শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সর্বত্র ওড়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তান দিবস বর্জন করে স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ আহূত ‘প্রতিরোধ দিবস’ এবং ন্যাপ (ভাসানী) আহূত ‘স্বাধীন পূর্ববাংলা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয় সারাদেশে। যদিও শেখ মুজিবুর রহমান দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব দিবস’ হিসেবে পালন করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং সে অনুযায়ী তিনি সারা বাংলায় এদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছিলেন।

আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যদের সামরিক কায়দায় অভিবাদনের মধ্যদিয়ে সকালে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে তার হাতে তুলে দেয়া হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। এসময় শেখ মুজিব সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, বাংলার মানুষ কারো করুণার পাত্র নয়। আপন শক্তির দুর্জয় ক্ষমতা বলেই আপনারা স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনবেন। বাংলার জয় অনিবার্য।

পাকিস্তান দিবসে ঢাকায় রমনা প্রেসিডেন্ট হাউজ, দিলকুশা গভর্নর হাউজ, ঢাকা বিমানবন্দর, সামরিক আইন প্রশাসকের দফতর ও ক্যান্টনমেন্টগুলো ছাড়া বাংলাদেশে আর কোথাও পাকিস্তানের পতাকা ওড়েনি।

ঢাকায় সেক্রেটারিয়েট ভবন, হাইকোর্ট ভবন, পরিষদ ভবন, ইপিআর সদর দফতর, রাজারবাগ পুলিশ সদর দফতর, ঢাকা বেতার ভবন, ঢাকা টেলিভিশন ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টেলিফোন ভবন, হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল, প্রধান বিচারপতি ও মুখ্য সচিবের বাসভবনসহ সমস্ত সরকারি-বেসরকারি ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলা হয়। হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাধা দিলে ছাত্র-জনতা তা উপেক্ষা করে পতাকা তোলে।

অসহযোগ আন্দোলনের দ্বাবিংশ দিবসে মুক্তি পাগল মানুষ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জনতা লাঠি-বর্শা-বন্দুকের মাথায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে শেখ মুজিবের বাসভবনের জমায়েত হতে থাকে। ‘জয় বাংলা’, ‘তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘জাগো জাগো বাঙালী জাগো’, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা’ শ্লোগানে মুখরিত ছিল সেদিনটি।

জনতা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো ও জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কুশপুত্তলিকা দাহ করে।

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও প্রাক্তন বাঙালী সৈনিকদের সমন্বয়ে গঠিত জয় বাংলা বাহিনীর আনুষ্ঠানিক কুজকাওয়াজও মহড়া আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। কুজকাওয়াজ এবং মহড়া শুরুতে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি এবং সামরিক কায়দায় অভিবাদনের মধ্যদিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়। এ সময় রেকর্ডে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি বাজানো হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও কামাল হোসেন প্রেসিডেন্টে উপদেষ্টা বিচারপতি এ.আর. কর্নেলিয়াস, লে. জেনারেল পীরজাদা, এম.এ.আহমেদ কর্নেল হাসানের সঙ্গে দুই দফায় দুইঘন্টা স্থায়ী বৈঠকে মিলিত হন। সকালে উপদেষ্টা বৈঠকে আওয়ামী লীগ ৬ দফার ভিত্তিতে একটি খসড়া শাসনতন্ত্র উপস্থাপন করে যা নিয়ে উপদেষ্টাদের মধ্যে বিকেলেও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের জাতীয় দিবসের বেতার ভাষণ বাতিল করে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সেনানিবাসে গিয়ে সেনাকর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। ধারণা করা হয় এদিন ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এবং সামরিক কার্যক্রম পরিকল্পনার চূড়ান্ত করা হয়।

বিকালে জাতীয় পরিষদের সংখ্যালঘিষ্ঠ দলের নেতৃবৃন্দ শেখ মুজিবের সাথে তার বাসভবনে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে মুসলিম লীগ (কাউন্সিল) প্রধান, জমিয়তে ওলামায়ে প্রধান, পাঞ্জাব কাউন্সিল প্রধান ও বেলুচিস্তান ন্যাপের সভাপতি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দ অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চাই দেশের মঙ্গলের জন্য সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি হয়ে যাক। এ সময় শেখ মুজিব বলেন, আপনারা ভালো কামনা করুন, কিন্তু খারাপের জন্যও প্রস্তুত থাকুন।

বিকেলে রংপুরের সৈয়দপুরে সেনাবাহিনী ও গ্রাসবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী সৈয়দপুর শহরের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে কারফিউ জারি করে।

চট্টগ্রাম প্যারেড গ্রাউন্ডে অধ্যাপক আজিজুর রহমান মল্লিকের সভাপতিত্বে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন সৈয়দ আলী আহসান, আব্দুল করিম, আর আই চৌধুরী, আনিসুজ্জামান, জহুর আহমদ চৌধুরী, প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন মমতাজউদ্দিন আহমদ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন