করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। করোনা ইউনিটের দেয়ালে কোভিড-১৯ (করোনা) হাসপাতাল এলাকা সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ লেখা থাকলেও ইচ্ছেমতো লোকজন সেখানে প্রবেশ করছে, আবার বেরিয়ে যাচ্ছে। গতকাল রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের নিচতলায় করোনা ইউনিটে এই দৃশ্য দেখা যায়।
অন্যদিকে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের নিচে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে দেখা গেছে। এ সময় স্বজনদের এদিক-ওদিক ছুটতে দেখা যায়। করোনা ইউনিট থেকে বেরিয়ে এসে একজন স্বাস্থ্যকর্মী জানালেন, ভেতরে বেড ফাঁকা নেই। গাড়িতেই থাকতে হবে রোগীদের।
দুপুরে ঢামেকের নতুন ভবনের করোনা ইউনিটের সামনে দেখা গেলো এক সন্তান তার মায়ের হাত ধরে বসে আছেন, চোখে পানি। একেকজন রোগী ঢাকার আশেপাশের এলাকা থেকে সোজা ঢাকা মেডিক্যালে এসেছেন এই ভরসায় যে, একটা না একটা ব্যবস্থা হবেই। হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু আধাঘণ্টা থেকে একঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে থাকতে হচ্ছে রোগীকে। আর এই সময়টা অপেক্ষা করা ছাড়া পাবেন, আর কোনও উপায় নেই স্বজনদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, অবস্থা খুব খারাপ এর পর মেঝেতেও জায়গা হবে না। প্রতিরোধ করাটা বেশি জরুরি। রোগী বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, হাসফাঁস করছে, দেখলে কান্না আটকে রাখা যায় না!
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. নাজমুল হক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আইসিইউ এবং এইচডিইউতে কোনও সিট খালি নেই। সাধারণ বেড অনেকদিন ধরে খালি নেই। করোনা ইউনিটে গাইনি এবং সার্জারি বিভাগের কিছু সিট খালি আছে; কিন্তু সেগুলো বিশেষ পরিস্থিতির জন্য খালি রাখা হয়। সেগুলোতে অন্য করোনা রোগী ভর্তি করা হয় না।
বেলা ১২টার দিকে অপেক্ষমান একটি অ্যাম্বুলেন্সের সামনের দরজা খুলে বের হলেন করোনায় আক্রান্ত ফরিদা বেগমের (৫৯) ছেলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, আমার মা স্যার সলিমুল্ল্যাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তিনি কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। সেখানে তার ডায়ালাইসিস চলছিল। তবে হঠাৎ করেই তার মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তিনি কাউকে চিনতে পারছিলেন না। এরপর আমরা অক্সিজেন দিয়ে তাকে এখানে নিয়ে আসি। তবে ভেতরে বেড নেই বলে অ্যাম্বুলেন্সেই তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। গরমের মধ্যে প্রায় ১ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সেই ছিলেন ফরিদা। ১ ঘণ্টা পর তাকে ভেতরে নেয়া হয়।
কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢামেকে এসেছেন মিসির আলী নামে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ। অক্সিজন দিয়ে তাকেও ৩০ মিনিট ঢামেকের বাইরে আদ-দ্বীন হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তার করোনার লক্ষণ ও উপসর্গ ছিল। ৩০ মিনিট অপেক্ষার পর তাকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালের ভেতরে নেয়া হয়। ঢাকার মুন্সিগঞ্জের লোহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আসা আনোয়ার হোসেনকে ১ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে অক্সিজেন নিতে দেখা যায়। দুপুর ১টা পর্যন্ত তিনি অ্যাম্বুলেন্সেই ছিলেন।
ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলের নতুন ও পুরাতন বার্ন ইউনিট ভবনে মোট ৮০০টি বেড রয়েছে। এছাড়া ২০টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) এবং ৪০টি হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) আছে।
করোনা ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাফিজ সরদার বলেন, নতুন ভবন পুরোটাই করোনা ইউনিট। এই ইউনিটে মানুষ যত আসবে করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ততই বাড়বে। হাসপাতালের লিফটগুলোকে রেড জোন ও গ্রিন জোন করা হয়েছে। তবুও মানুষ তা মানছে না।
তিনি আরো বলেন, চিকিৎসকদের জন্য একটি লিফট বরাদ্দ আছে। সেখানে একদিন আমাকে ধাক্কা দিয়ে হুড়মুড় করে লোকজন ঢুকে গিয়েছে। এগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি। তবে আমাদের হাসপাতালের পরিচালক স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে খুব চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন