বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

সিরিয়া সঙ্কটে আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা

প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সিরিয়া সংকটে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার হস্তক্ষেপের পরে এবার সেখানে সউদি আরব ও তুরস্কের সেনা পাঠানোর হুমকিকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিরিয়ার সমস্যা সমাধানে আয়োজিত জেনেভা বৈঠক স্থগিত হয়ে যাওয়ার এই উত্তেজনাকে আরো উসকে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া, ইরান ও সিরিয়ার বাশার সরকারের পক্ষ থেকে পাল্টা হুমকি সোচ্চার হয়ে উঠছে। কার্যত সিরিয়া সংকটকে কেন্দ্র করে একদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যদিকে রাশিয়ার নেতৃত্বে বিভক্ত হয়ে পড়ছে যুদ্ধংদেহী আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বলয়। এর ফলে সেখানে আঞ্চলিক পর্যায়ে একটি ভয়ংকর যুদ্ধের আলামত ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।
সিরিয়ায় সউদি আরব ও তুরস্কে সেনা পাঠানোর হুমকির ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ আল-মুয়াল্লেম বলেছেন, সউদি আরব বা তুরস্ক যেই হোক না কেন, সিরিয়ার মাটিতে আগ্রাসন চালানোর হঠকারিতা দেখালে কাঠের কফিনে ভরে আগ্রাসীদেরকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। রাজধানী দামেস্কে গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। এর আগে দামেস্কের দৃষ্টিতে কোন পদক্ষেপ আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত হবে তারও ব্যাখ্যা দেন। মুয়াল্লেম পরিষ্কার ভাষায় বলেন, দামেস্ক সরকারের অনুমোদন না নিয়ে সিরিয়ায় কোনো স্থল অভিযান চালানো হলে তা আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। একই সঙ্গে ইয়েমেনে সউদি আগ্রাসনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দামেস্ক মনে করে না সউদিরা সিরিয়ায় পদাতিক বাহিনী পাঠাবে। তবে ইয়েমেনসহ অন্যান্য এলাকায় তারা যেসব পাগলামিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা দেখে এ ধরনের আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দেয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অপর এক খবরে বলা হয়, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর আলেপ্পোতে বিদ্রোহী বাহিনীকে ঘিরে ফেলেছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বাহিনী। শহরটির চারপাশে বর্তমানে চলছে তীব্র লড়াই। রাতিয়ান শহরের আশপাশে লড়াইয়ে উভয়পক্ষের ১২০ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। লড়াই তীব্র হয়ে ওঠায় আলেপ্পো শহর এবং এর আশপাশের এলাকা থেকে বেসামরিক বাসিন্দারা পালাতে শুরু করেছে। বিদ্রোহী বাহিনীর শীর্ষ নেতা হাসান হাজ আলি বলেন, শহরটির এখনো পতন হয়নি। তবে সেখানে তীব্র লড়াই চলছে। সরকারি বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার পরিধি বিস্তৃত করার চেষ্টা করছে। আলেপ্পোর উত্তরের গ্রামাঞ্চলগুলো পুরোপুরি ঘিরে ফেলেছে তারা। সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। বিদ্রোহী অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় সরকারি বাহিনীর অবরোধ প্রচেষ্টার মুখে দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু হয়। রুশ বিমান হামলার সহায়তায় গত কয়েক দিনে আলেপ্পো প্রদেশে সিরীয় সেনাবাহিনী ধারাবাহিক সাফল্য পেয়েছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে জানানো হয়, সরকারি বাহিনী আলেপ্পোর পার্শ্ববর্তী শহর রাতিয়ান দখল করে নিয়েছে। উল্লেখ্য, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পাঁচ বছরে ২০ লাখের বেশি সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে তুরস্ক।
এদিকে, বিনা অনুমতিতে সিরিয়ায় সউদি সেনা পাঠানো হলে তা দামেস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে বলে রুশ সংসদের নিম্নকক্ষ ডুমার প্রধান পাভেল ক্রাশেনিননিকোভ মন্তব্য করেছেন। তিনি আরো বলেন, সিরিয়ায় সেনা পাঠাতে হলে দামেস্কের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক সম্মতি নিতে হবে কিংবা সিরিয়ার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে, তা না হলে সউদি সেনা পাঠানোর বিষয়টিকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে গণ্য করা হবে। আন্তর্জাতিক আইনে এটি বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি। ক্রাশেনিননিকভ আরো বলেন, সিরিয়ায় স্থল অভিযানের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে রিয়াদ এখন যুদ্ধ ঘোষণা না করেই সার্বভৌম একটি দেশে সেনা পাঠাতে চাচ্ছে। স্থল অভিযানের জন্য সিরিয়ায় সেনা পাঠাতে প্রস্তুত বলে গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে সউদি আরব। সউদি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমাদ আনসারি সউদি মালিকানাধীন আল-আরাবিয়া টেলিভিশন চ্যানেলকে এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সিরিয়ায় সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযানে জড়িত মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট যদি স্থল অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় তবে তাতে সেনা পাঠাতে সউদি আরব প্রস্তুত রয়েছে। সউদি আরবের এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাস্টন কার্টার। এপি, বিবিসি, আল-জাজিরা, রেডিও তেহরান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন