ঈদ সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় চোরাইভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালামাল আসছে
স্টাফ রিপোর্টার : চোরাই পথে ভারত থেকে অবাধে আসছে ভারতীয় পণ্য। অবৈধ পথে শুল্ক না দিয়ে প্রতি মাসে কয়েকশ’ কোটি টাকার মালামাল আসছে। তবে ঈদকে সামনে রেখে চলছে রমরমা চোরাই পণ্য বাণিজ্য। পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। সীমান্ত এলাকার স্থানীয় লোকজন বলছেন, কথিত কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও থেমে নেই সীমান্তের চোরাচালান। তারা বলছেন, এবার ঈদকে সামনে রেখে ভারত থেকে গরু কম আসছে, তবে ভারতীয় শাড়ী, থ্রি-পিস, কসমেটিকস এবং মসলাসহ ভারতী পণ্য আসছে প্রচুর। ভারতীয় এসব চোরাই পণ্যের দখলে চলে গেছে বাংলাদেশের বাজার। বলা চলে অনেকটা অরক্ষিত হয়ে পড়ছে দেশের সীমান্ত এলাকা।
বিভিন্ন সূত্র মতে, দেশের বেনাপোল বন্দর দিয়েই বৈধ পথে সিংহভাগ পণ্য বাংলাদেশে আসে। কিন্তু এ বছর অবস্থা খুবই খারাপ। শুল্ক না দিয়ে চোরাই পথে পণ্য আমদানির কারণে বেনাপোল শুল্ক বন্দরের রাজস্ব আদায়ও বিপর্যয়ের মুখে। বেনাপোল শুল্ক কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, অবৈধ আমদানি বন্ধে কড়াকড়ির কারণে চোরাচালান চক্র ভিন্ন কৌশল নিয়েছে। তারা বিভিন্ন অরক্ষিত সীমান্ত এলাকা দিয়ে শুল্ক না দিয়েই পণ্য আমদানি করছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে।
অভিযোগ উঠেছে, কমপক্ষে ১২ জেলার সীমান্তে নিয়োজিত কতিপয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে চোরাচালানি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে ভারতীয় পণ্য আনছে। ঈদকে সামনে রেখে এ সিন্ডিকেট এখন আরও সক্রিয়। দেদারসে দেশে ঢুকছে ভারতীয় পোশাক। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দুই মাস আগ থেকেই ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিসসহ বিভিন্ন ঈদ পণ্যের মজুদ করেছে। বেনাপোল বন্দরে কড়াকড়ি হওয়ার পর পাচারকারী চক্র বিজিবির কিছ অসাধু সদস্যকে ম্যানেজ করে বিজিবির ২১ নং ব্যাটালিয়নের অধীন কয়েকটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাই পথে ভারতীয় পণ্য নিয়ে আসছে। বিশেষ করে দৌলতপুর, অগ্রবুলোট, গোঘা এবং কুটখালি সীমান্ত পয়েন্ট ব্যবহার করে প্রতি মাসে শত কোটি টাকার বেশি ভারতীয় পণ্য অবাধে দেশে প্রবেশ করছে। ফলে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকার শুল্ককর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চোরাই পথে আসা ভারতীয় পণ্যের মধ্যে রয়েছেÑ শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট ও প্যান্টের থান কাপড়, ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, ব্যাকপাইবার হুইস্কি, রিকোডেস্ক, বিয়ার, মোটর সাইকেল, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, গরু মোটা-তাজাকরণের স্টেরয়েড ট্যাবলেট, হলুদ, জিরা, এলাচি, দারুচিনি, গোলমরিচসহ যাবতীয় মসলা, মুভ, ইসগার্ড, লিভ ৫০২, রিভাইটেল, সেনেগ্রা, ভায়াগ্রা, এডিগ্রা, ডক্টরেট, পেয়ার এন্ড লাভলিসহ বিভিন্ন কসমেটিকস্। এসব চোরাই মালামালের কিছু কিছু মাঝে মধ্যে বিজিবি আটক করলেও পরবর্তীতে কাস্টমসে জমা দেয়ার আগে বেশিরভাগই পেছনের দরজা দিয়ে চলে যায় চোরাই সিন্ডিকেটের হাতে। এ অভিযোগ স্থানীয়দের।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ উপলক্ষে এ বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। এর ৮০ ভাগই ভারত থেকে এসেছে। কিন্তু এসব পণ্য বৈধপথে আসেনি। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে ঢুকছে ভারতীয় পণ্য। আর এসবের মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে হু-িতে। এভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় পণ্যের অবৈধ আমদানির কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় শিল্পোৎপাদন। অবৈধ পথে আমদানিকারকদের শুল্ক পরিশোধ করতে হয় না। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, ভারত-বাংলাদেশের শক্তিশালী একাধিক সিন্ডিকেট এ কাজে জড়িত। রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় ভারতীয় পণ্য এ দেশে বাজারজাতকরণে তাদের খুব একটা বেগ পেতে হয় না।
ব্যবসায়ীরা জানান, চোরাই পণ্য বিক্রিতে লাভ বেশি। শুল্ক ছাড়া এসব পণ্যের বাজার মূল্য অনেক কম থাকে। এ কারণে দেশীয় উৎপাদনমুখী শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারতীয় পণ্যের কাছে মূল্য ও মানে অনেক দেশীয় পণ্য মার খাচ্ছে। এ ছাড়া বৈধপথে আমদানিকারকরাও এতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। বেশি লাভজনক হওয়ায় বৈধ আমদানির চেয়ে অবৈধ আমদানির দিকেই ঝুঁকছেন তারা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজধানীর প্রতিটি ছোট-বড় শপিংমল, মার্কেট, বিপণি বিতান এখন ভারতীয় পণ্যের দখলে। লাখ টাকা দামের শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রি-পিস থেকে শুরু করে সব বয়সীদের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, জুতা, সেন্ডেল প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। বাহারি নামের এসব পোশাকের চাহিদা ও লাভ অনেক বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য মজুদ ও বিক্রিতে বেশি আগ্রহী। রাজধানীর বাইরেও প্রতিটি জেলা শহরে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পণ্য। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসা এসব পণ্যের আগ্রাসনে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় শিল্প। সরকার হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব।
জানা গেছে, বছরজুড়েই চোরাই পথে দেশে ঢোকে প্রায় শতাধিক ভারতীয় পণ্য। এর মধ্যে রয়েছেÑ পোশাক, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক্স, বিভিন্ন মশলা জাতীয় পণ্য, শিশুখাদ্য, শুঁটকি, চিনি, মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ইত্যাদি। তবে ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় কাপড় (ফেব্রিক্স), শাড়ি, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা, ওড়না, শাল, পাঞ্জাবি, শার্ট, জুতা, সেন্ডেল ও বিভিন্ন কসমেটিকস্রে চোরাচালান এখন তুঙ্গে। এদিকে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় মাঝে মাঝে কিছু চোরাচালান জব্দ করা হলেও যে পরিমাণ পণ্য পাচার হয় তা তার এক সিকি ভাগও নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ রয়েছে, সীমান্তে নিয়োজিত কতিপয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে চোরাচালানি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে এসব পণ্য আনছে।
বিভিন্ন সীমান্তের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বেনাপোল, হিলি ও সোনা মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বৈধপথে তৈরি পোশাক ও তৈরি পণ্যের আমদানি প্রায় শূন্যের কোঠায়। এ ছাড়া বৈধপথে পণ্য আনতে খরচের পাশাপাশি সময়ও কয়েকগুণ বেশি লাগে। তাছাড়া নানা রকম হয়রানিও পোহাতে হয়। অন্যদিকে চোরাই পথে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ঘরে বসে পণ্য পেয়ে যান ব্যবসায়ীরা। ঈদ উপলক্ষে চোরাচালানি সিন্ডিকেট বাকিতেও পণ্য সরবরাহ করছে। দেশের যে কোনো স্থানে তারা নিজ দায়িত্বে মালামাল পৌঁছে দিচ্ছে। এসব কারণে বৈধপথে পণ্য আসা কমে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লার বিবিরবাজার ও শশীদল এলাকার একাধিক চোরাকারবারী জানান, শুল্ক দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করলে দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পড়ায় ব্যবসায়ীরা চোরাকারবারীদের দিকেই ঝুঁকছে। পাচারকারী সিন্ডিকেট মাত্র কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পণ্য কলকাতা থেকে বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে মাত্র তিন থেকে চার দিনে। গুদাম ঘরে পণ্য পৌঁছে দেয়ার পর টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে সিন্ডিকেট এখন বাকিতেও পণ্য সরবরাহ করছে। ভারতীয় মহাজনরাও বাকিতে কোটি কোটি টাকার শাড়ি, থ্রি-পিস সরবরাহ করছে। এ ছাড়া লাগেজ ব্যবসায়ীরাও এসব পণ্য নিয়ে আসছে নির্বিঘেœ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ঈদকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তের ৮টি রুট দিয়ে চোরাচালানীরা ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিস, প্যান্ট পিস, থান কাপড়, জুতা সেন্ডেলসহ বিভিন্ন কসমেটিকস্ বিজিবি-পুলিশ ও কাস্টমসকে ম্যানেজ করে নিয়ে আসছে অবাদে। ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ও ছত্রছায়ায় বিজিবি-পুলিশ-কাস্টমসের নিয়োগ করা লাইনম্যানরা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে চোরাচালানীদের এসব মালামাল নিরাপদে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সার্বিক সহযোগিতা করছে। স্থানীয়ভাবে এসব চোরাচালানীদেরকে লাগেজ পার্টি বলা হয়।
কতিপয় বিজিবি, পুলিশ ও কাস্টমসের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেদের আখের গোছালেও সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। অন্যদিকে ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দিকে অবৈধ পথে ঢোকা এসব পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে পড়ছে রুগ্ন আর বন্ধ।
দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্ত থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন রুটের রেলপথ ও সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় খুব অল্প সময়েই চোরাচালানীদের কাছে এই উপজেলার সীমান্ত পথগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।
গত ১৫ জুন ও ২০ জুন চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবি’র সদস্যরা পৃথক অভিযান চালিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকার ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিস, থান কাপড়সহ বিভিন্ন কসমেটিকস্ আটক করতে সক্ষম হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, লাগেজ পার্টির মূল মালিক বা মহাজনরা অধিকাংশই ঢাকা, পোড়াদহ ও ঈশ্বরদীর। এরা বৈধপথে কলকাতায় গিয়ে লাখ লাখ টাকার শাড়ি, থান কাপড় ও থ্রি-পিস ও কসমেটিকস্ কিনে ভরতের সীমান্তবর্তী এলাকার নির্দিষ্ট ব্যক্তির হেফাজতে রেখে আসে। পরে সময় সুযোগ বুঝে ভারত ও বাংলাদেশের দালালরা কমিশনের মাধ্যমে ওইসব মালামাল ৫০০ টাকা জোন (লেবার/কামলা) হাজিরায় পুরুষ ও মহিলারা সড়ক ও রেলপথে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেয়।
দামুড়হুদা উপজেলার নীমতলা, দর্শনা চেকপোষ্ট জয়নগর, বাড়াদি, চাকুলিয়া, ফুলবাড়ী, ঠাকুরপুর, মুন্সিপুর, হুদাপাড় দিয়ে ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিছ, প্যান্ট পিছ, থান কাপড়, জুতা স্যান্ডেল ও বিভিন্ন কসমেটিকস্ নিয়ে আসছে চোরাচালানীরা। আর টাকার বিনিময়ে এসব অবৈধ মালামালের অলিখিত বৈধতা দিচ্ছে কতিপয় অসৎ বিজিবি-পুলিশ-কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারী। এসব সীমান্তে বিজিবি, পুলিশ ও কাস্টমস্’র টাকা তোলার জন্য সরকার দলীয় কতিপয় নেতাকর্মীর ছত্রছায়ায় নিয়োগ করা লাইনম্যান রয়েছে। এরা হলো দর্শনা চেকপোষ্ট জয়নগরের বিজিবির লাইনম্যান বাবলু ওরফে জামাই বাবলু, নাসির পুলিশের কুরবান, ইজা কাস্টমসের মমিন ও ডিএসবির কুলি আলী টাকা তোলে। লাগেজে প্রতি বিজিবি নামে তোলা হয় ৩ হাজার টাকা, পুলিশের নামে ১ হাজার ২ শত ৫০ টাকা, কাস্টমসের নামে ১ হাজার ৫ শত টাকা ও ডিএসবি পুলিশের নামে ১ শত টাকা।
এই চেকপোষ্ট দিয়ে চোরাইপথে প্রতিদিন ৫টি থেকে ৫০টি পর্যন্ত করে লাগেজ আসে। এই লাগেজ ভারত থেকে বড় ঢপে করে নিয়ে বাংলাদেশী সীমান্তবর্তী জয়নগর গ্রামে পৌঁছায়। পরে এখান থেকে ৫০০ টাকা জোন (লেবার/কামলা) হাজিরায় পুরুষ ও মহিলারা বস্তায় ভরে এসব শাড়ি, কাপড় ও থ্রি-পিস ও কসমেটিকস্ দর্শনা হল্ট স্টেশন নিয়ে ট্রেনযোগে এবং সড়ক পথে তা চোরাচালানীদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পুড়াদাহ, ঈশ্বরদী অথবা ঢাকায় পৌঁছে দেয়। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে পুড়াদাহে বসে দেশের বৃহত্তর শাড়ির হাট। তাই খুব সহজেই এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যায় অবৈধ পথে ভারত থেকে আনা এসব শাড়ি, থান কাপড় ও থ্রি-পিস। মালামালের মূল মালিকরা এখানে কেউ থাকে না। সম্পূর্ণ ব্যবসাটাই চলে বিশ্বাসের উপর কমিশনের মাধ্যমে। ব্যবসা করে। দর্শনা চেকপোষ্ট জয়নগর কমিশনের ব্যবসা করে বাবলু জামাই, কুলি আলী, শহিদুল কানা, করিম মোল্লা, জামসেদ, রহিদ, মহিদুল, শওকত, কুদ্দুসসহ প্রায় অর্ধশতাধিক চোরাচালানী।
এছাড়া মুন্সিপর সীমান্তে বিজিবি লাইনম্যান আকবর, ফারুক, শাহাবুদ্দিন পুলিশের হাকিম, কালু হুদাপাড়ার সীমান্তে বিজিবির বাবু, নাজমুল হক গ্যাগা পুলিশের উছমান ঠাকুরপুর সীমান্তে বিজিবির নামে কাইজার পুলিশের আব্দুল হাই, ফুলবাড়ী সীমান্তে বিজিবির নামে কালু, জলিল পুলিশের মিলন, চাকুলিয়া সীমান্তে বিজিবির নামে মনি, আরিফ পুলিশের নামে হাবিবুর, শমসের, স্বপন টাকা তোলে।
এখানে বিজিবি ১ শত পিছ শাড়ি ও থ্রি-পিসে নেয় ২ হাজার টাকা, পুলিশ ১ মাস চুক্তি ১ জন চোরাচালানী প্রতি ৫ হাজার টাকা। এখানে প্রায় শতাধিক সংঘবদ্ধ চোরাচালানী রয়েছে। এরা প্রতিনিয়ত সীমান্ত দিয়ে মালামাল নিয়ে আসে।
চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবি পরিচালক মোহাম্মদ আমির মজিদ বলেন, এই চোরাচালানীদের সাথে বিজিবির কোন সদস্য জড়িত আছে কি-না জানা নেই। তবে প্রশ্ন যখোন উঠেছে তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তে বিজিবি’র কোন সদস্য এই চোরাকারবারীদের সাথে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রশীদুল হাসানও বলেন, পুলিশের কোন সদস্য এই চোরাচালানের সহযোগিতা করে থাকলে তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজিবি’র সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসিন রেজা বলেন, সীমান্ত এলাকায় বিজিবি এখন খুবেই সতর্ক, কঠোরভাবে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করা হেেচ্ছ। সীমান্ত এলাকায় বিজিবি কঠোর অবস্থানে আছে। তিনি বলেন, বিজিবি প্রচুর চোরাইপণ্য প্রতি মাসেই জব্দ করছে। এসব মালামাল পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কাস্টমসে জমা দেয়া হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, জব্দকৃত মালামাল বিজিবি বিক্রি করে না। মাদকদ্রব্য আটক করার পর বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ধ্বংস করা হয়।
জাতীয় জাদুঘর থেকে সরানো হলো জিয়ার স্বাধীনতা পদক
বিশেষ সংবাদদাতা : বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক গতকাল বুধবার জাতীয় জাদুঘর থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সংস্কৃতি সচিব আকতারী মমতাজ সাংবাদিকদের এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ।
সংস্কৃতি সচিব বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা গতকাল বুধবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে গিয়ে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদকটি নিয়ে এসেছেন। এ বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, আজ সেটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের কর্মকর্তা ও জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের বৈঠকের পর জিয়াউর রহমানের ক্রেস্ট ও অন্যান্য জিনিসপত্র সরানোর কথা নেওয়া হয়। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদকটি জাদুঘরের স্টোরে সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু ওই বৈঠকের পর গতকাল বিকেলে সেটি সরিয়ে ফেলা হয়।
২০০৩ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানকে যৌথভাবে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জিয়াউর রহমানকে পদক দেওয়ায় তখনই তীব্র সমালোচনা করেছিল আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সম্প্রতি জিয়াউর রহমানকে দেওয়া ওই পদক বাতিলের সিদ্ধান্ত নয়।
****************
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন