শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

৩৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার কাজ শুরু

টঙ্গীতে ট্যাম্পাকো অগ্নিকান্ডে ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৩২ : নিখোঁজ আরো ১১ জন

প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

টঙ্গী থেকে মোঃ হেদায়েত উল্লাহ : টঙ্গী বিসিক শিল্প এলাকার ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ জন। শনিবার অগ্নিকা-ের পর ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয় ২১ জনের। ঢাকা মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আরো ৫ জন। গতকাল বিকালে উদ্ধার কাজ চলাকালে আরো ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের দুই শতাধিক কর্মী ধসে পড়া কারখানা ভবনের উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী নিখোঁজ রয়েছে আরো ১১ জন শ্রমিক। ঘটনাস্থলের পাশে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হাসেম দায়িত্ব পালন করছেন। নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা কন্ট্রোল রুমে এসে তাদের পরিচয়পত্র, ছবি ও নাম দিয়ে তালিকাভুক্ত করছে।
নিখোঁজ শ্রমিকের তালিকায় রয়েছেন-মাগুরা সদরের চনপুর ইডারন গ্রামের আ. মালেক মোল্লার ছেলে আজিম উদ্দিন (৩৬), টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের উকুলকি গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম (৩৭), গাজীপুর নগরের হিমারদিঘী আমতলী বস্তি হরিজন কলোনির দিলীপ ডোমের ছেলে শ্রী রাজেশ বাবু (২২), লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের শিবপুর গ্রামের মো. আবু তাহেরের ছেলে রিয়াদ হোসেন মুরাদ (৩২), সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ঝিগারবাড়িয়া গ্রামের মমতাজ আলীর ছেলে মো. ইসমাইল হোসেন (৪৫), একই এলাকার সুলতান গাজীর ছেলে মো. আনিছুর রহমান (৩০), কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের মেছেরা গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম (৪০), চাঁদপুরের কচুয়ার তেগরিয়া গ্রামের ইউনুস পাটোয়ারীর ছেলে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী (৪৫) ও কুমিল্লার মুরাদনগরের টনকী গ্রামের মো. তোফায়েল হোসেনের ছেলে মাসুম আহমেদ (৩০)। কন্ট্রোল রুমে নিখোঁজদের খোঁজ নিতে এসে ছবি হাতে স্বজনদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।
যারা নিহত হয়েছে
নিহত ৩২ জনের মধ্যে ২৩ জনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন- আনিসুর রহমান (৪০), আব্দুল হান্নান (৬৫), ইদ্রিস আলী (৪০), জাহাঙ্গীর আলম (২৪), মামুন (২৮), রোজিনা (২০), মিজান (২৮-৩০), সাইদুর রহমান (৫০), মাইনুদ্দিন (৩৫), আল মামুন (৪০), হাসান সিদ্দিকি (৩০), সোলেমান (৩২), এনামুল হক (২৮), রাশেদ (২৫), শঙ্কর সরকার (২৫), গোপাল দাস (২৫), রফিকুল ইসলাম (২৮), সুভাষ চন্দ্র প্রসাদ (৩৫),আশিক (১২), দেলোয়ার হোসেন (৫০), আনোয়ার হোসেন (৪০), ওয়াহিদুজ্জামান স্বপন (৩৫), তাহমিনা আক্তার (২০)।
২৫টি ফায়ার সার্ভিস ইউনিটের বিরামহীন প্রচেষ্টায় প্রায় ৩৫ ঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময়ও ধসে পড়া ভবনের কয়েকটি স্থানে থেমে থেমে আগুন জ্বলছে। আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আসার পর গতকাল রোববার দুপুরের পর থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা উদ্ধার কাজ শুরু করে।
দায়ীদের শাস্তি পেতে হবে -শিল্পমন্ত্রী
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, টঙ্গীর ট্যাম্পাকো কারখানায় অগ্নিকা-ের ঘটনায় যাদের গাফিলতি থাকবে, তারা যে প্রতিষ্ঠান বা যে সংস্থার হোক না কেন তারা শাস্তি পাবেই। তিনি রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানা পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে আমরা দেখব এ ঘটনা কেন ঘটল।’
এসময় স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, শিল্প মন্ত্রণালয় সিনিয়র সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, পাঁচতলা ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। এটি যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে বলে ফায়ার সার্ভিস ঢাকা বিভাগীয় ডিডি মোঃ মোজাম্মেল হক এবং ডিডি মোঃ জহিরুল আমিন মিয়া মনে করেন।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ওলিউল ইসলাম, আব্দুল আজিজ, মিলন মিয়া ও সজিব জানান, শনিবার সকালে হঠাৎ বিকট একটি আওয়াজ হয়। তারা ভেবেছিলেন বিদ্যুতের ট্রান্সমিটার ব্রাষ্ট হয়েছে। কিন্তু পরক্ষণে জানতে পারেন ট্রাম্পাকোতে আগুন লেগেছে। সঙ্গে সঙ্গে তারা কারখানার পিছনের অংশে যান এবং দেখেন কারখানার ভিতরে দু’তলার জানালা দিয়ে অনেক মানুষের হাত বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছে। সে সময় তারা একটি মই দেয়ালের ওপর ঠেকিয়ে হামার ও শাবাল দিয়ে জানালা ভাঙ্গার চেষ্টা করেন এবং ভিতরে থাকা লোকদেরকে লাফ দিয়ে জীবন বাঁচানোর জন্য ১০/১৫জন লাফ দিয়ে জীবন বাঁচলেও ভিতরে আটকে পড়া লোকদের প্রচ- ধোয়ার কারণে তাদেরকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। চোখের সামনে এতগুলো মানুষ মারা গেল, অথচ কিছুই করতে পারলাম না বলে তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
গাজীপুরে কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা ও গাজীপুরের সব সরকারি চিকিৎসকের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. নাজিব আহম্মেদ এ তথ্য জানিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন