ফতুল্লার তল্লা এলাকায় মসজিদে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ৩৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় সিআইডির জমা দেয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। একই সঙ্গে অভিযুক্ত তিতাস গ্যাসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, মসজিদ কমিটির সভাপতিসহ ২৯ জনের নামে সিআইডির দাখিল করা অভিযোগপত্র গত ১১ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালত আমলে নিয়ে মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে অভিযুক্ত তিতাসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলা শুনানির পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ এপ্রিল।
এ বিষয়ে সিআইডি নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হারুন অর রশিদ বলেন, আদালত অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন এবং অভিযুক্ত তিতাসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিয়েছেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলে অনুমোদন চেয়ে তাগিদপত্র দেয়া হবে।
মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুর গফুরসহ ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত তিতাস গ্যাসের আটজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হওয়ায় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে বলে উল্লেখ করে সিআইডি।
অভিযোগপত্রে মসজিদ পরিচালনায় কমিটির অবহেলা-অব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা, সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা, কারিগরি দিক বিবেচনা না করে অবৈধ বিদ্যুৎসংযোগ ঝুঁকিপূর্ণভাবে লাগানো, গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েও মুসল্লিদের জীবনের নিরাপত্তায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নেয়া, ঢাকা পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানির মিটার রিডার কালেক্টর ও ইলেকট্রিশিয়ানদের মসজিদে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়াসহ তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবেহলা, গ্যাসলাইন সঠিকভাবে তদারকি না করা, পাইপের লিকেজ মেরামত না করা, গ্যাসলাইন ঝুঁকিপূর্ণভাবে স্থাপন এবং স্থানান্তর না করার কারণে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৩৪ মুসল্লির মৃত্যু হয়।
তিতাস গ্যাস নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক বলেন, আদালতের আদেশের বিষয়টি তার জানা নেই। সিআইডি এমন কোনো আবেদন করেছে কি না, সেটিও তিনি জানাতে পারেননি।
গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে বাদ এশা শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে ৩৭ জন দগ্ধ হন। এর মধ্যে শিশুসহ ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। বিস্ফোরণে মসজিদের ছয়টি এসি মেশিন পুড়ে যায় এবং থাই জানালার গøাস উড়ে যায়। ওই সময় মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুর গফুর বলেছিলেন, গ্যাস লিকেজ মেরামতের জন্য যোগাযোগ করলে তিতাস গ্যাসের লোকজন তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। এ নিয়ে তখন তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
বিস্ফোরণের ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানার এসআই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, মসজিদ কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে সিআইডি। সিআইডি গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর তিতাস গ্যাসের চার কর্মকর্তাসহ আটজনকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন তিতাস গ্যাস ফতুল্লা আঞ্চলিক অফিসের বরখাস্ত হওয়া ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান রাব্বী, সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া, সহকারী প্রকৌশলী এস এম হাসান শাহরিয়ার, সিনিয়র সুপারভাইজার মনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী মো. আইউব আলী, সাহায্যকারী হানিফ মিয়া ও কর্মচারী ইসমাইল প্রধান।
তাদের দু’দিনের রিমান্ড শেষে ২১ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির করা হলে তারা জামিনে কারামুক্ত হন। পরবর্তী সময়ে তিতাস গ্যাসের চার কর্মকর্তাসহ আটজনকে চাকরিতে পুনর্বহাল করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন