শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অসময়ে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ : উৎপাদন ব্যাহতের আশংকা

প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : দেশের উপকূলভাগসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে গত দুই সপ্তাহ যাবত ডিমওয়ালা ইলিশের ঝাঁক ধরা পড়ায় আসন্ন মূল প্রজনন মওসুমে জাতীয় এ মাছের উৎপাদন ব্যাহত করতে পারে। কয়েক মাসের খরা কাটিয়ে ভাদ্রের মধ্যভাগ থেকেই বঙ্গোপসাগরে সংযুক্ত বিভিন্ন নদ-নদীর মোহনাসহ অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে। বিগত শীত মওসুমের পরে লাগাতার দুঃসহ তাপপ্রবাহ আর খরার পরে মওসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী বৃষ্টিপাত ইলিশ প্রজননসহ এর উৎপাদনে যথেষ্ট সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন মৎস্য বিজ্ঞানীগণ। কিন্তু ডিমওয়ালা ইলিশের আগাম বিচরণ ও আহরণ আসন্ন মূল প্রজনন মওসুমের সময়টিতে যথেষ্ট বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইলিশ মাছ সারা বছর ধরেই ডিম ছাড়লেও আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে পরেই সর্বাধিক প্রজনন করে থাকে। আর ভাদ্র ও আশ্বিনেই উপকূলভাগসহ অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে সবচেয়ে বেশী ইলিশ পরিভ্রমণকালে ধরা পড়ে। আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগের ৩ দিন ও পরের ১১ দিনকে মৎস্য বিজ্ঞানীরা ইলিশের প্রধান প্রজননকাল মনে করে থাকেন। এমনকি এর পরবর্তী পূর্ণিমার অনুরূপ সময়কালকেও তারা ইলিশের দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রজননকাল বলে চিহ্নিত করেছেন।
সে হিসেবে আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ১৫ দিন উপকূলের ৭ হাজারর বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে। এসময় সারা দেশে ইলিশের পরিবহন ও বিপণনও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে। এলক্ষ্যে আইন-শৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসনের সহায়তায় সব ধরনের প্রস্তুতিও গ্রহণ করতে শুরু করেছে মৎস্য অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
কিন্তু চলতি বছর আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে ভাগেই প্রচুর প্রজননক্ষম ইলিশ দেশের উপকূলীয় নদ-নদী মোহনাসহ অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে উঠে আসায় গত দুই সপ্তাহ যাবত ধরা পড়ছে। অনেকটা আকস্মিকভাবে বিপুল পরিমাণ ইলিশ পেয়ে জেলেরা যথেষ্ট খুশি। তবে তাদের চেয়েও বেশী খুশি বিভিন্ন মোকামের দাদনদাররা। সারা বছর এরা জেলেদের আগাম অর্থদিয়ে আহরিত মাছ নিজেদের নির্ধারিত দরেই কিনে নেয়। এতদিন মাছ কম ধরা পড়ায় জেলেরা ঋণমুক্ত হতে পারেনি। দাদনদারদের কপালে ছিল দুশ্চিন্তার ভাঁজ। কিন্তু অনেকটা আকস্মিকভাবেই সাগর থেকে প্রচুর ইলিশ উপকূলভাগ হয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে উঠে আসায় তাদের দুশ্চিন্তা কিছুটা লাঘব হতে শুরু করেছে।
কিন্তু প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও বাজারে এর খুব একটা প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। এখনো বরিশালের ইলিশের পাইকারী মোকামে এক কেজি সাইজের ইলিশ ৩০-৩৫ হাজার টাকা মণ। কেজির ওপরের সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ হাজার টাকার ওপরে। আর কথিত নজরদারীর পরও বাজারে যে জাটকা আসছে তার পাইকারী দর প্রতিমণ ৮-১০ হাজার টাকা। ফলে খুচরা বাজারেও মধ্যম সাইজের ইলিশ এখনো প্রতিকেজি ৮শ’ টাকার নীচে নয়। কেজি সাইজের একটি ইলিশ বিক্রী হচ্ছে ৯শ’ থেকে হাজার টাকার কাছাকাছি।
তবে দাম যাই হোক মূল প্রজনন মওসুমের সামান্য আগে সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠে আসা এবং তা উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ নদ-নদী মোহনায় ধরা পড়ার ঘটনাকে খুব ভাল বলে মনে করছেন না মৎস্য গবেষকরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মৎস্য বিজ্ঞানী ‘আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার মূল প্রজনন সময়ের আগে বিপুল পরিমাণ ইলিশ আহরণের ঘটনাকে আগামীতে দেশের বৃহৎ এ মৎস্য প্রজাতির উৎপাদন ব্যাহত করতে পারে’ বলে শংকা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, বাজারে গত দিন পনের যাবত যে ইলিশ আসছে তার ৯০ ভাগই ডিমওয়ালা। আগামী আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে-পরে এসব প্রজননক্ষম ইলিশ ডিম ছাড়ার কথা। কিন্তু আগাম বিচরণের ফলে তা জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। ফলে মূল প্রজনন সময়টিতে এবার ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
তবে এর বিকল্পও এ মুহূর্তে কারো কাছে নেই। কারণ, আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগের ৩ দিন ও পরের এগার দিনসহ মোট ১৫ দিন ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপণন বন্ধ রাখা হয় দেশের বৃহৎ একক প্রজাতির এ মাছের প্রজননকে নিরাপদ ও নির্বিঘœ রাখার লক্ষ্যে। বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়লেও এ মুহূর্তে কিছু করণীয় না থাকায় ভবিষ্যতে বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখারও তাগিদ দিয়েছেন মৎস্য বিজ্ঞানীগণ।
উল্লেখ্য, গত অর্থ বছরেও দেশে ইলিশের উৎপাদন ও সহনীয় আহরণ ছিল ৩ লাখ ৯০ হাজার টনের কাছাকাছি। যার বাজার মূল্য প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার মত। আমাদের জিডিপি’তে ইলিশের একক অবদান ১%-এর মত। আর গোটা মৎস্য সেক্টরে এ মাছের অবদান ১২%-১৩%। মৎস্য অধিদফতরের মতে, দেশের ৪০টি জেলার প্রায় সাড়ে ৪ লাখ জেলে ইলিশ আহরণের সাথে জড়িত। এর ৩২% সার্বক্ষণিক ও ৬৮% খ-কালীন ইলিশ আহরণে সম্পৃক্ত বলে মৎস্য অধিদফতর জানিয়েছে। এছাড়াও ইলিশ বিপণন, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাত করণ, জাল ও নৌকা তৈরীসহ মেরামত কাজেও আরো প্রায় ২০-২৫ লাখ মানুষ কাজ করছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগেরই প্রায় দেড় লাখ জেলে এ পেশার সাথে জড়িত বলে মৎস্য অধিদফতর জানিয়েছে। যার ৬৫% সার্বক্ষণিকভাবে ইলিশ আহরণে জড়িত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন