মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ে খাক হচ্ছে দেশের বেশিরভাগ জেলা। অনাবৃষ্টিতে খরতপ্ত-দগ্ধ বৈশাখে গতকাল রোববার তাপমাত্রার পারদ যশোরে আরও সোয়া ডিগ্রি লাফ দিয়ে উঠে গেছে ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের সর্বোচ্চ রেকর্ড। ঢাকায়ও পারদ লাফ দিয়েছে ৩৯.৫ ডিগ্রিতে। খুলনা, রাজশাহীতে ৪০ ডিগ্রি অতিক্রম করেই বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। দেশের বেশিরভাগ জেলায় তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি এমনকি এরও ঊর্ধ্বে অবস্থান করছে। তীব্র তাপপ্রবাহে কাবু সারাদেশে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত গেল ২৪ ঘণ্টায় কিংবা তার আগের দু’দিনেও দেশের কোথাও ছিটেফোঁটা বৃষ্টি ঝরেনি। আজ সোমবার সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
মৌসুমের এই সময়টাতে কালবৈশাখীর সাথে মাঝেমধ্যেই যে বৃষ্টি নামে, বজ্রবৃষ্টির সঙ্গে যে বর্ষণ হয় এবারের রুক্ষ খটখটে মরুময় ব্যতিক্রমী এই বৈশাখ মাসে সেই ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টিপাতটুকু নেই। এমনকি কালবৈশাখী ঝড়, বজ্রবৃষ্টি-বজ্রঝড়ও এখন পর্যন্ত নেই। নেই বৃষ্টিবাহী মেঘের আনাগোনা। বৈশাখ এখন প্রায় মধ্যভাগে। মাহে রমজানে স্বস্তি-শান্তির আশায় সবার চোখ আকাশপানে। চাই রহমতের মেঘ-বৃষ্টি।
পাউবো’র বৃষ্টিপাত পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে জানা গেছে, চলতি এপ্রিল মাসে (চৈত্র-বৈশাখ) এ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে স্বাভাবিকের তুলনায় কম। তার আগের টানা চার মাসে (ডিসেম্বর-মার্চ) দেশে সার্বিক বৃষ্টিপাতের হার স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৯৪ শতাংশই কম।
অব্যাহত তীব্র তাপদাহ, খরা-অনাবৃষ্টি, বাতাসে মরুদেশের মতো আগুনের হলকা মিলিয়ে বিরাজ করছে বৈরী আবহাওয়া। এতে করে মানুষ ঘরে ঘরে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সর্দি, কাশি, জ¦র, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, চর্মরোগ, চোখ ওঠাসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়েই চলেছে। হাসপাতাল-ক্লিনিকে রোগী ও স্বজনরা ভিড় করছেন। তবে করোনার ব্যাপক সংক্রমণের কারণে অনেক চিকিৎসকের চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন রোগী ও তাদের পরিজনরা। তীব্র গরমের কারণে রোগব্যাধিতে বিশেষ করে শিশু-বৃদ্ধদের দুর্ভোগ চরমে। তীব্র গরমের কবলে জনজীবনে হাঁসফাঁসের পাশাপাশি বিগত নভেম্বর থেকে টানা ছয় মাস ধরেই প্রচন্ড খরা, অনাবৃষ্টি, তাপপ্রবাহে পুড়ে ঝলসে যাচ্ছে ফল-ফসল। ফসল, ফল-ফলাদি খরতাপের কারণে বাতাসে হিটশকে যাচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপক।
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি এবং পূর্বাভাসে জানা গেছে, রাজশাহী, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া অঞ্চলের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। নেত্রকোণা জেলা এবং রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। এরপরের ৫ দিনের শেষের দিকে বৃষ্টি-বজ্র বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় তাপমাত্রা হ্রাসের দিকে যেতে পারে। এদিকে পশ্চিমা লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
পাউবো’র বৃষ্টিপাত পর্যবেক্ষণ : দেশের অনাবৃষ্টি পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বাপাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বিশেষ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে জানান, অদ্যাবধি দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলতি এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল (২৫ এপ্রিল) থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এবং এর সংলগ্ন ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন