স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী ওলামা লীগ নেতৃবৃন্দ দেশ ও জনগণের স্বার্থে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ এবং কোরবানির স্পট বাতিলের দাবি করেছেন। তারা ঢাকার কোরবানি দাতাদের চাহিদা অনুযায়ী ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কোরবানির পশুর হাট বসানোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনসমূহের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা জঙ্গিবাদের উস্কানিদাতা, জঙ্গিবাদের গডফাদারদের চিহ্নিত করাসহ তাদের সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দাবি করেন।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আওয়ামী ওলামা লীগসহ সমমনা ১৩টি ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ মানবন্ধনে এসব দাবি জানান। হাফেজ মাওলানা মোস্তফা চৌধুরী বাগেরহাটির সভাপতিত্বে ও কার্যকরী সভাপতি আলহাজ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন আলহাজ কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ; আলহাজ মুফতি মাসুম বিল্লাহ নাফেয়ী, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ওলামা ফাউন্ডেশন; মাওলানা মুহম্মদ শওকত আলী শেখ ছিলিমপুরী, দফতর সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ; হাফেজ আব্দুল জলিল, ডা. সাইফুদ্দীন মিয়াজি, মাওলানা তাজুল ইসলাম, ক্বারী মাওলানা মুহম্মদ আসাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধনে উত্থাপিত দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছেÑ * সীমান্তকে চূড়ান্ত সতর্ক রাখতে হবে। ভারত থেকে কোনোমতেই গরু আনতে দেয়া যাবে না। * ৯৮ ভাগ মুসলমান জনগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাস পবিত্র কোরবানির ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। পবিত্র কোরবানির স্পট নির্ধারণ করলে কোরবানিদাতারা ক্ষুব্ধ হবে এবং নানাভাবে হয়রানির শিকার হবে। কাজেই পবিত্র কোরবানির স্পট নির্ধারণ বাতিল করতে হবে। উল্লেখ্য, সউদী আরবে হাজীরা ব্যতীত অন্যরা ঘরে ঘরে কোরবানি দিয়ে থাকে। * পবিত্র কোরবানির হাটের সময় ১০ দিন করতে হবে। প্রায় ২ কোটি জনসংখ্যার ঢাকা শহরে কমপক্ষে দুইশ’ কোরবানির হাট বসাতে হবে। এ বছর কমপক্ষে ৫০টি এবং পরে তা ২০০ হাটের ব্যবস্থা করতে হবে। * পবিত্র কোরবানির পশুর দাম কমানোর জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়কে বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে। হাটের ইজারা মূল্য বৃদ্ধির পরিবর্তে ইজারা মূল্য মাফ, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের থাকা-খাওয়াÑএগুলোর বিষয়েও সরকারের প্রণোদনা দিতে হবে। কোরবানির জন্য যোগ্য সর্বনি¤œ খাসির মূল্য ৩ হাজার টাকা ও সর্বনি¤œ গরু ২১ হাজার টাকা দরে সরবরাহ করার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। পবিত্র কোরবানির ঈদের বন্ধ ১০ দিন করতে হবে। * কোরবানির হাটে মাইকে গান-বাজনা বন্ধ করে শান্তিময় পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং কোরবানির চামড়া সংগ্রহে মাস্তানদের উৎপাত বন্ধ করা হোক। * বাঙালি জাতির জনক শহীদ শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতির গর্বিত সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কটূক্তিকারীর শাস্তির আইন পাসের মতো রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং পবিত্র দ্বীন ইসলাম ধর্মের প্রতি কটূক্তিকারীর প্রতিও সর্বোচ্চ শাস্তির আইন পাস করতে হবে। * শত্রু সম্পত্তি বা অর্পিত সম্পত্তি এবং দেবোত্তর সম্পত্তি এখন রাষ্ট্রীয় সম্পদ। ভারতে শত্রু সম্পত্তি মুসলমানদের ফিরিয়ে দেয়া হয় না। বাংলাদেশেও ফেরত দেওয়া হবে না? কারো সাম্প্রদায়িক নির্দেশে দেবোত্তর সম্পত্তির নামে দেশব্যাপী মুসলমানদের সম্পত্তি, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের সম্পত্তি হরণ করতে দেয়া হবে না, চলবে না। অবিলম্বে মুসলমানদের লা-খেরাজ সম্পত্তি মুসলমানদের ফেরত দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। * পশ্চিমবঙ্গ উদ্দেশ্যমূলকভাবে পশ্চিম বাদ দিয়েছে কেন তা খতিয়ে দেখার দাবি। এরপর দুই বাংলা এক হওÑমুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এরূপ স্লোগান ওঠে কি না সে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সাথে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের বিশেষ ব্যক্তিরা যে জড়িত তা এখন একে একে প্রকাশ পাচ্ছে। এ অবস্থায় জনগণের চিন্তা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে সর্বদলীয় ঐক্যের ধোয়া তুলছে। এ ঐক্য প্রতিষ্ঠার পর পরে কোনো জঙ্গির হামলার ঘটনা ঘটলে তার দায় আওয়ামী লীগের ঘাড়েও বর্তাবে। তখন বিএনপি-জামায়াতের দলবাজরা বলতে শুরু করবে, এ ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগ জড়িত। তারা বলেন, জঙ্গিবাদের চক্রান্ত মূলত স্বাধীনতার পর থেকেই শুরু হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সে ধারাবাহিকতার অংশ। এ ঘটনার মূল হোতা মুফতি হান্নানের পরামর্শদাতা ও অর্থ সহায়তাকারী ছিল স্বনামধন্য একজন মরহুম ইসলামী নেতা। গ্রেনেড হামলাসহ জঙ্গিবাদের অর্থদাতা মীর কাসেম আলী তথা রাবেতা। শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা এখনো চলছে। আর এসব পরিকল্পনার জন্য অর্থ সহয়তা ও চক্রকারীরা হচ্ছে সালেহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে ও মীর কাসেম আলীর ছেলেসহ ফাঁসিদ-াদেশ প্রাপ্ত পরিবার এবং জামায়াত-শিবিরের কেউ কেউ। দেশের বাইরে থেকে এ জঙ্গিবাদের পেছনে ভূমিকা রেখে চলেছে লন্ডনে থাকা জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাক। পলাতক জামায়াত নেতা মতিউর রহমান। এ পরিকল্পনার নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরাইল, আমেরিকা ও পাকিস্তান। এর সাথে যোগসূত্র রয়েছে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের। বিগত কয়েক মাস আগে বিএনপির এক নেতার সাথে ইসরাইল এক নেতার ভারতে গোপন বৈঠক উদঘাটিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে উল্লিখিতরা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মাধ্যমে এগোচ্ছে। তাই সরকারকে এসব পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পূর্বেই তা উদঘাটন ও প্রতিহত করতে হবে। একই সাথে সরকারের পতন ঘটানোর জন্য জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ঘরানার লোকদের প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থায়ন করা হচ্ছে। সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন