শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

আলেপ্পোর লড়াইয়ে এবার যোগ হচ্ছে বেসামরিক ইরাকি শিয়ারা

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বিদেশি বাহিনীগুলোর সাথে আরো একটি নতুন সংযোজন

প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সিরিয়ার বিদ্রোহী সংগঠন জাবহাত ফতেহ আল-শাম ট্যুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ঘোষণা দিয়েছে, কমান্ডার আবু ওমর সারাকিব আলেপ্পো প্রদেশে এক বিমান হামলায় মারা গেছেন। তবে কোন দেশের বাহিনী এই বিমান হামলা চালিয়েছে তা জানায়নি গোষ্ঠীটি। জুলাইয়ে আল-নুসরা ফ্রন্ট তাদের নাম পরিবর্তন করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয়। সিরিয়ায় দেশটির সরকার, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট জঙ্গি আইএ এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। গোষ্ঠীটির সূত্রে জানা গেছে, আলেপ্পোর পশ্চিমাংশে কাফর নাহা গ্রামে একটি গোপন আস্তানা লক্ষ করে বিমান হামলা চালানো হলে কমান্ডার আবু ওমর সারাকিবসহ আরো কয়েকজন নিহত হন। তবে অসমর্থিত আরো বেশকিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোষ্ঠীটির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাও এই হামলায় নিহত কিংবা আহত হয়েছেন। বিবিসি।
ইনকিলাব ডেস্ক : প্রতিবেশী সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে সরকারি বাহিনীর সমর্থনে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই করতে এক হাজার যোদ্ধাকে পাঠানো হয়েছে বলে ইরাকের শিয়া বেসামরিক বাহিনী হরকাত আল নুজাব জানিয়েছে। গত বুধবার আল নুজাবের মুখপাত্র হাশিম আল মুসাভি জানান, তাদের যোদ্ধারা আলেপ্পোর দক্ষিণাংশে বিদ্রোহীদের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করা এলাকাগুলোতে শক্তি বৃদ্ধি করবে। ইরাকি শিয়া বাহিনী যোগ দেওয়ায় আলেপ্পোর লড়াইয়ে বিদেশিদের অংশগ্রহণ আরো বাড়লো। ওদিকে, সিরিয়ার জঙ্গি-জিহাদি গোষ্ঠী জাবহাত ফতেহ আল-শামের একজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডার আলেপ্পোয় নিহত হয়েছেন। গোষ্ঠীটির একটি সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে। গোষ্ঠীটি আল-নুসরা ফ্রন্ট নামেও পরিচিত।
সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর পক্ষ হয়ে রুশ বিমানগুলো আলেপ্পোর বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অংশগুলোতে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে, আর ভূমিতে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকারি বাহিনীর পক্ষ হয়ে লেবাননের শিয়া হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর যোদ্ধারা আগে থেকেই লড়াইয়ে আছে। গেল কয়েক বছর ধরে সিরিয়ার এক সময়ের সবচেয়ে বড় শহর ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রটি সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত অংশে বিভক্ত হয়ে আছে। তবে আলেপ্পোর লড়াই এখন একটি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারি বাহিনী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো অবরোধ করে রেখেছে এবং পুরো শহরটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার আশা করছে। এমন হলে তা বিদ্রোহীদের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে সরকারি বাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে রুশ বাহিনী।
অপরদিকে লেবাননি হিজবুল্লাহ ও ইরাকি শিয়া যোদ্ধারা এক ইরানি জেনারেলের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইরাক থেকে আরো শিয়া যোদ্ধা আসায় সিরিয়া ও ইরাকের যুদ্ধ আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে মধ্যপ্রাচ্যে একটি বৃহত্তর সম্প্রদায়গত লড়াইয়ের আশঙ্কা তৈরি করছে। ইরাক, সিরিয়ার পাশাপাশি গেল এক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের অপর দেশ ইয়েমেনেও একই ধরনের সম্প্রদায়িক লড়াই চলছে। আল নুজাবের ট্যুইটার একাউন্টে পোস্ট করা ছবিতে সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের যোদ্ধাদের পাশে ইরানি মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে দেখা গেছে। তিনি ইরানি বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর বিদেশি অভিযান বিষয়ক কমান্ডার। তিনি ইরাক ও সিরিয়া উভয় দেশে ইরানের মিত্র শিয়া বেসামরিক বাহিনীগুলো পরিচালনা করেন। পাঁচ বছর ধরে চলা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এখন বহুপাক্ষিক হয়ে উঠেছে। গেল কয়েক সপ্তাহে সীমান্ত অতিক্রম করে তুর্কি বাহিনী উত্তর সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে। নিজ সীমান্ত সংলগ্ন সিরীয় এলাকা থেকে আইএসকে তাড়ানো ও কুর্দি বাহিনীর প্রভাব বৃদ্ধিতে বাধা দেওয়াই তুর্কি হস্তক্ষেপের উদ্দেশ্য। এছাড়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আইএসের উত্থানের পর থেকেই তাদের নির্মূলের কথা বলে দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোট বাহিনী। ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে চলা এ যুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় লাখখানেক মানুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া বাস্তুচ্যুত হয়েছেন যুদ্ধপূর্ব সিরিয়ার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক, এক কোটি ১০ লাখ মানুষ।
অন্যদিকে, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক দ্য সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, জাবহাত ফতেহ আল-শামের একটি বৈঠক চলাকালে অজ্ঞাত যুদ্ধবিমান থেকে হামলা চালানো হয়। এতে সারাকিব এবং আবু মুসলেম আল-শামি নামের আর একজন সামরিক কমান্ডার নিহত হন। তবে নাম পরিবর্তন এবং আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিয়েছে, গোষ্ঠীটিকে সন্ত্রাসী সংগঠনই মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে তাদের সামরিক অভিযান বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে নুসরা ফ্রন্ট নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, জঙ্গি এই গোষ্ঠীটিতে ৫ থেকে ১০ হাজারের মতো যোদ্ধা রয়েছেন। বিবিসি, রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন