মিজানুর রহমান তোতা : যশোরের কপোতাক্ষ নদে ঝিকরগাছা পয়েন্টে পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৭ সেন্টিমিটার পানি কমলেও গতকাল বিকাল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলাম এই তথ্য জানিয়ে বলেন, ৪ দশমিক ১১ সেন্টিমিটার হচ্ছে বিপদসীমা। তিনি জানান, নদের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না বললেই চলে। পানি স্থির হয়ে আছে। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পানি কমতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে।
এদিকে যশোর ও খুলনার দুঃখ হিসেবে চিহ্নিত ভবদহ এলাকার পানিবন্দীদের দুর্দশা আরো বেড়েছে। শ্রীনদী ও হরিহর নদীতে পানি প্রতিবন্ধকতায় বিরাট এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শ্রীনদী ও হরিহর নদীতে ড্রেজিং শুরু হলেও পানি সরছে না ভবদহের গেট দিয়ে। ভবদহের আশপাশে মনিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর উপজেলার বিরাট এলাকায় আড়াইশ’ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দীদের মাঝে শ্লোগান উঠেছে ‘পানি সরাও, মানুষ বাঁচাও’। পানিবন্দীদের দুর্গতি মোটেও কমছে না। ত্রাণ সাহায্য একেবারেই অপ্রতুল। পানিবন্দীরা ত্রাণের জন্য পথপানে চেয়ে থাকছেন। কখনও ত্রাণ জুটছে, কখনও জুটছে না। হাজার হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু পানির মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন। কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রেও পানি উঠছে। যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের এমপি স্বপন ভট্টাচার্য্য যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পানিবদ্ধ এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানালেও তা ঘোষণা করা হয়নি। দাবির সময় তার সঙ্গে ছিলেন মণিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হোসেন লাভলু, পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান ও সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল।
পানিবন্দীদের কথা, ‘শ্রী-হরি ও মুক্তেশ্বরী নদীতে পলি জমে যাওয়ায় গত কয়েকদিনের বৃষ্টির পানি বের হতে পারেনি। এতে করে যশোরের ৩টি উপজেলার আড়াইশ’ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ বিপদে পড়েছেন। ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে অপূরণীয়। মাছের ঘের ভেসে গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৫শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বন্ধ রয়েছে ১৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সাপের কামড়ে সাতজনসহ বিভিন্ন কারণে মারা গেছে ১১ জন। এ অবস্থায় গোটা এলাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, প্রভাবশালী মহল ও ঠিকাদাররা মিলেমিশে বছরের পর বছর ড্রেজিং-এর নামে সরকারী কোষাগার থেকে উত্তোলিত কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। বাস্তবে ড্রেজিং হয়েছে নামকাওয়াস্তে। কপোতাক্ষ ছাড়াও বুড়ি ভদ্রা পুনঃ খনননের নামে চলে সরকারী অর্থের লুটপাট। এর আগে একইভাবে যশোর-খুলনার পানি নিষ্কাশন ও পুনর্বাসন প্রকল্পের ২শ’২৯ কোটি টাকা ও পরবর্তীতে ওই প্রকল্প ও টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। গোটা এলাকার জনগণ দাবী তুলেছেন, যশোর ও খুলনা অঞ্চলের পানিবদ্ধ এলাকার পানি সরানো, নদ ও খাল ড্রেজিং, রেগুলেটর স্থাপন ও পুনঃ খনন কাজে মোট কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে আর কাজ হয়েছে কতটুকু তা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টীম মাধ্যমে খুঁজে বের করে জনসমক্ষে রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক। তাতে কে কোথায় কিভাবে কত টাকা লুটপাট করেছে তার আদ্যপান্ত বের হয়ে আসবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন