শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের দিকনির্দেশনা

হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ ইসমাঈল | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:১৪ এএম

স্ত্রীর কোলে তাদের যে বংশপরম্পরা প্রতিপালিত হচ্ছে, সে সন্তান আল্লাহর বড়ো নেয়ামত। কিন্তু তার তরবিয়তে মায়েদের গাফলতি ও বেপরোয়া ভাব দিনদিন বেড়েই চলেছে। মা হিসেবে সন্তানকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা শেখানোর প্রতি তাদের কোনো দরদ ও ইচ্ছে আজকাল দেখা যায় না। যার নমুনা হলো, স্কুল-কলেজশিক্ষার্থীরা। যাদের মেয়েকে তার বাবা কন্ট্রোল করেন নি। তারা তাদের মেয়েদেরকে আধুনিকতার ফাঁদে লেলিয়ে দিয়েছেন। পুরুষদের মতো পোশাক পরছে তারা। তারা খোলামেলা পোশাকে রাস্তায় বেরুচ্ছে। মায়েরা তাদেরকে লজ্জাশীল বানান নি। তাদেরকে দেখলে বোঝা যায়, তাদের মাঝে ইমান, আখলাক ও লজ্জা বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই। নিজের সৌন্দর্য রক্ষায় পর্দার কোনো গুরুত্ব তাদের মাঝে তৈরি করা হয় নি। নামাজসহ অন্যান্য ইবাদতের প্রতি কোনো আগ্রহও নেই তাদের। এগুলো মায়েদের গাফলতি ও অসচেতনতার ফলাফল। ছোটো থেকে তাকে সঠিক শিক্ষা ও তরবিয়ত দেয়া হয় নি। এজন্য আজ তারা এমন বিগড়ে গেছে, মা-বাবা মারা গেলে তাদের জন্য দোয়া পর্যন্ত করবে না। কারণ শেখে নি। সত্য তো এই, জিজ্ঞেস করলে দেখা যাবে তারা রাসুল (সা.)-এর জীবনী সম্পর্কেও কিছু জানে না। ছোটো-বড়ো ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত সম্বন্ধেও বেখবর। আল্লাহর দেওয়া অনেক জীবনবিধান জানে না। তাই সামান্য চিন্তা করলে অনুভব করা যায়, এ সমস্ত নারীদের কোলে ভবিষ্যতে যে সন্তান প্রতিপালিত হবে, তারা অধঃপতনের কোন সীমা পর্যন্ত যেতে পারে!
ইসলামে সেসব মায়েরা আজও উজ্জ্বল নক্ষত্র তুল্য হয়ে আছেন, যাদের কোলে প্রতিপালিত হয়েছেন হজরত ইসমাঈল (আ.), হজরত ফাতেমা (রা.), হজরত হাসান ও হজরত হুসাইন (রা.) এবং এমন সব পুরুষ, যাদেরকে দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। তারা মায়ের দায়িত্ব-কর্তব্য ভালোভাবে বুঝেছিলেন এবং সেভাবে সন্তানের হক আদায় করেছিলেন। বর্তমান মায়েদের জন্য আদর্শ তারাই। আমাদের উচিত, সঠিকভাবে সন্তানের দায়িত্ব বুঝে তাদের হকগুলো স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে পূর্ণ করা। পশ্চিমা সভ্যতার অপসংস্কৃতি থেকে সন্তানকে রক্ষা করা। বাবার অনুপস্থিতিতে তার সঠিক পরিচর্যা করা। আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা তার মাঝে বদ্ধমূল করার পাশাপাশি মা-বাবারও উচিত, নিজের অবৈধ ইচ্ছেগুলোকে জমিয়ে রেখে ভালো কাজে লেগে থাকা। কাফের-মুশরিকদের সৌন্দর্য ও চাকচিক্যে আকৃষ্ট না হওয়া। এভাবে সন্তানের অতি উত্তম তরবিয়ত করা এবং নিজে তাদের জন্য সুন্দর মডেল হওয়া।
মেয়ে সবারই আদরের। কিন্তু শুধু আদর ও ভালোবাসায় আহ্লাদী করে না তুলে তার দীনি তরবিয়তকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এর উত্তম দৃষ্টান্ত হজরত রাসুরৈ কারিম (সা.)। তিনি একদিকে হজরত ফাতেমা (রা.)-কে বলেছেন-‘তুমি জান্নাতি নারীদের দলপতি। জান্নাতে আমি সর্বপ্রথম তোমার সঙ্গে সাক্ষাত করবো।’ অপরদিকে কড়া তরয়িতের স্বরে বলেছেন-‘যদি ফাতেমা বিনতে মোহাম্মদ চুরি করে, তাহলে তার হাত কেটে ফেলবো।’ রাসুল (সা.)-এর এতো ভালোবাসা হজরত ফাতেমা (রা.)-এর প্রতি থাকাসত্তে¡ও তার বিচারে কোনো কমতি করেন নি। বরং ঘোষণা দিলেন-‘আমার মেয়ে ফাতেমা চুরি করলেও তার ওপর ইসলামের শাস্তি প্রয়োগ করতাম।’ এর নাম সঠিক তরবিয়ত। এর নাম সন্তানের সঠিক প্রতিপালন। শুধু মেয়ের আলোচনা বা মেয়ের কথা উল্লেখ করা হলো। কারণ ছেলের তুলনায় মেয়ের তরবিয়ত আরও কঠিন। এই আলোচনার ওপর ভিত্তি করে ছেলের তরবিয়ত বিবেচনা করা যেতে পারে।
সওয়াবে জারিয়া যেমন আছে, তেমনি আছে গোনাহে জারিয়াও। সন্তানের সঠিক তরবিয়ত করতে পারলে সে হবে মা-বাবার জন্য সদকায়ে জারিয়া। আর তার তরবিয়তে গাফলতির কারণে সে লক্ষ্যভ্রষ্ট ও খারাপ হলে মা-বাবার জন্য সে হবে গোনাহে জারিয়া। সন্তানের সঠিক প্রতিপালনের জন্য ইসলামি বিধিবিধানের প্রতি যেমন নিজে গুরুত্বশীল হওয়া, তেমনি সন্তানকেও গুরুত্বশীল হিসেবে গড়ে তোলা।
সন্তানের সঠিক প্রতিপালনে মা-বাবাকে মৌলিকভাবে চারটি কাজ করতে হবে-১. একজন মুসলমানের জীবনের যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) যা বলেছেন, তা সন্তানকে স্মরণ করিয়ে দেওযা। বারবার তিনি আলোচনার মাধ্যমে তার মাঝে সে মাকসাদ দৃঢ় করা। তা হলো, ‘আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার ইবাদতের জন্য। কারণ তার আসল বাড়ি এ দুনিয়া নয়, বরং তার আসল বাড়ি আখেরাত সেই জীবনে প্রতিষ্ঠিত ও সফল হতে হলে এ জীবনে সেই অর্থ কামাই করতে হবে, যা সেখানে কার্যকর হবে। তা হলো নেক আমল।’ ২) তার মাঝে জান্নাত লাভের আকাঙ্খা ও আগ্রহ সৃষ্টি করা। ৩) তার মাঝে জাহান্নামের ভয় সৃষ্টি করা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
রহমতুল্লাহ ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ৪:০২ পিএম says : 0
লেখক কে অনেক অনেক ধন্যবাদ
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন