সোহাগ খান : ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা সার্র্কুলারে শিল্পাঞ্চলসহ সকল তফসিলি ব্যাংকের কর্পোরেট শাখা খোলা রাখা হলেও স্বয়ং কেন্দ্রীয় ব্যাংকই তাদের কিøয়ারিং হাউজ বন্ধ রাখছে। যার কারণে গার্মেন্ট ব্যবসায়ীসহ সারাদেশে প্রায় লক্ষাধিক ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে মাঝারি ও ছোট মানের গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বেতন ভাতা না পেয়ে রাস্তায় নেমে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন প্রায় ২ শতাধিক মাঝারি গার্মেন্টস মালিক।
এক ব্যাংকের হিসাব থেকে অন্য ব্যাংকের হিসাবে টাকা স্থানান্তর করতে ক্লিয়ারিং হাউজ তথা নিকাশ ঘরের প্রয়োজন হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রণোদনা ও নিজেদের লেনদেনে স্বচ্ছতা আনতে দেশের প্রায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী চেকের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর করে থাকেন। আর এই অর্থের লেনদেন করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকাশ ঘর। কৃষি ভবনের প্রায় ৪৫ জন ঠিকাদার বাংলাদেশ মিলিটারি টুলস ফ্যাক্টরির মাধ্যমে ট্রাস্ট ব্যাংকের চেক পেয়েছে গতকাল (বৃহস্পতিবার) বেলা ২ টার পরে।
নিকাশঘর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঈদের ছুটির পর ছাড়া এসব চেকের অর্থ তারা হাতে পাবেন না। এতে সারাদেশে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করতে পারবে না ঠিকাদাররা। এক ঠিকাদার বলেন, আমাদের দেশের প্রচুর পরিমাণ উন্নয়নের কাজ হচ্ছে। এসকল কাজে সারাদেশে নিয়োজিত আছে প্রায় ১৫-২০ লক্ষ ঠিকাদার। ঠিকাদাররাই দেশের প্রকৃত উন্নয়নের অংশীদার। কোনো ঠিকাদারই একাউন্ট পে চেক ছাড়া বিলের অর্থ পায় না। আর এই বিলের অর্থ উত্তোলন করতে গেলে ক্লিয়ারিং হাউজের প্রয়োজন আছে। ঠিকাদাররা বছরে শত শত কোটি ট্যাক্স ও ভ্যাট প্রদান করলেও আমাদের গুরুত্ব কখনোই সরকার দেয় না। যদি গার্মেন্টস শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে শিল্পাঞ্চলের ব্যাংক খোলা রাখতে পারে, তবে আমাদের গুরুত্ব দিয়ে ক্লিয়ারিং হাউজ খোলা রাখতে তাদের অসুবিধা কোথায়।
কিøয়ারিং হাউজ বন্ধের ফলে বিপাকে পড়েছে অনেক গার্মেন্টস ব্যবসায়ীও। ছোট ছোট গার্মেন্টগুলোর পাওনা বড় বায়িং হাউজগুলো চেকে দিয়েছে। গতকাল বিজিএমই ভবন ঘুরে দেখা যায়, প্রায় দুই শতাধিক মাঝারি আকারের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ‘একাউন্ট পে’ চেক নিয়ে বড় ব্যবসায়ী ও শুভাকাক্সক্ষীদের জন্য অপেক্ষা করছেন চেক রেখে ধার অথবা সুদে টাকা নেয়ার জন্য।
এমনি একজন ব্যবসায়ী নারায়ণগঞ্জের সাহারুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জের বিসিকে অবস্থিত তার গার্মেন্টসের নাম সল্ট স্ট্যান্ড গার্মেন্টস। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, তার চার লাইনের নিটিং গার্মেন্টসে শ্রমিক রয়েছে প্রায় ৬০০ জন। গত ছয় মাস ধরে তিনি অনন্ত গ্রুপের সাব-কন্ট্রাকে কাজ করতেছেন। বৃহৎ এই গ্রুপের মালিক অভিনেতা অনন্ত জলিল। বর্তমানে তার ঐ গ্রুপে কাজের অর্থ বাকি ছিল ৪৯ লক্ষ টাকা। গতকাল (বুধবার) রাত ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন গ্রুপটির চেয়াম্যানের জন্য। কারণ চেয়ারম্যান অনন্ত জলিল স্বাক্ষর করলেই চেক পেতেন তিনি। কিন্তু চেয়ারম্যান পেমেন্ট চেকে স্বাক্ষর করেন বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার পর। তাই তিনি প্রাইম ব্যাংকের একাউন্ট পে চেকটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বিজিএমই ভবনে তার এক বন্ধুর কাছে চেকটি বন্ধক রেখে অর্থ ধার নেবেন। এরপর নারায়ণগঞ্জে গিয়ে কারখানার শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করবেন।
এই গার্মেন্টস মালিক আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ব্যাংক খোলা রেখে দেন বড় বড় ব্যবসায়ীদের এলসির জন্য। আসলেই গার্মেন্টসের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য নয়। আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে ক্লিয়ারিং হাউজ ছাড়া ব্যাংক খোলা রাখাটা ‘প্রহসন’ ছাড়া কিছু না।
শুধু সাহারুলই না, এরকম শতাধিক ব্যবসায়ী ঐ সময় বিজিএমই ভবনের কাছে অপেক্ষা করছিলেন চেক বন্ধক রেখে টাকার জন্য। তাদের মাঝে কিছু ব্যবসায়ী চরম ক্ষতির আশাঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, শনিবার বা রবিবার গার্মেন্টসের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে না পারলে, নারায়ণগঞ্জ ও আশুলিয়ার অনেক মাঝারি মানের গার্মেন্টসের শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসতে পারে। তাই তারা শনিবার ও রবিবার ক্লিয়ারিং হাউজ খোলা রাখার দাবি জানান। যদি বন্ধের দুদিন ক্লিয়ারিং হাউজ খোলা থাকে তবে তারা শান্তিমত ঈদ করতে পারবে বলে জানান এই প্রতিবেদককে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো: দেলোয়ার হোসেন খান রাজীব বলেন, ক্লিয়ারিং হাউজ বন্ধ থাকলে অনেক ব্যবসায়ী কিছুটা সাময়িক কষ্টের মুখে পড়বেন এটা স্বাভাবিক তবে, এটাই আমাদের রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলে আমরা বন্ধের দিনও ব্যাচ (ক্লিয়ারিং হাউজ) খোলা রাখতে পারি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন