (২৫৩)-এর ১০৩ জন এবং হজ এজেন্সি মাদার ট্রাভেলস (৯৬০)-এর ৪২ জন হজযাত্রী বিপাকে পড়েছে। ট্রাভেল নূরানী ও মেরাজ এয়ার ইন্টারন্যাশনালের ৫৯ জন হজযাত্রী ও মাদার ট্রাভেলসের ৪২ জন হজযাত্রী গতকাল রাত পর্যন্ত হজ ফ্লাইটের টিকিট হাতে পায়নি। এসব হজযাত্রীদের অনেকেই গত দু’দিন যাবত হাজী ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে চিড়া-মুড়ি খেয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। হাজী ক্যাম্পের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। ট্রাভেল নূরানী’র স্বত্বাধিকারী হাফেজ মাওলানা মোঃ আব্দুল আউয়াল সম্প্রতি হাবের সভাপতি আলহাজ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহারের কাছে প্রতারক লীড এজেন্সি শুভ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মমিন খানের জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে হজযাত্রীদের ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা অসৎ উদ্দেশ্যে কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনালের একাউন্টে সরিয়ে নেয়ার চিত্র তুলে ধরেন। এতে হাবের সভাপতি হতবাক হন। উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (হজ-২) মোঃ শহীদুল্লাহ তালুকদার এক বিজ্ঞপ্তিতে (স্বারক নং-১৬.০০.০০০০.০০.০০৩.১৮.০০১.১৬-৮২৪) ঘোষণা দেন বেসরকারি প্যাকেজের হজযাত্রী নিবন্ধনের লক্ষ্যে ব্যাংকে জমা দেয়া হজযাত্রী প্রতি ১ লাখ ২৬ হাজার ৬শ’ ৮৯ টাকা ৬৮ পয়সা কোন ক্রমেই ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা যাবে না। এ টাকা শুধুমাত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিঃ বা সাউদিয়া এয়ারলাইন্সকে হজযাত্রীদের টিকিটের জন্য প্রদান করতে হবে। উল্লেখিত টিকিটের টাকা দু’টি এয়ারলাইন্স-এর নামে পে-অর্ডার করা যাবে। অন্য কোন কাজে বা অন্য কাউকে এ অর্থ পরিশাধ করা যাবে না। সরকারি এ নিদের্শনা সংশ্লিষ্ট সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকেও অবহিত করা হয়েছে। কিন্ত হজযাত্রীদের টিকিটের অর্থ কী ভাবে অন্য একটি বেসরকারি ট্রাভেল এজেন্সির একাউন্টে সরিয়ে নেয়া হয়েছে তা’ বোধগম্য নয়। ট্রাভেল নূরানী’র স্বত্বাধিকারী হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। গতকাল হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল ইনকিলাবকে বলেন, আমার ট্রাভেল নূরানী ও মেরাজ এয়ার ইন্টারন্যাশনালের ১শ’ ৩জন হজযাত্রীর বিমানের টিকিটের জন্য ব্যাংকে জমাকৃত প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা লীড এজেন্সি শুভ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী প্রতারক মমিন খান গত ১৪ জুলাই ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে মতিঝিলস্থ একটি ব্যাংক থেকে কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনালে সরিয়ে নেয়। বিষয়টি পরে কেউ আঁচ করার আগেই উল্লেখিত কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল থেকে হজযাত্রীদের টিকিটের টাকা ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যায় প্রতারক মমিন খান। পরে বহু দেন দরবার করে হজযাত্রীদের টিকিটের টাকার একাংশ উদ্ধার করা হলেও এখনো ২৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা দেই দিচ্ছি বলে মমিন খান গা-ঢাকা দিয়েছে। ফলে ৫৯ জন হজযাত্রীদের ভিসা হলেও টিকিট ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। গতকাল প্রতারক মমিন খানের মোবাইল ফোনে (০১৯৪২৩৩৫৩৯৩) একাধিক বার রিং করলে তিনি ফোন ধরেননি। এদিকে, দেশ ভ্রমন ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী আবু তাহের গতকাল ইনকিলাবকে জানান, মাদার ট্রাভেলসে (৯৬০) স্বত্বাধিকারী তার ছেলের ৪২ জন হজযাত্রীর টিকিট গতকালও হাতে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, আমাদের হজযাত্রীদের বিমানের টিকিটের টাকা ব্যাংক থেকে লীড এজেন্সি শুভ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মমিন খান সরকারি নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে তার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, এক কোটিরও বেশি টিকিটের টাকা মমিন খান সরিয়ে নিলেও এ যাবত ৯০ লাখ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বাকি টাকা এখনো উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায় তিনি ৪২জন হজযাত্রী নিয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। হজযাত্রীদের টিকিটের টাকা ব্যাংক থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে হাবের সহ-সভাপতি ফরিদ আহমেদ মজুমদার রাতে ইনকিলাবকে বলেন, প্রতারক চক্র কীভাবে হজযাত্রীদের টিকিটের টাকা অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে এর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনালকেই দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, প্রতারণার শিকার এসব হজযাত্রীদের হজে পাঠাতে হাব সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, হজ নিয়ে প্রতারণা বরদাশত করা হবে না। প্রতারক হজ এজেন্সি চট্টলা হজ ট্রাভেলস (৭১৭)-এর স্বত্বাধিকারী মোঃ নিজাম উদ্দিন ২৪ জন হজযাত্রীর হজের সকল টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে। হজ ভিসাপ্রাপ্ত এসব হজযাত্রীর বিমানের টিকিট দেই দিচ্ছি বলে প্রতারক নিজাম উদ্দিন সউদী আরবে পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। গত দু’দিন যাবত এসব হজযাত্রীকে হজে পাঠানোর কথা বলে হাজী ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়েছে। হজ টিকিট না দিয়ে তাদেরকে হাজী ক্যাম্পে ফেলে পালিয়ে গেছে হজ এজেন্সির প্রতারক মালিক নিজাম উদ্দিন। গতকাল হজ অফিস কর্তৃপক্ষ প্রতারক হজ এজেন্সির মালিক নিজাম উদ্দিন ও তার পরিবার পরিজনকে আটক করে এসব অসহায় হজযাত্রীদের হজে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে চট্টগ্রামের বিভাগীয় পুলিশ, চট্টগ্রাম র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন