মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শহীদ জিয়ার মাজার সরাতে হলে সরকারকে অনেক মূল্য দিতে হবে- মির্জা ফখরুল

ঢাকা মহানগর বিএনপি’র বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত : আজ সারাদেশে বিক্ষোভ

প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় সংসদভবন সংলগ্ন চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার সরাতে হলে সরকারকে অনেক মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার বিকালে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তিনি বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজার যারা সরিয়ে ফেলতে চায়, তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছে। তাকে এখান থেকে (চন্দ্রিমা উদ্যান) থেকে সরাতে হলে তাদেরকে (সরকার) অনেক মূল্য দিতে হবে- এই কথা আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই। এখন আমাদের আর বসে থাকবার সময় নয়। আমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে, আমাদেরকে সংগঠিত হতে হবে, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দলের নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বানও জানান মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে বাংলাদেশ অন্ধকার গহ্বরের মধ্যে পড়ে গেছে, একটা অন্ধকার টানেলের মধ্যে পড়ে গেছে যার সামনের দিকে কোনো আশার আলো দেখা যায় না। আমি বলব, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে আজকে ১৬ কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এই অপশক্তিকে পরাজিত করতে হবে, জনগণের বিজয় অর্জন করতে হবে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর স্বাধীনতার পদক জাতীয় জাদুঘর থেকে সরিয়ে নেয়ার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মহানগর বিএনপি এই বিক্ষোভ সমাবেশ করে। আজ ঢাকা মহানগরীর সকল থানাসহ সারাদেশের মহানগর ও জেলা সদরে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে দলটি।
জিয়ার মরণোত্তর স্বাধীনতার পদক প্রত্যাহার সরকারের নিকৃষ্টতম সিদ্ধান্ত অভিহিত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান শুধু মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষক একজন অসীম সাহসী প্রজ্ঞাবান, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতা যিনি সেই সময় কিংকর্তব্য জাতিকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন। তার স্বাধীনতার পদক কেড়ে নেয়ার অর্থ তাকে অপমান করাই নয়, এই পদক কেড়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে গোটা জাতির স্বাধীনতার পদক কেড়ে নেয়া হয়েছে। বেআইনি সরকারের এই নিকৃষ্টতম সিদ্ধান্ত মুক্তিযুদ্ধকে অপমানিত করেছে, সকল মুক্তিযোদ্ধাকে অপমানিত করেছে।
তিনি বলেন, যেসব মন্ত্রীরা ও আওয়ামী লীগের নেতৃবর্গ জিয়াউর রহমান সম্পর্কে বিষোদগার করছেন, যে ভাষাগুলো ব্যবহার করছেন, তারা সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন? তারা তো সেইদিন শহীদ জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধে এসেছিলেন, বেশিরভাগই পালিয়ে চলে গিয়েছিলেন। জনগণ যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করেছে। তারা যখন জিয়াউর রহমান সম্পর্কে এই ধরনের উক্তি করেন, মন্তব্য করেন, পদক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তখন নিঃসন্দেহে আমাদের বিশ্বাস করতে বাধ্য হতে হবে, তারা কখনোই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, সরকার ইতিহাসকে বিকৃত করছে। তারা বিকৃত করে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে একটা খলনায়কে পরিণত করতে চাচ্ছেন আমাদের নতুন প্রজন্মের সামনে। এটাতে তারা কখনো সফল হবে না। সফল হবে না এজন্য যে সত্যকে দীর্ঘকাল ধরে চেপে দিয়ে রাখা যায় না, সফল হবে না এজন্য যে, যে ব্যক্তিটির সম্মান হেয় করার চেষ্টা করছে, যে ব্যক্তিটি ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তার কাজ দিয়ে, অবদান দিয়ে, তার ত্যাগ তিতিক্ষা দিয়ে। শহীদ জিয়ার নাম স্বাধীনতার সাথে অঙ্গা-অঙ্গিভাবে জড়িত, অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মির্জা ফখরুল বলেন, তারা (সরকার) সুপরিকল্পিতভাবে জিয়াউর রহমান নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে দীর্ঘদিন কাজ করছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা গণতন্ত্রকে অস্বীকার করছে। তারা একে একে গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমার কাছে মাঝে মধ্যে মনে হয়, এই প্রতারণা ও নাটক করার দরকার কী? এই সার্কাস করার দরকার কী? এসব না করে একবারে ঘোষণা করে দিলে হয়, এখন বাকশাল হবে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা হবে, অন্য কোনো দল থাকবে না, অন্য কোন মত এখানে থাকবে না। আজকে সেই অবস্থাটা সৃষ্টি হয়ে গেছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এদেশ শেষ হয়ে যাচ্ছে, এই দেশ একটা কারাগারে পরিণত হয়েছে, এদেশ একটা অন্ধকুপে পরিণত হয়েছে। আজকে যারা সরকারে, যারা কোনোভাবেই নৈতিকতার মাপকাঠিতে নির্বাচিত নয়, বৈধ নয়, তারা আজকে জোর করে ক্ষমতা দখল করে দেশের সব মানুষের কন্ঠরোধ করে দিয়েছে। তাদের ব্যর্থতার কারণে, তাদের কূটকৌশলের কারণে এই জঙ্গিবাদকে নিয়ে এসে তারা দেশে একটা অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
স্বাধীনতার পদক প্রত্যাহারের বিষয়ে গণমাধ্যমে ভূমিকা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে কেউ কোনো কথা বলতে পারে না, কেউ কিছু লিখতে পারে না। দেখুন এই সাংবাদিকরা এখানে আছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পদক প্রত্যাহার করে নিয়েছে, পত্রিকাগুলোতে এর সংবাদ দ্বিতীয়-তৃতীয় পৃষ্ঠায় স্থান পেয়েছে।
অথচ পদক প্রত্যাহার করে গোটা জাতিকে অপমান করা হয়েছে। বিশ্বের দরবারে আমরা ছোট হয়ে গেছি। যিনি আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন, আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাদের সম্মান দিতে জানি না।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আহ্বায়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশে এখন আইনের শাসন নেই, এখান এখন আওয়ামী শাসন চলছে। এই থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদেরকে আন্দোলনের নামতে হবে, এর কোনো বিকল্প নাই। আমি যতটুক বুঝি, শহীদ জিয়াউর রহমানের পদক প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগেরই ক্ষতি হয়েছে, বিএনপির কোনো ক্ষতি হয় নাই।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মহানগর যুগ্ম আহবায়ক কাজী আবুল বাশার, যুব দলের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, ছাত্র দলের সভাপতি রাজীব আহসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন