শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

নদী ভাঙন তীব্র বাড়ছে আশ্রয়হীন পরিবারের সংখ্যা

প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : এবছর নদী ভাঙন তীব্র হয়েছে। একদিকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি, আরেক দিকে নদী ভাঙন দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সীমাহীন দুর্ভোগের কবলে ফেলেছে। আর সীমান্ত নদী ভাঙনে গৃহহীন মানুষের অবস্থা আরও শোচনীয়।
তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার. ইছামতি, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, মেঘনা, ধলেশ্বরী, আড়িয়াল খাঁ, গড়াই, কর্ণফুলী, মধুমতি, সুরমা, কুশিয়ারা, পদ্মা, মহানন্দা, মুহুরী, শঙ্খ, করতোয়া প্রভৃতি নদ-নদীর ভাঙনে প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে; আর এতে করে বাড়ছে আশ্রয়হীন পরিবারের সংখ্যা। বাংলাদেশে নদী ভাঙন প্রলয়ঙ্করী দুর্যোগের মতই বিপজ্জনক হলেও ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের অবস্থা পরিবর্তনে সরকারি কিম্বা বেসরকারি পর্যায়ে উন্নয়নমূলক প্রকল্প একেবারেই নামমাত্র।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ৮৫ টি শহর ও বন্দরসহ মোট ২৮৩টি স্থানে নিয়মিতভাবে প্রতি বছর মারাত্মক ভাঙন দেখা দেয়। এ ছাড়া প্রায় ১২শ’ কিলোমিটার তটরেখা নদী ভাঙন-প্রবণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।
সিইজিআইএস’র তথ্যানুযায়ী, নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে যারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে তাদের মাঝে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ লোক টাকা পয়সার অভাবে নতুন করে ঘরবাড়ী তৈরী করতে না পারায় গৃহহীনে পরিণত হয়। বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখ গৃহহীন ভাসমান মানুষ রয়েছে এবং প্রতি বছর এদের সংখ্যা গড়ে লক্ষাধিক করে বাড়ছে। ভাসমান এসব মানুষ সাধারণত বাঁধ, রাস্তা, পরিত্যক্ত রেল সড়ক, খাস চর বা খাস জমি প্রভৃতি স্থানে ভাসমান জীবন যাপন করে। অভাবে তাড়নায় এরা শহরমুখী হয় এবং শহরের বস্তিগুলিতে বাড়তি জনসংখ্যার চাপে জর্জরিত।
এবছর বন্যায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নীলফামারী, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জামালপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, শরিয়তপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, মাদারীপুর, ভোলা, ফেনী, চাঁদপুর ও কুমিল্লাতে বন্যা দেখা দেয়। এসব জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীর পানি কোথাও বিপদ সীমার উপর দিয়ে আবার কোথাও বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করে প্রবাহিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েক লাখ মানুষ।
যেসব এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেছে ওই সব এলাকার নদী ভাঙন তীব্র হয়েছে। সর্বশেষ ভারত ফারাক্কা গেটের সবগুলো উন্মুক্ত করে দেয়ায় পদ্মা ও এর শাখা নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে বন্যা দেখা দেয়। গত দু’দিনে পদ্মার পানি কমতে থাকায় এসব এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধের টি গ্রোয়েনটিতে ফাটল জিওব্যাগ ডাম্পিং করে ঠেকানো হয়েছে। তবে পানি ঘূর্ণন যেভাবে চলছে, তাতে করে এটি এখনও ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে। সাতক্ষীরায় সীমান্ত নদী ইছামতির ভাঙনে কয়েক হাজার পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে। সেখানে বাঁধ মেরামত ও নদী ভাঙন প্রতিরোধের কাজ না করায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে মিছিল হয়েছে। এখানে নদী ভাঙন তীব্র হওয়ায় স্থানীয় পাউবো কর্মকর্তারা সবসময় আতঙ্কে থাকেন।
যমুনার ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, বগুড়া, পাবনা ও টাঙ্গাইলের অধিবাসীরা। আর পদ্মা অববাহিকায় শরীয়তপুর ও কুষ্টিয়া এবং মেঘনার তোড়ে সবচেয়ে বেশি ভাঙছে বরিশাল ও ভোলা জেলা। ভাঙনে গত চার দশকে দেশের প্রায় এক লাখ হেক্টর ভূখ- হারিয়ে গেছে নদীগর্ভে।
এর মধ্যে সীমান্ত নদী ভাঙনে বাংলাদেশ হারিয়েছে ৫০ হাজার একর ভূমি। সীমান্ত নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এপারের ভূমি ওপারে ভারতীয় অংশে জেগে উঠলেও এসব ভূমি ভারত বাংলাদেশকে ফেরত দেয়না। এ নিয়ে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে অনেক আলোচনা হলেও ভারত বরাবরই তা পাশ কাটিয়ে যায়। আর বাংলাদেশীরা তাদের জমিতে আবাদ করতে গেলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র বাধার কবলে পড়ে।
এদিকে বন্যাপূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষ নদীর পানি বিপদসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার, কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার, অমলশীদে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার এবং শেওলায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিইজিআইএসের দেয়া তথ্যানুযায়ী, দেশের সবচেয়ে ভাঙন প্রবণ নদী হিসেবে এখন চিহ্নিত হচ্ছে যমুনা। গত বছর কেবল যমুনা নদীর তীরেই ভেঙেছে দুই হাজার ২২১ হেক্টর জমি, তিন হাজার ৫৯৩ কিলোমিটার বাঁধ, ছয় হাজার ৮৪৩ কিলোমিটার সড়ক। আর এবার যমুনায় ভাঙনের শিকার হচ্ছে দুই হাজার ১৭৩ হেক্টর জমি, আট হাজার ৮১৯ কিলোমিটার বাঁধ, পাঁচ হাজার ৩১০ কিলোমিটার সড়ক। এ ছাড়া ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছয়টি হাটবাজার, দুটি সরকারি অফিস, তিনটি বেসরকারি অফিস, তিনটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ২৭টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিলীন হওয়ার হুমকিতে রয়েছে।
এছাড়াও ১৯৭৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যমুনার গর্ভে বিলীন হয়েছে ৯০ হাজার ৩৬৭ হেক্টর জমি। এর মধ্যে শুধু সিরাজগঞ্জে বিলীন হয়েছে ২২ হাজার ৭৮৪ হেক্টর এলাকা। এ ছাড়া কুড়িগ্রামে ১৮ হাজার ৪৭৯ হেক্টর, গাইবান্ধায় ৯ হাজার ৩৪৮ হেক্টর, জামালপুরে ১০ হাজার ৬০৮ হেক্টর, বগুড়ায় ১০ হাজার ৯৩৮ হেক্টর, টাঙ্গাইলে ৯ হাজার ১৫০ হেক্টর এবং মানিকগঞ্জে ছয় হাজার ৩৩৫ হেক্টর ভূমি বিলীন হয়েছে।
একইভাবে পদ্মা অববাহিকার বিভিন্ন জেলায় শাখা নদ-নদীগুলোর তীরেই ভেঙেছে ৫৮৩ হেক্টর জমি ও ১৫৯ কিলোমিটার সড়ক। আর এবার ভাঙনের কবলে পড়েছে ৫৫২ হেক্টর জমি ও ৩৭২ কিলোমিটার সড়ক। আর ১৯৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে ২৯ হাজার ৮৪১ হেক্টর এলাকা।
এ সময়ের মধ্যে ভাঙনের ব্যাপ্তি হয়েছে ২৫ হাজার ৯ হেক্টর এলাকা। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুষ্টিয়া জেলা। ১৯৭৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পদ্মা নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে কুষ্টিয়ার ১১ হাজার ৮৫৭ হেক্টর এলাকা।
এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে চার হাজার ৬৯৩ হেক্টর, রাজশাহীতে এক হাজার ৬৭০ হেক্টর, নাটোরে দুই হাজার ৪৫ হেক্টর, পাবনায় দুই হাজার ২০৩ হেক্টর এবং রাজবাড়ীর কাছে ভাঙনের শিকার হয়েছে সাত হাজার ৩৭৩ হেক্টর ভূমি। ২০১২ ও ২০১৩ সালে এসব এলাকায় নদীভাঙনের শিকার হয়েছে এক হাজার ৯০৮ হেক্টর এলাকা।
এদিকে, পদ্মা ও যমুনার মতো ব্যাপক না হলেও দীর্ঘকাল ধরেই মেঘনার বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক ভাঙন চলছে। সিইজিআইএস’র ওই তথ্যানুসারে, ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে ২৫ হাজার ৮২০ হেক্টর এলাকা। বরিশালের হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, ভোলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিপন্ন হয়েছে মেঘনার ভাঙনে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক মোজাদ্দেদ আল ফারুক বলেন, চার দশক আগে দেশে নদীভাঙনের যে ভয়ংকর রূপ ছিল, তা অনেকটাই দুর্বল হয়েছে। তবে আমাদের দেশের মাটি নরম প্রকৃতির হওয়ায় বর্ষা ও বন্যার প্রভাবে নদীভাঙন বেশি হয়। এ ক্ষেত্রে বন্যার পানি কমতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ভাঙন। যেমনটা এবারও হচ্ছে। বিশেষ করে নদীর তীরে নিচের স্তরে থাকা নরম মাটি তীব্র স্রোতের আঘাতে ক্ষয়ে গিয়ে ফাটল তৈরি করে। পরে এর ওপরের মাটিও ধসে পড়ে বা ভেঙে যায়।
জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক আরেক মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ার কারণে ভাঙন বাড়ছে। আর এই নাব্যতা হ্রাসের অন্যতম কারণ হচ্ছে-অবাধে নদী ভরাট, দখল ও বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ। তিনি ভাঙন প্রতিরোধ কাজ জোরদার করতে পাউবো’র বরাদ্দ বৃদ্ধির উপরও গুরুত্বারোপ করেছেন।
পদ্মায় পানি কমছে : বাড়ছে ভাঙন
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, পদ্মায় ধীরলয়ে খানিকটা পানি কমলেও দুর্ভোগ কাটেনি বন্যা কবলিত মানুষের। নদী তীরবর্তী ঘরবাড়ি ফসলের ক্ষেত এখনো পানিবন্দি। নদীতে পানি কমার সাথে বাড়ছে স্রোতের তীব্রতা। আর এতে করে ভাঙন শুরু হয়েছে পাড়ে। পদ্মার উত্তর দক্ষিণ দু’পাড়েই ভাঙছে। বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ফসলের ক্ষেত মসজিদ স্কুল্। বিশেষ করে দক্ষিণের চরখানপুর, আসাড়িয়াদহ, খিদিরপুর।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে সোনাইকান্দী, নবগঙ্গা, জিয়ানগর, ইউসুফপুর, চারঘাট ও বাঘা ভাঙনের কবলে পড়েছে। উত্তরপাড়ের যেসব ঘরবাড়িতে পানি উঠেছিল সেখান থেকে পানি পুরোপুরি নেমে যায়নি। আখ, শাক-সব্জির ক্ষেত এখনো পানির নীচে। চারঘাটের আখের ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাঘার চরাঞ্চচল চকরাজাপুর, চৌমাদিয়া, আতরপাড়া, দিয়ার কাজিরপুর, লক্ষীনগর টিকটিকি পাড়ার দশ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি। এসব এলাকার এগারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার চারেক শিক্ষার্থী রয়েছে বিপাকে। তাদের বিদ্যালয়গুলোতে এখনো পান্।ি
এদিকে নগরীর শহর রক্ষা বাঁধের মূলগ্রোয়েনের শংকা কেটেছে বলে দাবী করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছিল আপাতত তা সামাল দেয়া গেছে। তবে নীচের অবস্থা এখন কেমন তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননি। শুকনো মওসুমে এ গ্রোয়েনসহ পশ্চিমের নদী তীরের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান সুরক্ষা ও ছয় কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করার পরিকল্পনা নেয়র কথা জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা। পদ্মার মধ্যচরের বাসিন্দারা আবারো উদ্বাস্তু হলো। চরখানপুর, খিদিরপুর নদীগর্ভে বিলীন হবার পর হাজার দেড়েক মানুষ ঘর বেঁধে ছিল জেগে ওঠা মধ্যচরে। এ চর বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ডোবেনি বলে তারা নতুন করে ঠিকানা খুঁজে পেয়েছিল। এবারো বর্ষার শুরুতে নদী ভরলেও চরের বাসিন্দারা ছিল নিরাপদে। শেষদিকে ফারাক্কার সবকটি গেট খুলে দিয়ে এপাড়ে বিপুল পরিমাণ পানি একসাথে ঠেলে দেয়ায় জেগে থাকা মধ্যচরও তলিয়ে যায়। এসব চরের বাস্ন্দিারা আশ্রয় নিয়েছে হরিয়ান ইউপি মাঠ, কাজলা রেডিও সেন্টার মাঠ, শ্যামপুর বাঁধের উপর। কোরবানী ঈদ সামনে রেখে এসব চরের বাস্ন্দিারা গরু লালন করেছিল। আশা করেছিল কিছু অর্থ পাবার। কিন্তু নদীর পানি সব শেষ করে দিয়েছে। চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রব বেড়েছে। দুর্গত মানুষের সাহায্যার্থে কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা একেবারে নগণ্য।
তীব্র স্রোতে ভাঙন বাড়ছে
ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) উপজেলা সংবাদদাতা : প্রমত্ত পদ্মায় তীব্র স্্েরাতের কারণে ভাঙন বাড়ছে। প্রতি মুহূর্তেই পদ্মা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলী মাঠ এবং অসহায় মানুষের শেষ সম্বল। ভাঙনের হাত থেকে সলেমানীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে বাঁচাতে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো। ইতোমধ্যেই পদ্মার গর্ভে চলে গেছে, সবচেয়ে পুরানো আশ্রায়ন প্রকল্প, মসজিদ, বসতবাড়ি এবং শতশত একর ফসলী জমি। ভাঙনের কারণে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার বাহিরচর, মোকারিমপুর, বাহাদুরপুর ও জুনিয়াদহ এলাকার নদী তীরবর্তী সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতী ভারতের ফারাক্কা বাঁধ’র গেট খুলে দেওয়ার ফলে ভাটির বাংলাদেশ’র পদ্মা নদীতে আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পায়। প্রতি মুহূর্তেই দ্রুত পানি বৃদ্ধি পেয়ে পদ্মা নদী একের পর এক গ্রাস করতে থাকে জনপদ। বাপ-দাদার ভিটেমাটিও বিলীন হয়ে যায় পদ্মার গর্ভে। হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টে সর্বোচ্চ পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভূর্গস্থ থেকে ১৪ মিটার ১৫ সেন্ট্রমিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। যা বিপদ সীমার মাত্র শূন্য দশমিক ১০ মিটার নীচে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় ভাটির বাংলাদেশ। পদ্মা নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও তীব্র স্্েরাত’র কারনে ভাঙন বাড়ছে। ভাঙনের কারনে প্রতি মুহূর্তেই পদ্মা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে একের পর এক ফসলী জমি।
নদীর পাড় ভাঙছে বগুড়ায়
বগুড়া অফিস জানায়, ভারী বর্ষণ ও উজানের পানি আগমন কমে আসায় বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি কমছে। পানি কমার সাথে সাথে নদীর স্রোতের তীব্রতা বাড়ছে, সেই সাথে পানির তীব্র স্রোতে ভাঙছে নদীর পাড়। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বগুড়ার সবকটি পয়েন্টেই পানি বর্তমানে বিপদ সীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়া উজানের ভারতীয় অংশ থেকে পানি প্রবাহের গতি যতই শ্লথ হচ্ছে যমুনায় পানিও কমছে ততই। সামনে বড় ধরনের কোন বর্ষণ না হলে আপাতত নতুন করে বন্যার আশংকা নেই বললেই চলে। বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনটের ২৫ টি পয়েন্টে নদী ভাঙছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বন্যা কবলিত ৩ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভাঙন পরিস্থিতি পুরো মনিটরিং করা হচ্ছে। তাদের কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
মানিকগঞ্জে পদ্মা-যমুনায় ভাঙন তীব্র
আরিচা সংবাদদাতা জানান, ভারতের ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়ায় উজান থেকে পানি নেমে এসে মানিকগঞ্জের পদ্মা-যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার পর কমতে শুরু করেছে। শনিবার দুপুর ১২ টায় যমুনা নদীর আরিচা পয়েন্টে পানির লেবেল ছিল ৮.৬০ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে পানি কমার সাথে সাথে নদী তীরবর্তী এলাকা জেগে ওঠায় নদী ভাঙন তীব্র হয়েছে। পদ্মা-যমুনার অব্যাহত তীব্র ভাঙনে শিবালয় উপজেলার তেওতা, শিবালয় ও আরুয়া ইউনিয়নের জাফরগঞ্জ, তেওতা, নিহালপুর, মালুচী, দক্ষিণ শিবালয়, অন্বয়পুর, ঝড়িয়ারবাগ, দাশকন্দি। আরুয়া ইউনিয়নের পাটুরিয়া, নয়াকান্দি, মান্দ্রাখোলা,কাজিয়ারট্যাক এলাকার নদী ভাঙ্গনে বহু ঘর-বাড়ি, আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। নদী ভাঙনের কারণে আরিচা পিসিপোল কারখানা এবং দক্ষিণ শিবালয় জামে মসজিদ হুমকির সম্মুখীন। এদিকে পানির স্রোতের কারণে এবং নদী ভাঙন তীব্র হওয়ায় বার বার ঘাট ভেঙে পড়ায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। ফেরিগুলো স্রোতের বিপরীতে চলতে গিয়ে দ্বিগুণ সময় ব্যায় করতে হচ্ছে। যানজট তীব্র হওয়ায় যানবাহন মালিক-শ্রমিকরা বিকল্প পথে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে।
এছাড়া, শিবালয় উপজেলার আরিচা পাটুরিয়া ঘাটের পার্শ্ববর্তী এবং পদ্মা-যমুনার তীরবর্তী মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঁচামারা, বাঘুটিয়া, জিয়নপুর, চরকাটারি, হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর, লেছরাগঞ্জ, বাল্লা, আজীমনগর, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্র্ণ এলাকা নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন