শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মধ্যবিত্তের অবস্থা দুর্বিষহ

শবেবরাত-রমজান নানা অজুহাতে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম চাল, তেল, মুরগির সাথে বাড়ছে চিনি, দুধ ও গরু গোশতের দাম ভোক্তা নয় ব্যবসায়ীদের পক্ষে সরকার : ক্যাব

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২১, ১২:১৪ এএম | আপডেট : ১২:২৬ এএম, ২০ মার্চ, ২০২১

পবিত্র মাহে রমজান যত এগিয়ে আসছে ভোগ্যপণ্যের দামও ততই বাড়ছে। এবার শবেবরাত উপলক্ষে অরেক দফা বেড়েছে চিনি, দুধ ও গরু গোশতের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে তেল ও চালের পর এবার গরুর গোশতের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০-৩০ টাকা। খাসির গোশতের দামও বেড়েছে। দেশি মুরগির দাম আগের চেয়ে কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। চাল, ভোজ্য তেল ও মুরগি চড়া দামের মধ্যে চিনি, দুধ ও গরু গোশতের বাড়তি দামে মানুষ সংসার চলাতে হিমশিম খাচ্ছে। আয়ের সাথে ব্যয়ের সঙ্গতি না থাকায় জীবনধারণ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
রমজানে যাতে নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ে এজন্য কয়েক দফায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ব্যবসায়ীরা রোজার আগেই পণ্যের দাম বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে। রোজার আগে শবেবরাতকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা চিনি, দুধ, ছোলা এবং গোশতের দাম আরেক দফা বাড়িয়েছে। ব্যবসায়ীদের ক‚টকৌশলের কাছে সরকার অসহায়। তাইতো ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষায় সরকার নিজেই রমজানের আগে ভোজ্য তেলের দাম আবার বাড়িয়েছে।

ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস অবস্থা। বিশেষ করে চাল, তেল, ডাল, মুরগি, চিনি ও আটার দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। বলা যায় এসব পণ্যের দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। গত প্রায় দুই মাস ধরে ভোজ্য তেলের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। সয়াবিন ও পামঅয়েলের দাম এখনো নিয়ন্ত্রণহীন। এ অবস্থার মধ্যে সরকার গত সপ্তাহে ভোজ্য তেলের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এতে লুজ সয়াবিন তেলের মূল্য প্রতিলিটার ২টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ৪ টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১৩৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চালের বাজারও রয়েছে লাগামহীন। সম্প্রতি দুই দফায় আবার বেড়েছে চালের দাম। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে বেসরকারিভাবে আমদানিশুল্ক দুই তৃতীয়াংশের মতো কমিয়েছে। কিন্তু তাতেও চালের মূল্য কমছে না। বরং ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে চালের দাম বেড়েই চলেছে। রাজধানীতে গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম কেজি প্রতি ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। যে চালের দাম ছিল ৬৪ টাকা কেজি, বর্তমানে সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা। যে চালের দাম ছিল ৬৫ টাকা তা বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা কেজি। মোটা লতা/স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি। এর বাইরে গত এক সপ্তাহে যে সব পণ্যের দাম বেড়েছে সেগুলো হচ্ছে চিনি, পাস্তরিত দুধ, ডিম ও আটা। ফলে ভোক্তারা এখনই শঙ্কিত রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ে।

নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে মধ্যবিত্তদের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বাজারে গিয়ে চাল কিনলে তেল কিনতে পারছে না। তেল কিনলে ডাল কিনতে পারছে না। বলা যায় মানুষের এক দুর্বিষহ অবস্থা যাচ্ছে। নিম্নআয়ের মানুষের আরো করুণ অবস্থা। তাদের তো খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে।
শাহজাহানপুরে বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী কামরুল ইসলামের সাথে গতকাল খিলগাঁও রেলগেইট বাজারে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, ‘অনেকদিন যাবৎ বাজারে চালের দাম খুব বেশি। সেটা কোনোভাবেই কমল না। এখন তো ৫০ টাকায়ও মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় তেল, চিনি, ডাল, আটা, দুধ এসব পণ্যের দামও বাড়ছে। গত বছর পেঁয়াজের দাম যেমন আকাশ ছোঁয়া হয়েছিল, এবার তেলের দামও তেমনি নাগালের বাইরে চলে গেছে। আমাদের এখন সংসার চালানো খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
পবিত্র শবে বরাতের এখনো দশ দিন বাকি। তার আগেই বেড়ে গেছে গরুর গোশত, চিনি ও পাস্তুরিত তরল দুধের দাম। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি গরুর গোশত ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি। কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। তরল দুধ মিল্ক ভিটা লিটারে ৫ টাকা বেড়ে ৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

মালিবাগ বাজারের গোশতের দোকানদার মতি ইনকিলাবকে বলেন, আর আট দশদিন পরেই শবে-বরাত। এর পর আসছে রোজা। এ উপলক্ষে গরু গোশতের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। হাটেও গরুর দাম বেড়েছে। তাই আমাদেরও গরু গোশতের দাম কিছুটা বাড়াতে হয়েছে।

গরুর গোশত কিনতে আসা আব্দুর রহমান বলেন, গরু গোশত আমার পরিবারের সবারই খুব প্রিয়। তবে গত পাঁচ-ছয় মাস হলো গরু গোশত খাওয়া হয় না। অনেকদিন পর ইচ্ছে হলো গরু গোশত খেতে তাই কিনতে এলাম। কিন্তু দাম শুনেতো হতবাক। কয়েকটি দোকানে ঘুরে দেখেছি ৫৮০ টাকার নিচে গোশত নেই। সামনে শবেবরাত এরপর রোজা গোশতের দাম তো আরও বাড়বে। তাই ত্রিশ চল্লিশ টাকা বেশি হলেও এক কেজি গোশত কিনে নিলাম।

মালিবাগের পাশাপাশি শান্তিনগর, ফকিরাপুল, টিএন্ডটি কলোনি বাজারে দেখা যায়, মুরগির দাম আরেক দফা বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, সোনালি ৩৩০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৪৫০ টাকা কেজি দাম চাচ্ছে বিক্রেতারা। এসব বাজারে খোলা চিনি প্রতি কেজি ৬৮ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়, যা এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ইনকিলাবকে বলেন, সরকার ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিবেচনা না করে সরকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করছে। এজন্য ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সবাই। অথচ অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যমূল্য বাড়িয়েই চলছে। সরকার তাদের কিছুই করতে পারছে না। সরকারের উচিত এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যস্থা গ্রহণ করা। সেই সাথে টিসিবির মাধ্যমে নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া।
রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবি পণ্য নিয়ে মাঠে নামবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রতি বছর দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২১ লাখ টন। এর মধ্যে শুধু রমজানেই চাহিদা প্রায় ৪ লাখ টন। অথচ এই চাহিদার বিপরীতে রমজানে টিসিবি ৫০ হাজার টন ভোজ্য তেল বিক্রির উদ্যোগ নিচ্ছে। তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তাই বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়বে বলে ভোক্তারা মনে করেন না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Masud Miah ২০ মার্চ, ২০২১, ১:৩৯ এএম says : 0
কি দেশ আমাদের রমজান মাসে জিনিস দাম বারে আর অন্য দিকে সৌদি আরবে রমজান মাসে জিনিসপত্রের দাম কমে
Total Reply(0)
M M Alamgir Hossain ২০ মার্চ, ২০২১, ১:৩৯ এএম says : 0
পবিত্র রমজান মাসে কৃত্রিমভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে অধিক মুনাফা করে সে টাকায় শতবার হজ্জকরলে এবং লেবাস লাগিয়ে মসজিদে সারাদিন রাত কপাল ঠুকলেও কোনো কাজ হবেনা।এমন শয়তানি আমল আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।আমার কথায় সন্দেহ হলে আমলদার ও প্রকৃত কিতাবি আলেমগণের কাছে জিজ্ঞেস করুন।
Total Reply(0)
Md Khokon ২০ মার্চ, ২০২১, ১:৪০ এএম says : 0
রমজান মাসের দিকে নজর রেখে সরকারের উচিত হবে নিত্ত পোয়জনীয় জিনিসে খেল রাখা দাম কমানো
Total Reply(0)
Shams Tibriz ২০ মার্চ, ২০২১, ১:৪০ এএম says : 0
এই অবৈধ মজুতদার আর দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিকারক দের অবিলম্বে জুরুরী ভিত্তিতে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্ৰহন করতে না পারলে রমজানে এই অসৎ ব্যবসায়ীরা বাজার কে অস্থিতিশীল করে তুলবে । এতে সরকারের চরম ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে । যার দরুন এখনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার ।
Total Reply(0)
অবাক পৃথিবী ২০ মার্চ, ২০২১, ১:৪০ এএম says : 0
বড় লোকদের কি হবে আর কয়টাকা বায়ছে বেশি না কিন্তু ওইটাই বেশি শ্রমজীবিদের জন্য,,,,,,,,,, সরকারি চাকরি যারা করেন ভাই তাদেরকে বলছি চাকরি ছেয়ে দেন।।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ২০ মার্চ, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
প্রতি রমজানে একই ভাবে দাম বাড়ানো হয় আর আপনারা একইভাবে খবর প্রচার করেন।
Total Reply(0)
Arafat Khan ২০ মার্চ, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
দেশে যে কি শুরু হয়েছে কয়দিন পড়ে পড়ে দাম বাড়ায় সব কিছু র
Total Reply(0)
Mozamel Hoq ২০ মার্চ, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
পৃথিবীর সব দেশে রমজান আসলে জিনিস পত্রের দাম কমে আর আমাদের দেশে উল্টো বেড়ে যায়, এমন নোংরা মন মানসিকতা শুধু আমাদের দেশে। ভাবতে লজ্জা লাগে মানুষ কে ঠেকিয়ে বারতি দাম আদায় করা আমাদের বিবেগে বাঁধে না।
Total Reply(0)
Fared Ahmed ২০ মার্চ, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
কেন এতোটাই দামবারছে দেখার কেউ নাই থাকলেও তারা কেমব না দেখার ভান করছে
Total Reply(0)
Jashimuddin Patwary ২০ মার্চ, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
সারা দুনিয়ার সব দেশে রমজানে জিনিসপত্রের দাম কমে আর আমাদের দেশের ব্যবসায়ী দের উপর আল্লাহ গজব পড়ে, ওরা সব জিনিসের দাম বাডায়
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন