শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

সালাম শান্তির সোপান

আবু তালহা রায়হান | প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০২১, ১২:০৭ এএম

সালাম শান্তির সোপান। সালাম মুক্তির বাতায়ন। সালাম ইসলামী অভিবাদনের এক অনিন্দ্য কথন। সালাম অন্তরে প্রশান্তির জন্ম দেয়। কল্যাণ বয়ে আনে। দাম্ভিক আত্মাকে পবিত্র করে তোলে। অহংকার থেকে মুক্তি দান করে। পরস্পর পরস্পরে সৃষ্ট বিদ্বেষ বিদূরিত করে। সালামের মাধ্যমে একে অপরের শান্তি কামনা করা হয়। এতে করে মানুষে মানুষে হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। সমাজে অনাবিল সুখ-শান্তি আর ভালোবাসা বিরাজিত হয়। হাদিসে এসেছে, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সালাম- মুসাফাহা করলে তাদের পৃথক হওয়ার আগেই আল্লাহ তাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কথার আগে সালাম দিতেন। ছোটো-বড় সবাইকে তিঁনি নিজেই এগিয়ে গিয়ে সালাম করতেন।

সালাম নবীজির সুন্নাতসমূহের অন্যতম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,তোমরা পরস্পর পরস্পরে সালামের ব্যাপক প্রচার প্রসার করো। এতে করে তোমাদের মাঝে শান্তি ও ভালোবাসার বন্ধন তৈরি হবে। (মুসলিম)। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,তোমরা যখন ঘরে প্রবেশ করো, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দুয়া। (সূরা নূর : ৬১)।
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘আস্সালামু আলাইকুম’। তখন তিঁনি (নবীজি সা.) বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে একটু বাড়িয়ে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’ তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে আরো একটু বেশি বাড়িয়ে বললেন, ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উত্তর দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে।’ (সুনানে তিরমিজি : ২৬৯০)।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,তোমরা কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না ; যতক্ষণ না তোমরা নিজেদের মাঝে শান্তি ও ভালোবাসার পরিবেশ গড়ে তোলবে। অতঃপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করে বলেন,শান্তি ও সৌহার্দময় সমাজ গঠনে নিজেদের মাঝে তোমাদেরকে সালামের ব্যাপক প্রচার ও প্রচলন ঘটাতে হবে। বস্তুত সমাজে শান্তি রক্ষায় সালামের কোনো বিকল্প নেই।
সালাম ইসলামের একটি সুমহান ইবাদাত। আদর্শ ও উন্নত চরিত্রের বাহক। নবীপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ। সালামের মাধ্যমে জান্নাতের দ্বার খোলে। হযরত আবদুুল্লাহ বিন সালাম বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘হে লোক সকল, তোমরা সালামের ব্যাপকভাবে প্রচার প্রসার করো। অসহায় ক্ষুধার্তদের মাঝে আহার বিলিয়ে দাও । আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নীরবে আল্লাহর সামনে অবনত মস্তকে সিজদা করো । তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।’ (তিরমিজি)।
সালামকারীদেরকে আল্লাহ হিফাযতে রাখেন। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাদের জিম্মাদার হয়ে যান। তাদের হিফাযতে করেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তিন শ্রেণীর লোকের জিম্মাদার হন। তাদের মধ্যে প্রথম হলো, যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। অর্থাৎ ঘরে বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোন, ছোটো-বড় সবাইকে সালাম দিয়ে যে প্রবেশ করে। আল্লাহ তায়ালা ওই বাড়িকে এবং ওই ব্যক্তিকে হিফাযত করেন।’ (আদাবুল মুফরাদ)।
সাহাবায়ে কিরাম (রা.) বেশি বেশি সালাম দিতেন।সালাম প্রদানে তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা শুরু হত। অধিক ছওয়াব হাসিলে ব্যাপক সালাম প্রদানের জন্য তাঁরা বাজারে যেতেন! কিন্তু বর্তমান সমাজে সালাম একেবারে বিলুপ্তপ্রায়! কেউ তো আবার সালাম দিতে লজ্জাবোধ করেন! পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে লিপ্ত হয়ে আমরা ইসলামী সভ্যতাকে ভুলে যাচ্ছি। আগেকার শিশুরা সালাম প্রদানে এগিয়ে ছিল। কারো সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্রই সালাম দিত। বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জের শিশুদের মাঝে এই স্বভাব দেখা যেত। পাড়া-গাঁয়ের মক্তব থেকেই তাদের এই শিক্ষা । শিশুদের এ আচরণে সমাজে নববী সভ্যতার বহিঃপ্রকাশ পরিলক্ষিত হত। কিন্তু এখনকার শিশুরা সালাম দেওয়া তো দূরের কথা, অনেকে সালাম মানে কী সেটাও জানে না! হাই-হ্যালো দিয়েই কথাবার্তা শেখেছে তারা। শিশুদের এই অবক্ষয়ের জন্য আমাদের বড়রাই দায়ী। বড়রা এখন আর সালাম দেন না। সালাম প্রদানে তারা বড়-ছোটো,ধনী-গরিবের ফারাক খোঁজেন! বর্তমান সমাজের একদল মুরব্বিরাও এমন হয়েছেন যে,তাদেরকে সালাম না দিলে বিচারপ্রার্থী হন!
অথচ সরদারে কায়েনাত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পথে দিয়ে হাঁটার সময় শিশুদেরকে নিজে এগিয়ে গিয়ে সালাম দিতেন। অবশ্য ছোটোদের ও উচিত যে,প্রত্যেক শ্রেণীর লোকেদের সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্রই সালাম প্রদান করা। বেশি বেশি সালাম প্রদানের মাধ্যমে মরুময় আরবের জেহালতিপূর্ণ ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ এই সমাজে অনাবিল সুখ-শান্তি বয়ে আনা সম্ভব। তাই আসুন, পরস্পরে দেখা হওয়া মাত্রই সবার আগে সালাম প্রদান করি। একে অপরকে ভালোবাসি। শিশুদেরকে সালাম শিক্ষাদানের মাধ্যমে নবীপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করি। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়াত নসীব করুক! সিরাতে মুসতাকিমের ওপর অবিচল থাকার তাওফিক দান করুক! আমীন!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন