শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

স্বাস্থ্য খাতে সাফল্যের নির্দেশক কমিউনিটি ক্লিনিক ঝিমিয়ে পড়েছে কার্যক্রম

প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : চাকরি জাতীয়করণ হবে এমন আশ্বাস চলছে দীর্ঘদিন থেকে। এমনকি একাধিকবার সিদ্ধান্তও হয়েছে। সিদ্ধান্তের পরও ৩ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো শুরু হয়নি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। এমনকি চাকরির বয়স ৫ বছর হয়ে গেলেও কমিউনিটি ক্লিনিকের মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মীরা এখনো পায়নি কোন ইনক্রিমেন্ট। নিয়মিত ভাবে মিলছে না মসিক বেতনটাও। একই সঙ্গে নেই কোন ছুটিও। আর তাই জীবিকার তাগিদে অনেকেই চাকরি ছাড়ছেন। এতে অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম। জানা গেছে, চাকরি জাতীয়করণ না হওয়াসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ইতোমধ্যে প্রায় শতাধিক কর্মী চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। অনেকে ছাড়ার পথে। এ কারণে বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্যখাতের সাফল্যের রূপকার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সি.এইচ.সি.পি)’রা কেউ হতাশার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। অবিলম্বে সিএইচসিপিদের চাকরি জাতীয়করণ না হলে ভবন সর্বস্ব হয়ে পড়তে পারে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। এ প্রসঙ্গে কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. নাঈম উদ্দিন বলেন, প্রতিশ্রুতির তিন বছর পেরিয়ে গেলেও চাকরি জাতীয়করণের কোন প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। ২০১১ সালে কাজে যোগদানের পর থেকে এখনো কোন ইনক্রিমেন্ট পায়নি সিএইচসিপিরা। বেতনও হয় অনিয়মিত। তিনি জানান, এসব বিষয় নিয়ে চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম-এর সঙ্গে আলোচনা হয়। এ সময় স্বাস্থ্য সচিব এবং প্রকল্প পরিচালকও উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, চাকরি জাতীয়করণের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর প্রক্রিয়ার। তবে ইনক্রিমেন্টের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কিছুই হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সাল থেকে চাকরি জাতীয়করণের আলোচনা শুরু হয়। এই প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সালমা ছিদ্দিকা মাহাতাব, একই বছরের ২৯ জুলাই প্রকল্প পরিচালক ডা. মাখদুমা নার্গিস এবং ১৯ সেপ্টেম্বর তারিখে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৎকালীন পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. শাহনেওয়াজ সিভিল সার্জনদের চিঠির মাধ্যমে চাকরি জাতীয় করণের বিষয়টি জানান। ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক ডা. মাখদুমা নার্গিস দেশের সকল সিভিল সার্জনদের সিএইচসিপিদের চাকরি বই খোলার বিষয়ে চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি বলেন, ‘রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সকল কর্মরত সিএইচসিপিদের চাকরি বই খুলে তাদের যোগদানের তারিখ ও নৈমিত্তিক ছুটি ব্যতীত সকল প্রকার ছুটি মঞ্জুরীর আদেশ অনুযায়ী চাকরি বইতে লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করা হলো।
আরসিএইচসিআইবি সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতেই কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প চালু করে সরকার। ইতিমধ্যে সারাদেশের ক্লিনিকগুলোতে প্রায় সত্তর কোটি বার ভিজিটের মাধ্যমে জনগণ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন। মহিলা সিএইচসিপিরা সিএসবিএ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে প্রায় আড়াই হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের নরমাল ডেলিভারী সফল ভাবে সম্পন্ন করেছে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সিএইচসিপিরা জানান, আইএমডির মূল্যায়ন প্রতিবেদন-২০১৩ প্রকল্প অফিস হতে বলা হয়েছিল, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে চাকরি জাতীয়করণ করা হবে। এমনকি চাকরি রাজস্বকরণ হবে বলে সারাদেশের সিএইচসিপিদের নামে সার্ভিস বুক ও এসিআর ফরম খোলা হয়। কিন্তু তারপর এই প্রক্রিয়া থমকে যায়। এ কারণে ইতোমধ্যে প্রায় চারশ’র মতো সিএইচসিপি চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। প্রতিদিনই দু’একজন চাকরি ছাড়ছে। তারা জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ শতাংশ সিএইচসিপিদের সরকারী চাকরির বয়স শেষ হয়ে গিয়েছে। সিএইচসিপিদের মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রয়েছে। এরা প্রত্যেকেই হতাশায় ভুগছে। তারা জানান, সিএইচসিপি পদে কর্মরতদের নিয়োগ বিধিতে কোন ছুটি নেই। ফলে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে, বা দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে অনুপস্থিত থাকে তাহলে তাদের বেতন কাটা হয়। এভাবে চলতে থাকলে স্বল্প সময়ে সিএইচসিপিদের বড় অংশ চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবে। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছানো অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের বর্তমান প্রকল্প পরিচালক ডা. মমতাজুল হক বলেন, একবারে চাকরি জাতীয়করণ সম্ভব নয়। এটি ধাপে ধাপে করতে হবে। সেই প্রক্রিয়া চলছে। গত ২৯ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সুপারিশসহ এ সংক্রান্ত চিঠি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাদের ছুটি নিশ্চিতকরণ, নির্ধারিত গ্রেডে আনুষঙ্গিকসহ বেতন প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। অনিয়মিত বেতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকল্পের চাকরি হওয়ায় ওপি থেকে তাদের বেতন দেওয়া হয়। তাই সেটা নিয়মিত দেওয়া সম্ভব হয়না।
উল্লেখ্য, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর ১৯৯৮ সালে ছয় হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তন হলে তৎকালীন সরকার ২০০১ সালে প্রকল্পটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার নিয়ে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প পুনরায় চালু করে। ২০১১ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার হিসাবে ১৩ হাজার ৫০০ জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। বিভিন্ন সময় এসব সিএইচসিপিদের চাকরি জাতীয়করণের আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু এখনো আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ জাতীয়করণসহ অন্যান্য সুবিধা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
MOHAMMAD HOSSAIN ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১০:৩৬ পিএম says : 0
সিএচসিপিদের চাকুরী জাতীয়করনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
Total Reply(0)
bijit ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১:১৬ এএম says : 0
কমিউনিটি ক্লিনিক বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লব ঘটিয়েছে।আর এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কর্মীদের চাকরির নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন