ক্রেতা-গ্রাহকদের অভিযোগ এবং নিজ উদ্যোগে পরিচালিত অভিযানের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৭৩ কোটি টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এর মধ্যে অধিদফতরে অভিযোগ করে ভোক্তারা ক্ষতিপূরণ হিসেবে পেয়েছেন ১ কোটি টাকার ওপরে।
‘বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস ২০২১’ উপলক্ষে গতকাল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা। উল্লেখ্য, আজ সোমবার বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস।
তিনি বলেন, আমরা ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি। দুই পদ্ধতিতে আমরা জরিমানা করে থাকি। এর একটি হলো সহ-উদ্যোগে বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানো। আরেকটি হলো- ক্রেতারা প্রতারিত হয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করলে সত্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।
বাবলু কুমার সাহা জানান, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোক্তার অভিযোগ ও সহ-উদ্যোগে পরিচালিত অভিযানের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে মোট ৭২ কোটি ৮৪ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এর মধ্যে ভোক্তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ হাজার ৭৪৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ১৬ লাখ ২৫২ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ জরিমানার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারী ভোক্তাকে পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর বাজারে অভিযান চালিয়ে ৯৭ হাজার ৩০৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৮ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ৪৪২ টাকা জরিমানা করেছে। এ জরিমানার অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। ভোক্তার অভিযোগ ও বাজার অভিযানের মাধ্যমে করা জরিমানা থেকে মোট ৭১ কোটি ৬৫ লাখ ৩৬ হাজার ১২৩ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে বলে জানান অধিদফতরের মহাপরিচালক।
সংবাদ সম্মেলনে অধিদফতরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৬১ হাজার ৩০০ টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে ২ কোটি ৭১ লাখ ৬৪ হাজার ৩০০ টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২ কোটি ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৩১ হাজার ১০০ টাকা এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ কোটি ৩ লাখ ৪০ হাজার ৩৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬ কোটি ৮৭ লাখ ৯ হাজার ৩০০ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৪ কোটি ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ২০০ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৭২ লাখ ৩৭ হাজার ৮৫০ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১ কোটি ৯১ লাখ ৪৭ হাজার ২০০ টাকা এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) ১০ কোটি ৫৭ লাখ ১৯ হাজার ৮০০ টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ভোক্তা অধিকার দিবসের বিষয়ে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস ২০২১ উদযাপনের সুযোগ সামনে আসায় এ দিবসটি এবার ভিন্ন মাত্রা নিয়ে উদযাপিত হবে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘মুজিববর্ষে শপথ করি, প্লাস্টিক দূষণ রোধ করি’। রাজধানী ঢাকাসহ সবগুলো বিভাগীয় শহর, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে দিবসটি পালন করা হবে বলে জানান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা।
তিনি বলেন, দিবসটি উদযাপনের অংশ হিসেবে আজ সোমবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন