উমর ফারুক আলহাদী : পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশব্যপী সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাব-পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। সারা দেশে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ এবং সাড়ে সাত হাজার র্যাব সদস্য নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীতে মোতায়েন করা হয়েছে আনসার বাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্স। দেশের বৃহৎ ঈদের মাঠ শোলাকিয়াতে নেয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এবারেই প্রথম ঈদের জামাতের নিরাপত্তায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল থেকে তারা টহল দিতে শুরু করেছে। নাশকতা কিংবা জঙ্গি হামলাসহ যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলা করতে গতকাল থেকে সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঈদের জামাতের নিরাপত্তার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জেলা প্রশাসকদের কছে চিঠি পাঠিয়ে নিরাপত্তাসংক্রান্ত দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব ড. ফারুক আহম্মদ স্বাক্ষরিত জেলা প্রশাকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে দেশের ২৮৬টি ঊপজেলায় ৮১ হাজার ২৯৬টি ঈদের জামায়াতে তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত করতে হবে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে র্যাব-পুলিশকে বলা হয়েছে, ঈদের ছুটিতে উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। বিদ্যুৎসহ চলমান বিভিন্ন প্রকল্পেও নজরদারি বাড়ানো এবং একই সঙ্গে ব্যাংকের ভল্ট ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাও জোরদার করার জন্য বলা হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গি হামলা প্রতিরোধ করতে ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে জঙ্গিদের তথ্য পেলে সাথে সাথে সন্দেহজনক স্থাপনা, বাসাবাড়ি, মেস কিংবা আবাসিক হোটেলে ব্লক রেইড দেয়া হবে। র্যাব, আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, আনসার, বিজিবির বাইরে সারা দেশে দেড় লাখ পুলিশ সদস্য ঈদ উপলক্ষে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। রাজধানীর বাসাবাড়ি ও পাড়া-মহল্লায় পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা টহল দল টহল দিচ্ছে। কোরবানির পশুর হাট, বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, মহাসড়ক, নৌপথ এবং সীমান্ত এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি বিশেষ নিরাপত্তা টহল অব্যাহত রয়েছে, এমনটি জানিয়েছেন পুলিশ সদর দফতর, র্যাব, বিজিবি, আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, শুধু বিদেশী নয় সবার নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার কারণে এবারের ঈদুল আজহার নিরাপত্তার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য নিরাপত্তাজনিত বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে র্যাব ও পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোরবানির পশুর হাট থেকে ঈদের জামাত সবখানেই থাকছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে র্যাব-পুলিশ ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন সরকার। কারণ ইতিপূর্বে বিদেশী নাগরিকদের লক্ষ করে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। দেশে অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। বিদেশী নাগরিকরা কাজ করছে এসব প্রকল্পে। পাশাপাশি একাধিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ চলমান। ঈদের ছুটিতে এসব প্রকল্পে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। চিঠিতে বলা হয়, ছুটির দিনে অফিস-আদালত ও ব্যাংকপাড়া বন্ধ থাকবে। টানা ছুটির কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছাড়াও চুরি-ডাকাতি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ভল্ট নিরাপত্তার আওতায় আনা প্রয়োজন। চিঠিতে আরও বলা হয়, ব্যাংকগুলো বন্ধ হওয়ার পর কোনো অপরিচিত লোকজন ব্যাংকের ভেতরে যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য তীক্ষè খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ছুটির দিনে পর্যায়ক্রমে এসে শাখাগুলো পর্যবেক্ষণ ও দেখভাল করতে হবে।
ঈদের সার্বিক নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক ইনকিলাবকে বলেনে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবং নির্বিঘেœ ঈদ উদযাপনের জন্য সারা দেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তিনি বলেন, কোনো ভয়-ভীতি নেই। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে যা যা প্রয়োজন পুলিশ তাই করছে। পশুর হাটে কোরবানির পশু কেনাবেচা ও আনা-নেওয়া করতে যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য পুলিশের বিশেষ টহল টিম নিয়োজিত রয়েছে। চাঁদাবাজি প্রতিরোধ করতে কঠোর নিদের্শনা দেয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি শহীদুল হক বলেন, দেশে কোনো ধরনের বড় হামলা বা নাশকতার আশঙ্কা নেই। তবে সবকিছু বিবেচনায় রেখেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ঈদকে নির্বিঘœ করতে এবং মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ঈদগাহ মাঠ, সড়ক, মহাসড়ক, কোরবানির পশুর হাট এবং দেশের বিপণিবিতানগুলোতে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে জেলায় জেলায় পুলিশ সুপারদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে নিরাপত্তাসংক্রান্ত দিকনিদের্শনা দেয়া হয়েছে। কিশোরগঞ্জে শোলাকিয়া ঈদের ময়দানসহ আশপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মহানগরীতে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্য সারা দেশের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।
একটি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা বলেছেন, যে কোনো ধরনের নাশকতা মোকাবিলা করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঈদকে কেন্দ্র করে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী বা নাশকতামূলক কর্মকা- যাতে না ঘটে এজন্য গোয়েন্দারাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনও দিয়েছে। সে হিসেবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরো জানান, গুলশান ও শোলাকিয়ার মতো পুনরায় যাতে জঙ্গিরা কোনো ধরনের হামলা বা নাশকতা করতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা কার্যক্রম ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর থেকে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলার বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। স্টেশন ও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জানান, ঈদ উপলক্ষে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এবার সারা দেশে ১ লাখ ৫৫ হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। যে কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা যাতে না ঘটে এজন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে বলে জানান তিনি। ঈদে ছিনতাই ঠেকাতে সহায়তা দিচ্ছে পুলিশ। বড় ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে পুলিশের সহায়তা নিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একইভাবে চাঁদাবাজি ঠেকাতে পুলিশের কন্ট্রোল রুমে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে অজ্ঞান পার্টির কবল থেকে মুক্ত থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান (অপারেশন) বলেন, রাজধানীতে প্রথমে গরুর হাটকেন্দ্রিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। তারপর ঈদের মাঠ অর্থাৎ যেসব স্থানে ঈদের নামাজ আদায় করা হবে সেসব স্থানে পুলিশ সদস্যরা পোশাকে ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা প্রতিটি গবাদি পশুর হাটে দায়িত্ব পালন করছেন।
ডিএমপির মিডিয়া শাখার ঊপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, সম্ভাব্য সকল বিষয় বিবেচনায় রেখে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার মধ্যে কূটনৈতিক জোন গুলশানের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর ওই এলাকাকে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। জঙ্গি হামলার কারণেই সারা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। ঊপ পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থেই ঈদের ব্লক রেইড অব্যাহত থাকবে। রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় নিয়োজিত রয়েছে পুলিশের বিশেষ টহল দল। আছে মনিটরিং সেল। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, মন্ত্রী পাড়া, ব্যাংক-বীমা অফিস, জাতীয় সংসদ ভবন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিপণিবিতানে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
রাজধানী ঢাকায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। ঢাকার প্রতিটি প্রবেশপথে রয়েছে পুলিশ ও র্যাবের অস্থায়ী চেকপোস্ট। ব্যস্ততম এলাকার মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্টেশন ও গবাদি পশুর হাটে বাড়তি দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। রাজধানী শহরকে ঈদে নিñিদ্র নিরাপত্তা দিতে নানা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে পুলিশ। তৎপর রয়েছে সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা। ঢাকা মেট্রোপলিটনে ৩৪ হাজার পুলিশ সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার পুলিশ ঈদে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) ইউসুফ আলী জানান, পরিস্থিতি বিবেচনা করেই নিয়ম অনুসারে পুলিশের ছুটি দেয়া হয়। আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে পুলিশের ছুটি কম। ২৫ ভাগের বেশি ছুটিতে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।
ডিএমপির গুলশান জোনের ডিসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমরা খুবই সতর্ক আছি। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ভয় বা আতঙ্কের কিছুই নেই। নিরাপত্তার গুলশান, নিকেতন ও বারিধারা এলাকায় ৩৮টি চেকপোস্ট রয়েছে। ঈদে এই এলাকার বাসিন্দাদের নিñিদ্র নিরাপত্তার জন্য ৬শ’ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। টহল পুলিশ ছাড়াও ইতোমধ্যে অস্থায়ী চেকপোস্ট বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিরাপত্তার লক্ষ্যেই চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
জানা যায়, গুলশান জোনে স্থায়ী চেকপোস্ট রয়েছে ১৮টি। এখন প্রতিদিন অন্তত অস্থায়ী চেকপোস্ট বসানো হয় প্রায় ২০টি। তা ছাড়া নিয়মিত সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় কূটনৈতিক পুলিশ রয়েছে ১২শ’।
এ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো এক নির্দেশ বার্তায় বলা হয়েছে, দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থান, বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে, লঞ্চ ও ফেরিঘাটে নজরদারি বাড়াতে হবে। এ পদক্ষেপ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। একই ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে। পাশাপাশি এ মুহূর্তে বিভিন্ন জেলা থেকে নৌকা, ট্রলার ও ট্রাকে গরু আসছে। এসব যান ঘিরে চাঁদাবাজির ব্যাপারেও সরকারের এজেন্সিগুলোকে মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। এছাড়া সীমান্ত দিয়ে কোরবানির চামড়া যাতে পাচার না হয় সেজন্য সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কোরবানির কাঁচা চামড়া যাতে সীমান্তমুখী যেতে না পারে এজন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাসহ পুলিশ, বিজিবি, র্যাবকে। সীমান্ত এলাকার লোকজন বেশি দাম পেয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের ফড়িয়াদের হাতে পশুর চামড়া তুলে দেয়। ফলে ওইসব এলাকার চামড়া ঢাকামুখী আসে না। চামড়া পাচার রোধে ট্যানারি মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আগেই এসব বিষয়ে সরকারকে অবহিত করেছে।
ঈদের ছুটিতে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড় ও পশুর হাটে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করে বাইনোকুলার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দুষ্কৃতদের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছে র্যাব-পুলিশ।
নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে এবার শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার নামাজের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় এ ঈদ জামাতে প্রথমবারের মতো বিজিবি মোতায়েনের মাধ্যমে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিজিবির পাশাপাশি র্যাব-পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীও ঈদগাহের চারপাশে মোতায়েন থাকবে। ঈদুল আজহার ১৮৯তম জামাতের জন্য কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস ও পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।
পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান জানান, সবকিছু মাথায় রেখে এবার শোলাকিয়ায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক বিজিবি, র্যাব-পুলিশ, এপিবিএন ও আনসার সদস্য থাকবে। তাছাড়া সাদা পোশাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মাঠের ভেতর ও বাইরে কাজ করবে। ঈদের দিন মাঠের তিন দিকের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হবে। মাঠের সামনের দুটি গেট দিয়ে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশির পর মুসল্লিদের মাঠে ঢুকতে দেওয়া হবে। মাঠ ঘিরে থাকবে সিসি ক্যামেরার নজরদারি। তিনি আরো জানান, পুলিশ তার সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চটাই করবে। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন