ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে করা বিক্ষোভে ঢাকা, হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে সংগঠনের নেতাকর্মীদের হতাহতের ঘটনায় গতকাল সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এছাড়া আজ সারা দেশে হরতালের ডাক দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। হরতালকে সফল করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। হারতালে বাধা দিলে সরকার পতনের ডাক দেয়ার হুমকিও দিয়েছেন শীর্ষ নেতারা।
এদিকে, গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহিৃত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়াও গত শুক্রবারের হামলার ঘটনায় গতকাল রাজধানীর উত্তরা, বায়তুল মোকাররম, সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
একই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ভাসানী অনুসারী পরিষদ। সমাবেশের প্রধান অতিথি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রেসক্লাবে প্রবেশ করার সময় পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদ ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদ সভায় অংশগ্রহণকারীরা। ফলে দু’পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে প্রেসক্লাব এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশের সাথে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের উপর হামলা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সমাবেশের মাঝামাঝি সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের বাদানুবাদ শুরু হয় এবং উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সমাবেশ শেষে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক প্রেসক্লাবে প্রবেশ করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা অন্তত ১০ জনকে পুলিশ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। বিক্ষোভ-সমাবেশে আরও অংশ নেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী প্রমুখ। পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে দুই-তিনজনকে আটক করেছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী সময় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরবর্তীতে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘হেফাজতের এই যে সারা দেশে মৃত্যু হয়েছে এটা একটি পরিকল্পিত হত্যা। এরা যারা মারা গেছেন, তাদের ভারত পাকিস্তানি কায়দায় নতুন প্রজন্মকে স্তব্ধ করে দিচ্ছেন। এই যে হত্যা করেছেন, তাদের শহিদের মর্যাদা দেবেন। হাশরের দিন আপনি কী উত্তর দেবেন, সেই উত্তর তৈরি করেন।’
হেফাজতের হরতাল নিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, হরতাল ডাকা আমাদের মৌলিক অধিকার। আমাদের সেই শান্তিপূর্ণ হরতালে আপনারা বাধা দেবেন না। আমি মনে করি, আমাদের সবারই উচিত এই হরতালকে সমর্থন করা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ করে জাফরুল্লাহ বলেন, শান্তিপূর্ণ একটা সমাবেশ। পুলিশ ভাইদের কাজ হলো শান্তি রক্ষা করা। এখানে কোনো উচ্ছৃঙ্খল জনতা নেই। তাই আপনারা আইনশৃঙ্খলার জন্য চুপচাপ দাঁড়ায় থাকেন। তাই আপনারা এখান থেকে কাউকে ধরে নিয়ে যাবেন না।
মালিবাগের যাত্রীবাহী বাসে আগুন : গতকাল দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ রেলক্রসিং এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। হাতিরঝিল থানার এসআই আবদুল আলিম জানান, অনেকে আতঙ্কে গাড়ির জানালা ভেঙে রাস্তায় ঝাঁপ দিতে গিয়ে সামান্য আঘাত পেলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এটা নাশকতা না দুর্ঘটনা এ ব্যাপারে তদন্ত করছে পুলিশ। কীভাবে আগুন লাগে তা জানা যায়নি। তবে গাড়ির লোকজন পুলিশের সহায়তায় আগুন নিভিয়ে ফেলে। এ ঘটনায় এলাকায় আতংক রয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সকাল সোয়া ১১টার দিকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর পাশের সিঁড়িতে অবস্থান নেন। দুপুর ১২টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। আয়োজিত বিক্ষোভ-সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরের সহ-সভাপতি ও খেলাফত মজলিশের শায়খুল হাদিস মামুনুল হক বলেন, আমাদের কর্মসূচিতে যদি সন্ত্রাসী পেটোয়া বাহিনী হামলা করে বা বাধা দেয়; যদি সন্ত্রাসের ভয়াল রাজত্ব কায়েম রাখার চেষ্টা করে তবে গোটা বাংলাদেশে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে, তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে। আর এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।
মামুনুল হক বলেন, চট্টগ্রামে গত শুক্রবার আমাদের চারজন ভাই শহীদ হয়েছেন। তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আহতদের পথে পথে হামলা করা হয়েছে। আমাদের আহত সন্তানরা চিকিৎসা পর্যন্ত পায়নি। যে কারণে সারা দেশে বিক্ষোভ হচ্ছে। রোববার টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সারা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন যে এমন বিষাদময়, দুঃখজনক হবে তা ভাবিনি। আমাদের সন্তানদের রক্তে মানচিত্র রক্তাক্ত হয়েছে। আমরা কেউ তা চাইনি। আমরা শুরু থেকেই নরেন্দ্র মোদিকে এনে সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানকে কলঙ্কিত না করার জন্য সরকারকে সতর্ক করেছিলাম। তাকে বাংলাদেশে আনতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু জানি না সরকার কোন দায়ে দায়বদ্ধ হয়ে তাকে আনলেন।
মামুনুল বলেন, জনতার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, জনতা রাজপথে নেমে এলে হেলমেট বাহিনী আর পালানোর জায়গা খুঁজে পাবে না। তিনি বলেন, আমরা সুবর্ণজয়ন্তীর উদযাপনের প্রতি সম্মান রেখে কোনো কর্মসূচি দেইনি। কিন্তু বিনিময়ে আমরা কী পেলাম? রক্ত আর লাশ। বাধ্য হয়ে হেফাজত আমির কর্মসূচি দিয়েছেন, রাজপথে নেমে এসেছেন। আজ যদি আবারও হেলমেট পেটোয়া বাহিনী এভাবে বাধা দেয়, সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা করে তবে সারাদেশের সব শ্রেণির মানুষ রাজপথে নেমে আসবে।
দলের মহানগর সহ-সভাপতি আহমেদ আলী কাশেমী বলেন, এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। হরতালে বাধা দেয়া হলে সরকার পতনের ডাক দেয়া হবে।
উত্তরায় বিক্ষোভ : চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নেতাকর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ঢাকার উত্তরায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। গতকাল সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন মালেকা বানু স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এ কর্মসূচি শুরু হয়। বিক্ষোভ-সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের উত্তরা জোনের আমির মাওলানা নাজমুল হাসান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতের ঢাকা মহানগরের আমির জোনায়েদ আল হাবিব।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, নগরীতে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে হেফাজতে ইসলাম। বাদ জোহর নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে সমাবেশ থেকে আজ রোববার চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সর্বাত্মক সকাল-সন্ধা হরতাল সফল করার আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশে হেফাজত নেতারা বলেন, মোদিবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশ নির্বিচারে ৫ জনকে হত্যা করেছে। তাদের প্রতি ফোটা রক্তের বদলা নেওয়া হবে। হরতালে বাধা দিয়ে তার প্রতিহত করা হবে। মহানগর হেফাজতের সভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামবাদীসহ হেফাজত নেতারা বক্তব্য রাখেন। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল ওয়াসার মোড় থেকে সিনেমা প্যালেস মোড় হয়ে ফের জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে ফিরে আসে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশালে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে হেফাজত ইসলামী। বাদ আছর নগরীর বাজার রোড হজরত খাজা মঈন উদ্দিন চিসতি (র.) মাদরাসা থেকে হেফাজত ইসলামী মহানগর শাখা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি সদর রেডে টাউন হলের দিকে যেতে চাইলে নাজির পুল এলাকায় পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশ সেখান থেকে মিছিলকারীদের চলে যাওয়ার অনুরোধ করে সামনে এগুতে বাধা দেয়। কিন্তু মিছিলকারীরা সব বাধা উপেক্ষা করে সেøাগান দিয়ে সামনে এগিয়ে যায়।
মিছিলকারীরা সদর রোডে টাউন হলের সামনে পৌঁছে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ সমাবেশে শেষ করে। এর আগে নগরীর বগুড়া রোডে চৈতণ্য স্কুল এলকায় হেফাজত ইসলামী জেলা শাখা মিছিল বের করলে পুলিশ তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এদিকে, বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে বরিশাল মহানগরীর নিরাপত্তায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
দিনাজপুর অফিস জানায়, হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশ দিনাজপুরের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। কড়া পুলিশি প্রহরায় দিনাজপুর ইনস্টিটিউট থেকে মিছিলটি বের হয়ে বাহাদুর বাজার মোড়ে পুলিশি বাধার মুখে থেকে যায়। এখানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জেলা শাখার আমির আল্লাম আজিজুল ইসলাম কাশেমী রোববারের হরতাল পালনের আহ্বান জানান।
স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী থেকে জানান, নরসিংদীতে হেফাজত ইসলামী বাংলাদেশ নরসিংদী জেলা শাখা বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পাশে নরসিংদী জেলখানা মোড়ে হেফাজতের নেতৃবৃন্দ ও সমর্থক উপস্থিত হয়। পরে সেখানে হেফাজত ইসলামী নরসিংদী জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ইসমাইল নুরপুরীর সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন মাওলানা রবিউল ইসলাম, মাওলানা আমান উল্লাহ, মাওলানা আব্দুল বারী ও মাওলানা আব্দুল বাছেদ। বক্তব্য শেষে বাদ আছর জেলখানা মোড় থেকে এক বিশাল মিছিল শুরু করে নরসিংদী শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে।
স্টাফ রিপোর্টার, চাঁদপুর থেকে জানান, চাঁদপুরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে জেলা হেফাজতে ইসলাম। বিকেলে শহরের শপথ চত্বরে বিক্ষোভ ছিল পূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা হেফাজতের সভাপতি মাওলানা লিয়াকত হোসাইন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, এদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের, হজরত শাহজালালের। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসে একজন খুনিকে প্রধান অতিথি হিসেবে দেশে আনা হয়েছে। বাংলার তৌহিদি জনতা কখনো তা মেনে নিতে পারে না। ভারত যতই শক্তিশালী হোক না কেন তৌহীদি জনতার কাছে ভারত কিছুই না। আমাদের শাহাদৎ বরণের প্রস্তুত থাকতে হবে। শুক্রবার যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। এতের প্রতিটি রক্তের ফোটা আমাদের বিজয় আনবেই। শুক্রবারের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যেসকল পুলিশ ভাইয়েরা গুলি করেছে, তারা আমাদের পুলিশ হতে পারে না। তারা ভিনদেশের পুলিশ।
জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক এস এম আনওয়ারুল করিমের পরিচালনায় অন্যান্যের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা হেফাজতে সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুফতি মো. সিরাজুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মুফতি মাহবুবুর রহমান, মাওলানা ইদ্রিস, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা আবুল হাসনাত, মাওলানা কবির আহমেদ ও মাওলানা আশেকে এলাহী প্রমুখ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালের সমর্থনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মিছিল হয়েছে। দুপুরে হেফাজতে ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্যোগে জামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসা চত্বর থেকে একটি মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক টি, রোড প্রদক্ষিণ করে। পরে ফকিরাপুলে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা মুফতি মোবারক উল্লাহসহ অন্যান্যরা। এ সময় বক্তারা, মোদির বাংলাদেশ সফরের নিন্দা জানান এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদরাসা ছাত্রদের উপর হামলা ও হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।
দাউদকান্দি (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা হেফাজত ইসলামের উদ্যোগে গতকাল দাউদকান্দি পৌর সদরে এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিবাদ সভায় বক্তব্যে রাখেন, দাউদকান্দি উপজেলা হেফাজত ইসলামের সভাপতি মাওলানা আনোয়ারউল্লাহ, সহ-সভাপতি মাওলানা আবু বকর, সহ-সভাপতি মাওলানা আবু ইউসুফ মুন্সী, সেক্রেটারি মাওলানা নজির আহমেদ, যুগ্ম সেক্রেটারি মাওলানা নজরুল ইসলাম ফয়েজী, সাংগঠনিক সম্পাদক, মাওলানা এমদাদ উল্লাহ, মাওলানা মুফতি মুজিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুর রহিম, মাওলানা মুফতি এনামুল হক প্রমুখ।
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নবীগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল করেছে হেফাজতে ইসলাম। বিকেলে নবীগঞ্জ শহরতলীর ওসমানী রোডস্থ দারুল উলুম মাদরাসা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এসময় নবীগঞ্জ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে থানা পয়েন্টে এসে পথসভায় মিলিত হয়। এসময় হেফাজতে ইসলাম নবীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি কাজী হারুনুর রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক মাওলামা শাহ আলম রবিবারের হরতাল সফল করতে সকল নেতাকর্মীকে মাঠে অবস্থান নেয়ার আহবান জানান। মিছিল চলাকালীন সময়ে নবীগঞ্জ শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা ভয়ে আতঙ্কে দোকানপাঠ বন্ধ করে দিকবিদিক ছুটাছুটি করতে দেখা যায়।
ঈশ^রগঞ্জ (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের নান্দাইলে বিক্ষোভ মিছিল করেছে হেফাজতে ইসলাম। বিক্ষোভে বাধা দেয় স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা। এতে বিক্ষোভ কারীরা ওই নেতাকমীদের উপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি খারাপ হলে পুলিশ মাইক দিয়ে দূরে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা উত্তেজনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। নান্দাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলার তাওহীদী জনতা। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর আব্দুল হামিদ পীর মধুপুরীর নেতৃত্বে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের কুচিয়ামোড়া কলেজ মাঠে সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশি বাধায় বড়বর্তা বালুর মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা বশির আহমেদ, সিরাজদিখান উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ কাসেমী, সেক্রেটারি মাওলানা মুফতি আবুল হোসেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ শ্রীনগর উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ইউনুস আহমেদ, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন হোসাইন আহমেদ ইছাকি, নিমতলা মাদরাসার মাওলানা জিয়াউল হক কাছেমী প্রমুখ। সমাবেশে মধুপুর পীর বলেন, গত শুক্রবার বাংলাদেশে যে ঘটনা ঘটেছে সরকার এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমাদের ৫ জন ছাত্রভাইদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আপনারা যদি শান্তিতে থাকতে চান তাহলে শান্তিপূর্ণ মিছিলে বাধা দিবেন না। আর কত মায়ের বুক খালি করবে। সমাবেশে দেশ ও জাতির শান্তি কামনা ও শহীদ ছাত্রদের জন্য দোয়া করা হয়। সমাবেশের আগে মধুপুর মাদরাসা থেকে একটি মিছিল মধুপুর পীরের নেতৃত্বে কুচিয়ামোড়া ইকবাল মার্কেটে এসে শেষ হয়।
তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে আলেম-ওলামাদের এক প্রতিবাদ সমাবেশ উপজেলা সদরের দারুল হুদা কাছেমুল উলুম মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই মাদরাসার মুহতামিম শায়খুল হাদিস মাওলানা ফয়জুদ্দীনের সভাপতিত্বে ও দারুল কোরআন মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ এমদাদুল্লাহ্র পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে তাড়াইল সাচাইল দারুল হুদা কাছেমুল উলুম মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা ছাদেকুর রহমান, নাজেমে তালিমাত মাওলানা কাজী উদ্দিন, জাওয়ার ইমদাদুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা আইনুল ইসলাম, দামিহা আতহারুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা জুবায়ের আহমাদ, মোজাফরপুর লুৎফিয়া দারুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা বোরহান উদ্দিন, রাউতি আতহারুল উলুম হোসাইনিয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা এনামুল হক, হাফেজ মাওলানা ছাইদুর রহমান, মাওলানা বজলুর রহমান, মুফতি আবদুল কাদির, হাফেজ মাওলানা শফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে বক্তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে সারা দেশে আলেম-উলামাদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়ে হতাহতের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং হামলার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন