স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর সবুজবাগে পৃথক ঘটনায় দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এরা হলো শামীম হোসেন (১২) ও সায়িখ সাদাত ইফতি (৬)। শামীমের লাশ ওয়াসা রোডের খালে এবং ইফতির লাশ আলহাজ আব্দুর রশিদ মাতবর রোডের একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে। ইফতির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রেজাউল নামে এক দোকানদারকে আটক করা হয়েছে। এদিকে, দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুতে তাদের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
নিহত শামীমের বাবা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালক শফিকুল ইসলাম বলেন, তার ছেলে শামীম কমলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্ধুদের সঙ্গে খেলার সময় পা পিছলে ওয়াসা রোডের খালে পড়ে যায় শামীম। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তাকে উদ্ধারে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। গতকাল সকালে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল আবার খোঁজ শুরু করে। পরে সকাল সাড় ৯টার দিকে শামীমের লাশ পাওয়া যায়। শামীমকে হারিয়ে পুরো পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রত্যক্ষদর্শী শিশু সখিনা জানায়, সে বাসার সামনে ওয়াসার খালের পাশে একটি খালি ট্রাকে উঠে খেলা করছিল। এ সময় কয়েকজন ছেলে সেখানে খেলতে আসে। তারা ময়লার স্তূপের ওপর দিয়ে ওয়াসার খাল পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় একজন খালের পানিতে পড়ে গেলে অন্য ছেলেগুলো দৌড় দিয়ে দ্রুত চলে যায়। পানিতে পড়ে যাওয়া ছেলেটার দু’হাত তুলতে দেখে সখিনা ট্রাক থেকে নেমে স্থানীয়দের খবর দেয়।
সবুজবাগ থানার এসআই জিয়াউর রহমান জানান, শামীম পরিবারের সঙ্গে বাসাবো এলাকার ওহাব কলোনিতে থাকতো। তাদের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী থানার বাগাদি গ্রামে। মৃত শামীম দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়। তার ছোট ভাইয়ের বয়স দুই মাস। বড় সন্তান শামীমকে হারিয়ে বারবার সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ছেন।
এদিকে, মৃত ইফতির খালা হনুফা বেগম বলেন, ইফতির বাবা ইব্রাহিম খলিল ও মা ফাহমিদা আক্তার। ইফতির চার বছর বয়সী ছোট বোন ইমু। ইব্রাহিম ঢাকার দোহারে পিডব্লিউবিতে চাকরি করেন। কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে থাকেন। সেখানের একটি স্কুলে নার্সারিতে পড়তো ইফতি। গত মঙ্গলবার খিলগাঁও থানার শেখের জায়গায় পরিবারের সঙ্গে নানার বাড়িতে বেড়াতে আসে ইফতি।
তিনি আরো বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে ইফতি নিখোঁজ হয়। তার সন্ধান পেতে শেখের জায়গার খালসহ সম্ভাব্য অনেক জায়গায় খোঁজা হয়। পরে সবুজবাগ থানায় একটি জিডিও করা হয়। গতকাল সকাল ৮টার দিকে আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ মাতবর রোডের একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কে তার লাশ পাওয়া যায়। ওই সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা না থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় আজহারুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে দুর্ঘটনাস্থল বাড়ির সামনে কয়েকজন ছেলে খেলা করছিল। বাড়িটির চারদিকে দেয়াল ও মেইন গেইট সব সময় তালা লাগানো থাকতো। কয়েকজন ছেলে গেইট টপকে বাড়ির ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। ধমক দিলে তারা চলে যায়। ওই বাড়িতে রাস্তা সংলগ্ন একটি বেডরুম ও একটি মুদি দোকান রয়েছে। এর পেছনে ছিল সেপটিক ট্যাংক। কেউ ধারণা করেনি ওই ট্যাঙ্কে ইফতি পড়ে গেছে। গতকাল সকালে এক শিশু ওই ট্যাঙ্কে ইফতির লাশ দেখতে পায়। মুদি দোকানটি চালাত রেজাউল।
সবুজবাগ থানার এসআই বাবর সরকার জানান, শিশু ইফতির মৃত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুদি দোকানদার রেজাউলকে আটক করা হয়েছে। ইফতির নানাবাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ইফতির মৃত্যুর ঘটনায় তার স্বজনসহ এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ঘটনা দুটি সম্পর্কে সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কুদ্দুস ফকির বলেন, শিশু দুটির লাশ ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনা দুটিই দুর্ঘটনাবশত হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন