বিশেষ সংবাদদাতা : ভারত থেকে নেমে আসছে বানের পানি। এতে করে দেশের নদ-নদীর পানি আরও এক দফা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে হারে পানি বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে নতুন করে দেশের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে এমন শঙ্কায় রয়েছেন নদী পারের মানুষ।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, গত তিন দিন ধরে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। একইভাবে সুরমা, কুশিয়ারা, মনু ও খোয়াই নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে তিস্তার পানি গত দু’দিন বাড়ার পর গতকাল (সোমবার) সামান্য কমেছে।
জানা গেছে, ভারতের আসাম, মনিপুর, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরাতে অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে সেখানকার নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই পানি গড়িয়ে দ্রুত বাংলাদেশের দিকে আসছে। বিশেষ করে আসাম ও মেঘালয়ে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি বাড়ছে। একইভাবে আসাম ও ত্রিপুরায় বৃষ্টিপাতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা, কুশিয়ারা, মনু ও খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে এসব এলাকার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
এমনিতেই দেশের ষোলটি জেলার নি¤œাঞ্চল এক দফা প্লাবিত হয়ে কয়েক লাখ পানিবন্দী মানুষকে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির কবলে পড়তে হয়েছে। এছাড়া বিহারের বন্যা ঠেকাতে ফারাক্কা বাঁধের সকল গেট একত্রে উন্মুক্ত করে বাংলাদেশের ভেতর প্রতিদিন ১৫ লাখ কিউসেক পানি ঠেলে দেয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, মানিকগঞ্জ, মাদারিপুর, শরিয়তপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া ও মুন্সিগঞ্জের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়।
এতে করে মানুষের বাড়িঘরে পানি ওঠে। ডুবে যায় খেতের ফসল, রাস্তাঘাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। দেখা দেয় নদীভাঙন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঁধ, ব্রিজ, কালভার্ট। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। বন্যাকবলিত এলাকার বিপদগ্রস্ত মানুষগুলোকে নিয়ে সরকার পড়ে বিপাকে। বিশেষ করে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ ও ওষুধ সামগ্রী পৌঁছানো এবং বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের বাড়তি নিরাপত্তা নিয়ে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি আগামী আরও ৪৮ ঘণ্টা বাড়বে। আর ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষ নদের পানি বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশিদে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার এবং কুশিয়ারা নদীর পানি শেওলায় বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
যৌথ নদী কমিশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ভারত প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার ২৫টিরও বেশি স্টেশন থেকে বৃষ্টিপাত, পানিপ্রবাহ এবং পানির উচ্চতাসংক্রান্ত যে তথ্যাদি পাঠায় তাতে মাত্র তিন দিনের আগাম পরিস্থিতি জানা যায়। দিল্লীতে অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশনের সর্বশেষ বৈঠকে ভারত বাংলাদেশকে ফারাক্কা পয়েন্ট থেকে ৭৮ কিলোমিটিার উজানে বিহারের সাহেবগঞ্জ এলাকায় গঙ্গা নদীতে বৃষ্টিপাত, পানিপ্রবাহ এবং পানির উচ্চতা কী পরিমাণ সে সংক্রান্ত যে তথ্য চেয়েছে, তা দিতে সম্মত হলেও এখন পর্যন্ত সে তথ্য পাওয়া যায়নি। এতে বাংলাদেশ বন্যা মোকাবিলায় বড় ধরনের কোনো প্রস্তুতি নিতে পারে না।
দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যা মোকাবিলার আগাম প্রস্তুতি হিসাবে আরও উজানে অর্থাৎ ভারতের এলাহাবাদ, পাটনা, বারানসিতে কী পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে এবং সেখানকার নদ-নদীগুলোতে কী পরিমাণ পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ সংত্রান্ত তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন। কারণ এসব জায়গায় পানি বাড়লে তা গড়িয়ে বাংলাদেশে আসতে অন্তত ১৫ দিন সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতির জন্য দু’সপ্তাহ সময় পাবে। ভারতের কাছ থেকে যে ধরনের তথ্যাদি পাওয়া যায় এতে করে বন্যা মোকাবিলায় সরকার মাত্র ৭২ ঘণ্টা সময় পাচ্ছে।
আর এবার ভারত বিহারের বন্যার পানি নামাতে বাংলাদেশকে কোনো ধরনের প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়েই ফারাক্কার সকল গেট খুলে দিয়েছে, যা ছিল যৌথ নদী কমিশনের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী।
রাজবাড়ীতে পদ্মার ভাঙন থামছেই না
গোয়ালন্দ উপজেলা সংবাদদাতা : ফারাক্কার ছেড়ে দেয়া পানির প্রভাবে পদ্মা নদীর রাজবাড়ী জেলার অংশে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। জেলা সদরের বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দা এলাকায় ভাঙন অব্যাহত থাকার পাশাপাশি গত দু’দিন ধরে একই ইউনিয়নের অন্তরমোড় এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। এছাড়া জেলার পাংশা উপজেলা হাবাসপুর এবং কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের প্রস্তাবিত ‘রাজবাড়ী সেনানিবাস’ এলাকায় তীব্র নদী ভাঙন চলছে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন কালুখালীর ‘রাজবাড়ী সেনানিবাস’ এলাকা এবং জেলা সদরের উড়াকান্দা এলাকায় বালুর বস্তা ফেলে নদী ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু কিছু জায়গায় স্কুল ও বাঁধ রক্ষায় কাজ করলেও এলাকাবাসীদের দাবি তাদের বসতবাড়ী ও মাঠের জমি রক্ষায় কোনো কাজ করছে না।
লোহাগড়ায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন
লোহাগড়া উপজেলা সংবাদদাতা : নড়াইলের লোহাগড়া মধুমতি নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে উপজেলার ১০নং কোটাকোল ইউনিয়নে ঘাঘার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। পানির ¯্রােতে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম ও মাঠের ফসল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নড়াইল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওই এলাকা মধুমতি নদীতে বিলীন হলে ওই বছরই পুনরায় নতুন করে তার পাশে মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হয়। এ বছর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার উপরে
সিলেট অফিস : সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। এতে নদীর তীরবর্তী লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গতকাল সকাল থেকে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিলেট অঞ্চলের সুরমা নদীর তিনটি পয়েন্টের মধ্যে দু’টি পয়েন্ট পানি বিপদসীমার মধ্যে ছিল। তাদের মধ্যে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে ১৩ দশমিক ১৪ ও সিলেট পয়েন্টে ১০ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার পানি অতিবাহিত হচ্ছে। তবে সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্টে ৭ দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার পানি অতিবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন