গাজীপুর সিটি করপোরেশনের রাস্তা সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ৮ শত কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ আছে ১৬১ কোটি টাকা। অথচ জমি অধিগ্রহণের টাকা পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের ১২ ওয়ার্ডের বাইপাইল-কাশেম কটন মিল রাস্তা ভায়া হয়ে কাদের মার্কেট পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্পে ১৪৮ জন জমির মালিকের ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এসব জমির ক্ষতিগ্রস্ত মালিককে টাকা না দিয়ে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ১৪৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তরা জমির ক্ষতিপূরণ চেয়ে উচ্চ আদালতে মামলাও করেছেন বলে জানা গেছে। এ কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এদিকে রাতের আঁধারে রাস্তা খুঁড়ে বড় বড় গর্ত করে মনির কনস্ট্রাশন নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। করোনাকালে রাস্তায় গর্ত থাকার কারণে কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটিড, কাশেম ল্যাম্পস লি:, হনবিল গার্মেন্টস, মেঘনা নিটিং কারখানাসহ অনেক শিল্প-কলকাখানার মালামাল সরবরাহ করতে পারছে না। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির অবস্থায় পড়ে থাকায় সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারছে না। এছাড়া গর্ত হওয়ার রাস্তার বালুতে এলাকার এবং মিল-কারখানার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সরকার সকল উন্নয়ন প্রকল্পে জমির মালিকদের জমি মূল্য দিয়ে কাজ শরু করে। কি কারণে গাজীপুরে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা দেয়া হচ্ছে না তা আমার জানা নেই। তারপরও এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ফোনে ইনকিলাবকে বলেন, আমার গাজীপুর সিটি করপোরেশনে অনেক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কোনো এলাকায় জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি, তা আমার জানা নেই। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে সকলেই টাকা পাবেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১২ ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্বাস উদ্দিন খোকন ইনকিলাবকে ফোনে বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন বিভিন্ন রাস্তা সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের বরাদ্দ রয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে আমার এলাকায় যাদের জমি রাস্তায় পড়েছে তাদের সকলকে বলেছি সিটি মেয়র বরাবরে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করতে। আবেদন যারা করবে তারা টাকা পাবে, যারা করবে না তারা ক্ষতিপূরণের টাকা পাবে না। টাকা না দিয়ে কাজ শুরু করা ঠিক কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর বলেন, এটা ঠিক নয়। তবে ঠিকাদার কাজ করছে তা আমার জানা নেই।
ফারুক হোসেন নামে একজন ভুক্তভোগি লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ২০১৯ সালের একনেক সভায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ শীর্ষক ৩৮২৮ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে সরকার। কিন্তু সিটি করপোরেশনের ১২ নং ওয়ার্ডের বাইপাইল-কাশেম কটন মিল রাস্তা ভায়া হয়ে কাদের মার্কেট রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ শুরু হলেও ১৪৮ জন মালিকের জমির টাকা না দিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলন ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি সিটি এলাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট, ড্রেন ও নর্দমা নির্মাণে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নগরীর শতাধিক বড় বড় রাস্তা ও ড্রেন ইতোমধ্যে নতুন করে নির্মাণ শুরু হয়েছে। তবে রাস্তার পাশের আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করে ময়লা ও পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পে হোটেল ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম ও জমির মালিক মিলন মিয়া বলেন, গত দুই বছর আগে হোটেলের সামনের জমি কেটে নিয়েছে রাস্তার জায়গার মধ্যে নেয়া হয়েছে। তখন কাউন্সিলর বলেছিলেন, আবেদন করো টাকা দিবে। আগের টাকা না দিয়ে এবার আবারো রাস্তার কাজ রাতের অন্ধকারে শুরু করছে।
জানা গেছে, ৩২৯ বর্গকিলোমিটারের আয়তনে দেশের সর্ববৃহৎ সিটি করপোরেশন গাজীপুর। সিটি করপোরেশন এলাকাকে ৫৭টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। ১৯২টি মৌজার সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক এলাকা নিয়ে জিসিসি গঠন করা হয়। একদিকে যেমন আবাসিক বাড়িঘর অন্যদিকে প্রচুর শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে গাজীপুর সিটি এলাকায়। এর ফলে গাজীপুর সিটির প্রতিটি রাস্তায় দৈনন্দিন শত শত ভারী যানবাহন চলাচল করছে। এতে প্রতিনিয়তই রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এদিকে কোনাবাড়ি থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত অনেক শিল্প কলকারখানার মালিক রাস্তা ভাঙা-বড় বড় গর্ত থাকার কারণে কোম্পানির উৎপাদিত মালামাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করতে পারছে না। আবার রাস্তা ভালো করার জন্য অনেক কোম্পানির মালিক জেলা প্রশাসক ও থানায় সাধারণ অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন