রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কানাডার প্রধানমন্ত্রীর হাতে তার পিতার সম্মাননাটি তুলে দেবেন শেখ হাসিনা

১৪ সেপ্টেম্বর কানাডা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:৫২ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১২ সালে জাস্টিন ট্রুুডোর বাবা পিয়েরে ট্রুডোকে বাংলাদেশ সম্মাননা প্রদান করেছিল। কানাডা সফরকালে জাস্টিন ট্রুডোর হাতে সেই সম্মাননাটি তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কানাডা এবং জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক নরওয়ে, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড ও সুইডেন সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্রসচিব শহিদুল হক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১৪ সেপ্টেম্বর কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গ্রোবান ফান্ড নামে এক সংস্থার পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী সেই সম্মেলনে অংশ নেবেন। ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কানাডা অবস্থান শেষে শেখ হাসিনা ১৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক যাবেন। সেখানে জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশেন যোগদান শেষে ২৬ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কানাডা সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, কানাডা সফরকালে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনি নুর চৌধুরীকে ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য, সন্ত্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১২ সালে জাস্টিন ট্রুুডোর বাবা পিয়েরে ট্রুডোকে বাংলাদেশ সম্মাননা প্রদান করেছিল। কানাডা সফরকালে জাস্টিন ট্রুডোর হাতে সেই সম্মাননাটি তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে যাবেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। এ বছরের ১৩ জুন নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনের জন্য বাংলাদেশসহ মোট ১৫টি দেশকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এ অধিবেশনের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ফিজির স্থায়ী প্রতিনিধি পিটার টমসন।
জাতিসংঘের নিয়ম অনুসারে, ১৫ জন ভাইস প্রেসিডেন্টের মধ্যে পাঁচজন আসেন স্থায়ী পরিষদের দেশগুলো থেকে। বাকি দেশগুলো বিভিন্ন অঞ্চলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে। ১৩ সেপ্টেম্বরের অধিবেশনে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করবে বাংলাদেশ।
এ সময় গত শুক্রবার নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলার পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বহুত্ববাদ বজায় রাখার লড়াইয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন চেয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. এস জয়শঙ্কর যে আহ্বান জানিয়েছেন এ বিষয়ে এক সাংবাদিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানতে চান যে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে এ ধরনের সহায়তা চাইতে পারেন কিনা। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই তারা পারেন। এটাতে তো কোনো অসুবিধা নেই। আর এটা নতুন কিছুও নয়। গুলশানের জঙ্গিবাদী ঘটনার পর গোটা পৃথিবী আমাদেরকে সহায়তা করতে চেয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সাম্প্রতিক ইউরোপ সফর সম্পর্কে বলেন, এবারের ইউরোপ সফরে তিনি আইসল্যান্ড সফর করেছেন। বাংলাদেশের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটিই প্রথম আইসল্যান্ড সফর।
তিনি বলেন, আইসল্যান্ড আগ্নেয়গিরি ও গভীর সমুদ্রকে জয় করে সম্পদে পরিণত করেছে। শুধুমাত্র খাদ্য হিসেবে নয়, প্রযুক্তির সহায়তায় মাছের মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে ওষুধ, সী-ফুড, মাছের চামড়া দিয়ে কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সাথে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ এ থেকে লাভবান হবে।
এ সময় মন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, আইসল্যান্ডের কাছ থেকে পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে গভীর সাগরে মাছ ধরার পরিকল্পনা করছে সরকার, যা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, অথচ বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ সীমান্তের অনেক ভেতরে ঢুকে প্রতিনিয়ত বিপুল সংখ্যক ভারতীয় ফিশিং ট্রলার এবং মিয়ানমারের কিছু ফিশিং ট্রলার ইলিশ মাছ লুট করে নিয়ে যাচ্ছেÑএ ব্যাপারে সরকারের কোনো পদক্ষেপ আছে কি না?
এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আইসল্যান্ডের সাথে তথ্যবিনিময় ও প্রযুক্তিগত সহায়তা লাভ করে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের কোনো প্রযুক্তিই বর্তমানে বাংলাদেশের কারো নেই। সাগরে ইলিশ মাছ ধরার যেসব ট্রলার বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরছে, গভীর সমুদ্রের ধারেকাছেও যেতে পারবে না সেগুলো। আর সেই জায়গাতেই আমরা মাছ শিকার করার ব্যাপারে আইসল্যান্ডের সহায়তা চাই।
মন্ত্রী বলেন, এটা সম্ভব হলে গভীর সমুদ্র থেকে আমরা বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক মাছ ধরতে পারব যা আমাদের গোটা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রসঙ্গত, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ সীমানার অনেক ভেতরে প্রবেশ করে ভারতীয় বড় বড় ফিশিং ট্রলার ইলিশ মাছ শিকার করছে। ভারতের সেই মাছ শিকারের ট্রলারগুলোতে সশস্ত্র গার্ডও থাকে। বাংলাদেশী মাছ শিকারের ট্রলারগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওইসব ট্রলারের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশী সীমার মধ্যে ঢুকে মিয়ানমার কিংবা ভারতীয় ট্রলারের ইলিশ মাছ ধরার বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে এই অভিযোগে অনেক বিদেশী ট্রলার ও তার মাঝিদের আটক করা হচ্ছে। কোস্ট গার্ড এই দায়িত্ব পালন করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন