স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে দেশে ভয়াবহ নাশকতা ও প্রাণহানির ঘটনায় অবশেষে হার্ডলাইনে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সংঘাত ও হতাহতের ঘটনা এড়াতে এবং এতদিন ধৈর্যের পরীক্ষা দিলেও আর ছাড় দেয়া হবে না।
সম্প্রতি দেশজুড়ে নাশকতা ও প্রাণহানির অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ শীর্ষ ৩০ নেতাকে নজরদারিতে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে তাদের কবে নাগাদ গ্রেফতার করা হতে পারে এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না কেউ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, নাশকতাকারী ও নাশকতার নির্দেশদাতা উভয়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন। তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পেলেই গ্রেফতার করা হবে। ইতোমধ্যে মামুনুল হকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নাশকতার হুকুমদাতা, বিস্ফোরণের হুকুমদাতা এবং নিরীহ মানুষকে হত্যাচেষ্টার হুকুমদাতা বলা হয়েছে।
গ্রেফতারের বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মামলাটি তদন্ত করছি। তদন্তে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারাদেশের নাশকতার পর থেকেই হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ শীর্ষ নেতাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি এরই মধ্যে পুলিশ সদর দফতরে আলোচনা হয়েছে। বুধবার (৭ এপ্রিল) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠকে তাদের গ্রেফতার করার বিষয়টি আলোচনা করা হয়। শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারের পর ঢাকা শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হতে পারে এ নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা আলোচনা করেছেন।
মামুনুল ছাড়াও হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী, মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী, মাওলানা যাকারিয়া নোমান ফয়েজী, মাওলানা ফয়সাল আহমেদ, মাওলানা মুশতাকুন্নবী, মাওলানা হাফেজ মো. জোবায়ের, মাজেদুর রহমান, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়্যুবী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা লোকমান হাবিব, নাসির উদ্দিন মনির, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা মাসুদুল করিম, মাওলানা হাফেজ মো. তৈয়বসহ ৩০ জন নজরদারিতে রয়েছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে আবারো ফেসবুক লাইভে আসেন মামুনুল হক। এ সময় তিনি সবার কাছে তার ব্যক্তিগত ভুলের জন্য ক্ষমা চান।
উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। সেখানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামে হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। সেখানে পুলিশের গুলিতে চার ছাত্রের মৃত্যু হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওইদিন বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ হয়। সেখানেও সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়। হামলা ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৭ মার্চ বিক্ষোভ ও ২৮ মার্চ হরতাল পালন করে ইসলামী সংগঠনটি। হরতালে দেশব্যাপী হামলা, ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
এদিকে শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে নারীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয়রা। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। সেই সঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারীকে দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন মামুনুল হক।
মামুনুল হক অবরুদ্ধ এমন খবর শুনে সেখানে সন্ধ্যার পর জড়ো হতে থাকেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে রয়েল রিসোর্টে হামলা চালান। এতে রিসোর্টের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম, এসিল্যান্ড গোলাম মোস্তফা মুন্না, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টিএম মোশাররফ হোসেন, সোনারগাঁ থানার ওসি (তদন্ত) তবিদুর রহমানসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা। এক পর্যায়ে মাওলানা মামুনুল হককে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান বিক্ষুব্ধ হেফাজতের কর্মীরা।
অন্যদিকে আরেকটি সূত্র জানায়, মামলার পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের আয়কর ফাইলও দেখা হবে। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, যেহেতু হেফাজত নেতারা এখন সরাসরি রাজনীতিতে জড়িয়ে গেছেন, তাই অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতো তাদেরও সব কিছু খতিয়ে দেখা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন