বিশেষ সংবাদদাতা : পুরনো ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বুড়িগঙ্গার ওপারে কেরানীগঞ্জে ‘অখ- জমিতে’ সব সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কেরানীগঞ্জেই হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ কাজ। সেখানেই আবাসিক হল নির্মাণ, একাডেমিক ভবনসহ একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যা যা করার, তা করা হবে। এ জন্য কেরানীগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনা ২৫ বিঘা জমির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করা হবে। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের শেষ দিকে এ সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে এজন্য একটি প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা দেন। পরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা সাংবাদিকদের জানান।
আবাসিক হলের দাবিতে গত প্রায় এক মাস ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারের এই সিদ্ধান্ত এল। কেরানীগঞ্জে নতুন ক্যাম্পাস হলেও পুরান ঢাকার চিত্তরঞ্জন এভিনিউয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী পুরনো স্থাপনাগুলোও থাকবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, তখন কোনটি মূল ক্যাম্পাস হবে, কোথায় কী কাজ হবে- সেসব বিষয়ে একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হবে। জগন্নাথের ছাত্রদের জন্য কেরানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ১০তলা একটি আবাসিক হল নির্মাণের যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে, সেখানেই আরও জমি নিয়ে এই ক্যাম্পাস হবে বলে জানান নাহিদ।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে জগন্নাথ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হলে সরকারের নতুন নির্দেশনা আসে। উল্লেখ্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগারের খালি জায়গায় ও কেরানীগঞ্জের নিজস্ব জায়গায় আবাসিক হল নির্মাণের দাবিতে প্রায় এক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন। এর মধ্যে গতকাল রোববার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি বলেছিলেন, কেরানীগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গায় ছাত্রদের জন্য ১০তলা হল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় গতকাল মন্ত্রিসভা শুধু কেরানীগঞ্জেই বিশ্ববিদ্যালয়টির সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রিসভার একজন সদস্য জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় হল নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনের বিষয়টি উঠে আসে। আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কারাগারের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতার স্মৃতি জড়িয়ে থাকায় সেখানে পার্ক ও জাদুঘর করার আগের সিদ্ধান্তই ঠিক থাকবে। কারণ সেখানে বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তাদের স্মৃতি রক্ষায় ওখানে জাদুঘর হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের স্মৃতিচারণ করেন। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও ওই কারাগারে বার বার বন্দী বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রোমন্থন করেন। আর জগন্নাথের শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছেÑ তা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জানতে চান তিনি।
জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, কেরানীগঞ্জে ছেলেদের জন্য একটি হল নির্মাণ করা হবে। আর মেয়েদের জন্য একটি হল নির্মাণ করা হচ্ছে। এর বাইরে পূর্বাচল ও ঝিলমিলি প্রকল্পে তারা জায়গা খুঁজছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেনÑ অ্যাকাডেমিক ভবন এক স্থানে, মেয়েদের হল আরেক জায়গায়, ছেলেদের হল অন্য জায়গায় কেন? পরে প্রধানমন্ত্রী এক জায়গায় জমি কিনে সেখানেই অ্যাকাডেমিক ভবন, আবাসিক হল, উপাচার্য’র বাসভবনসহ সব স্থাপনা নির্মাণের পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা করতে শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশনা দেন বলে জানান ওই মন্ত্রী।
ম্যাসিজিং অ্যাপ ‘আলাপন’ উদ্বোধন
গোপনীয়তা রক্ষা করে সরকারি কর্মকর্তাদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও ফাইল আদান-প্রদানে দেশীয় ম্যাসেজিং অ্যাপ ‘আলাপন’ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বরিশালের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী এর উদ্বোধন করেন। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের শুরুতে আইওএস এবং গুগল প্লে-স্টোরে অ্যাপটি অবমুক্ত করা হয়।
পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা নিজেরা এই অ্যাপের মাধ্যমে আলাপ করতে পারবেন, ভাইবারের মতো অনেকটা।
সরকারি কর্মকর্তারা নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও পে-স্কেলে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর দিয়ে বিনামূল্যে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে পারবেন। এই অ্যাপের মাধ্যমে সরকারের যে কোনো কর্মকর্তা যে কোনো জায়গা থেকে একক বা গোষ্ঠীগত চ্যাটিং, ভয়েস ও ভিডিও কল, গ্রুপ কনফারেন্স ছাড়াও নথি আদান-প্রদান করতে পারবেন; সেইসঙ্গে কর্মকর্তাদের অবস্থানও জানা যাবে। আলাপন অ্যাপের অ্যাডভান্সড সার্চ অপশনে গিয়ে যে কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতাধীন যে কোনো কর্মকর্তার মোবাইল নম্বরও সংগ্রহ করা যাবে।
সরকারি কর্মকর্তাদের আন্তঃযোগাযোগের মাধ্যমে নিরাপত্তা যাতে সহজেই কেউ বিঘিœত করতে না পারে সেজন্য এই অ্যাপে আধুনিক সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে।এই ধরনের অন্যান্য অ্যাপের চেয়ে আলাপনে কম ব্যান্ডউইডথ, কম চার্জ ও কম স্পেসের প্রয়োজন হবে বলে এটিকে ‘অনন্য অ্যাপ’ বলা হয়েছে। আলাপন অ্যাপ ব্যবহারে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া অন্য কোনো খরচ না হওয়ায় সরকারের অর্থ সাশ্রয় হবে। সরকারি কর্মকর্তাগণ তাদের জাতীয পরিচয়পত্র নম্বর এবং পে-স্কেলে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর দিয়ে এই অ্যাপটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করতে পারবে।
কামরুল-মোজাম্মেল মন্ত্রিসভার বৈঠকে
সর্বোচ্চ আদালতের চোখে সংবিধান রক্ষার শপথ ভঙ্গকারী খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মন্ত্রিত্বের বৈধতা নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে এই দুই মন্ত্রী প্রথমবার বৈঠকে যোগ দিলেন।
ফাঁসি কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর আপিল রায়ের আগে সর্বোচ্চ আদালতকে নিয়ে করা মন্তব্যের জন্য খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে সাজা দেয় সর্বোচ্চ আদালত। গত ২৭ মার্চ দেয়া ওই রায় গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। কামরুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হকের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, সংবিধানে বর্ণিত আইনের শাসন রক্ষার যে শপথ বিবাদীরা নিয়েছেন, সেই দায়িত্বের প্রতি তারা অবহেলা করেছেন। তারা আইন লঙ্ঘন করেছেন এবং সংবিধান রক্ষা ও সংরক্ষণে তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন। এদিকে আদালতের ওই রায়ের পরও তারা পদে থাকায় হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।
আব্দুর রহিমের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভার শোক :
দিনাজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এম আব্দুর রহিমের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে এই শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুর রহিম (৯০) গত রোববার মারা যান। তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের বাবা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কনস্টিটিউশন এসেম্বিলে থাকা এম আব্দুর রহিম ইন্তেকাল করেছেন। উনার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য একটি শোক প্রস্তাব মন্ত্রিসভা গ্রহণ করেছে।
ইটভাটা আইন প্রত্যাহার :
‘ইটপ্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) আইন, ২০১৬’ মন্ত্রিসভা বৈঠকে উঠলেও তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান। তিনি বলেন, আইনটি প্রত্যাহার করে নেয়ায় এটা নিয়ে আর আলোচনা হয়নি। প্রি-ম্যাচিউরড মনে করে এটাকে প্রত্যাহার করে পরে আনতে বলা হয়েছে। যে আইনটা আনা হয়েছে এর প্রায় সব বিষয়ই আগের আইনে আছে। খুব অল্প কয়েকটি সংশোধন। আরেকটু বড় পরিসরে পরীক্ষা করে নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন