অর্থনৈতিক রিপোর্টার : প্রবাসী আয়ে মন্দা কাটছেই না। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ের পর আগস্টেও কমে গেছে প্রবাসী আয়। এ মাসে প্রবাসীরা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন তা আগের অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে প্রায় ১ শতাংশ কম।
এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের (জুলাই-আগস্ট) হিসেবে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। যদিও জুলাইয়ের চেয়ে আগস্টে প্রবাসী আয় বেড়েছে। ইদুল আজহার সামনে রেখে সেপ্টেম্বরে প্রথম সপ্তাহে দেশে বড় অঙ্কের প্রবাসী আয়ের অন্তঃপ্রবাহ হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। প্রবাসী আয় কমার কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জনশক্তি রফতানিতে ভাটা, অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের বিপরীতে বিভিন্ন মুদ্রার দরপতন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলা রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কয়েকটি কারণে রেমিট্যান্স কমছে। এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হচ্ছে। এতে আমদানিকারকদের সুবিধা হলেও রেমিট্যান্স ও রফতানিতে প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমেছে। এছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রফতানিতে ‘স্থবিরতা’ চলছে। সরকার নানা দেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও এর দৃশ্যমান কোনো ফল দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের আগস্টে প্রবাসীরা ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা গেল অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে ১ কোটি ১৪ লাখ ডলার বা দশমিক ৯৭ শতাংশ কম। গেল অর্থবছরের আগস্ট মাসে ১১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি জুলাইতে ছিল আরও করুন। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে রেমিট্যান্স আসে মাত্র ১০০ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। অথচ গেল অর্থবছরের একই মাসে ১৩৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে। সবমিলে চলতি অর্থবছরের (জুলাই-আগস্ট) প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২১৮ কোটি ৯১ লাখ ডলার। যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার কম। গেল অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট এই দুই মাসে প্রবাসী আয় আসে ২৫৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্টে বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৭৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১ কোটি ১১ লাখ এবং বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
তবে একক ব্যাংক হিসেবে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে ২৭ কোটি ৬৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিটেন্স আহরণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ২৬ লাখ ডলার, ডাচ্ বাংলা ও ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ কোটি ডলারের কিছু বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় আড়াই শতাংশ কম প্রবাসী আয় আসে। গেল অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে যা ছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি ডলার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন