শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চারলেন হচ্ছে

প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

একনেকে ১২৮৯৪ কোটি টাকার ৭টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন
বিশেষ সংবাদদাতা : স্বপ্নপূরণ হতে যাচ্ছে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের। বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা থেকে উত্তরের পথে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল হয়ে রংপুরের বুড়িমারী পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণসহ ৭টি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় প্রকল্পটির। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা
এ সব প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৮৯৪ কোটি ১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৩৬৮ কোটি ৯ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৯ হাজার ৫২৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা যোগান দেয়া হবে। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়কটি জাতীয় মহাসড়কের অংশ। এটি চারলেনে উন্নীত হলে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সাথে যানবাহন চলাচল বাড়বে। এ ছাড়া এটি ব্যবহার করে পরবর্তীতে বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারত ও নেপাল এবং বুড়িমারী দিয়ে ভারত ও ভুটানের সাথে উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে। আঞ্চলিক আন্তঃযোগাযোগের অংশ হওয়ায় সড়কটি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নির্মাণ করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি জানান, সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) করিডোর ৪ ও ৯-এর জন্য এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া এ সড়ক এশিয়ান হাইওয়ে-২, বিমসটেক-২ এবং সার্ক হাইওয়ে করিডোর-৪ এর সঙ্গে যোগাযোগের উন্নয়ন ঘটাবে।
মন্ত্রী জানান, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালের কাছে প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে রংপুরের বুড়িমারী পর্যন্ত সড়কে ৮০টি ‘বাস-বে’ নির্মাণ করা হবে। যেন এসব এলাকায় কোনো ধরনের জটলা তৈরি না হয়, এড়ানো যায় অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা।
উন্নত দেশগুলোর মতোই আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে এ চারলেনে। প্রকল্পের আওতায় এ সড়কের দু’পাশে ধীরগতিসম্পন্ন যানবাহনের লেনও তৈরি করা হবে, যার ফলে এটি ছয়লেনে প্রশস্ত হবে। এর পাশাপাশি মহাসড়কে ২ হাজার ৬৩৫ মিটারের তিনটি ফ্লাইওভার, ৪১১ মিটারের একটি রেলওয়ে ওভারপাস, ৩২টি ব্রীজ, ১৬১টি কালভার্ট, ১১টি পথচারী ওভারপাস, ৩৯টি আন্ডারপাস এবং একটি ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৮৮১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দেবে ৯ হাজার ৩৩৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বাকী ২ হাজার ৫৪১ কোটি ২১ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে। সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে আগস্ট ২০২১ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
চট্টগ্রাম শহর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঃ
চট্টগ্রাম শহর থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একনেক সভায় সংশ্লিষ্টদের একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নির্দেশ দেন। এছাড়া সড়কের পাশে শিল্পনগরী না করারও নির্দেশ দিয়েছেন।
একনেক সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম শহর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের লক্ষ্যে আপনারা প্রকল্প নিয়ে আসেন। আমাদের অর্থ সংস্থানের কোনো সমস্যা নেই। সৌদি আরব, চীন, ইংল্যান্ডসহ অনেক দেশ এসব কাজে অংশীদার হতে চায়।
২০৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরীর সিরাজউদ্দৌলা রোড থেকে শাহ আমানত ব্রিজ সংযোগ সড়ক পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (বাকলিয়া এক্সেস) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।
সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, চট্টগ্রাম শহরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প গ্রহণ করতে বলেছেন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ভিত্তিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। যারা বিনিয়োগ করবেন ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে টোলের মাধ্যমে টাকা তুলে নেবেন, এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্যান্য প্রকল্পসমূহ হলোÑ ২০৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা ও রংপুরস্থ আবহাওয়া রাডারের উন্নয়ন প্রকল্প, ২২৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প, ২১৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বিসিক বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও হালকা প্রকৌশল শিল্পনগরী প্রকল্প, ৭৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রাউজান শিল্পনগরী প্রকল্প, ২০৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরীর সিরাজউদ্দৌলা রোড থেকে শাহ আমানত ব্রীজ সংযোগ সড়ক পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (বাকলিয়া এক্সেস) প্রকল্প এবং ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা জেলার পানিবদ্ধতা নিরসনকল্পে ভদ্রা ও সালতা নদী পুনঃখনন প্রকল্প।
উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি সার্টিফিকেট সনদপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হবে না, এটি তরুণদের তথ্য-প্রযুক্তির বিষয়ে দক্ষতা তৈরিতে কাজ করবে। আন্তর্জাতিক বাজারে আইটি পণ্য ও সেবা রফতানিতে বাংলাদেশের যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে তা কাজে লাগাতে প্রকল্পটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
একনেক সভায় বন্যা পরিস্থিতির বিষয়টি উঠে আসে। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সময়ে ঘরবাড়ি নির্মাণসহ পুনর্বাসন করতে হবে। আগামীতে যাতে করে বন্যা দুর্গতদের সহায়তা করা যায় সে লক্ষ্যে আপদকালীন অর্থ হাতে রাখতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন কিছুটা বেড়েছে। এসময়ে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ৩ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাসে বাংলাদেশের সাধারণ মূল্যস্ফীতি কমেছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের অগাস্টে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের এই মাসে ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর চলতি বছরের জুলাইতে অর্থাৎ আগের মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
akhassan ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ৪:১০ এএম says : 0
ita a dream motor way for indias
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন