গত ১০ এপ্রিল রাতে সিকিম ও ভুটান সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চল এবং একই সময়ে ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে দুটি ভূমিকম্প সঙ্ঘটিত হয়। রিখটার স্কেলে ৫ মাত্রা হলেও বিশেষজ্ঞদের ধারণা হিমালয়ান বেল্টে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে। আর গতকাল ফের ভারতের আসামে রিখটার স্কেলের ৬ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পের পর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন উত্তরের বৃহত্তর দিনাজপুর ও রংপুর এবং বরেন্দ্র অঞ্চল যেহেতু হিমালয়ান বেল্টের কাছাকাছি সেহেতু উত্তর জনপদে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে।
এদিকে উত্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ এবং কুষ্টিয়ায় ১৬টি আবহাওয়া অফিসের ১৫টিতেই ভূমিকম্প পরিমাপক রিখটার স্কেল নেই। এগুলোতে রিখটার স্কেল এবং গবেষকসহ প্রয়োজনীয় লোকবল থাকলে ভূমিকম্প সহায়ক অনেক গবেষণা তথ্য আগাম পাওয়া যেত বলে অভিমত পর্যবেক্ষক মহলের।
ইতিহাস বলছে, ১৮৮৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির পাশাপাশি হিমালয়ের কৈলাশ থেকে নেমে আসা ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পাল্টে যায়। একই অঞ্চল থেকে প্রবাহমান করতোয়ার বিশাল প্রবাহও বদলে যায়। বগুড়া জেলা প্রশাসক অফিসের মোহাফেজ অফিসের নথিপত্র বলছে, ১৮৮৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্রহ্মপুত্র ও করতোয়া নদীর গতিপথ ও প্রবাহ পাল্টে বর্তমান রূপ ধারণ করে। এর প্রভাবে ১০০ বছর পর উত্তরাঞ্চলে ১৯৮৮ সালে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় তৎকালীন সরকারকে হিমশিম খেতে হয়।
এদিকে আবহাওয়া অফিসে যোগাযোগ করে জানা যায়, উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে এখন ১৬টি আবহাওয়া অফিস রয়েছে। এগুলো হল পঞ্চগড়, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, রংপুর, নীলফামারী, ডিমলা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, নওগাঁর বদলগাছি, বগুড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, পাবনার ঈশ^রদী ও বাঘাবাড়ি, রাজশাহী এবং কুষ্টিয়া। এরমধ্যে কেবল রংপুরেই রয়েছে ভূমিকম্প পরিমাপক রিখটার স্কেল। এছাড়া ভূতত্ত¡ জরিপ অধিদফতরের একটি অফিস রয়েছে বগুড়ায়।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, উত্তরের আবহাওয়া অফিসগুলোতে যতদ্রæত সম্ভব রিখটার স্কেল স্থাপনসহ ভূমিকম্প বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা পরিচালনার মত জনবল নিয়োগ সময়ের দাবি। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগকে আরো শক্তিশালী উদ্ধার সরঞ্জাম সরবরাহ করাও জরুরি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যক্রমে, রেডক্রিসেন্ট, স্কাউট ও ক্যাডেটদের সম্পৃক্ত করে মাঝে মাঝেই মহড়ার ব্যবস্থা করলে দুর্যোগ মোকাবেলায় একটা সক্ষমতা গড়ে উঠবে বলে তাদের অভিমত।
বগুড়ার ইতিহাস গবেষক আব্দুর রহীম বগরা তাঁর সংগৃহীত তথ্য থেকে উদ্ধৃত করে জানান, ২০১০ থেকে ২০২১ সালের এ পর্যন্ত উত্তর জনপদ তথা হিমালয়ান বেল্টের সিকিম, ভুটান, অরুনাচল ও আসাম অঞ্চলে দেড় শতাধিকবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ২০১৬ সালের এপ্রিলে ৩ বার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে উত্তরাঞ্চলে।
উত্তরের আবহাওয়া অফিসগুলোতে রিখটার স্কেল না থাকায় মৃদুলয়ের অনেক ভূকম্পন ধরাও পড়েনা আনেক সময়। তার মতে দীর্ঘদিন ধরে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলশ্রুতিতে উত্তর জনপদে মাটির নীচে ভ্যাকুম তৈরি হয়েছে। সেটা ভূমিকম্পের সময় মারাত্মক ভূমি ধ্বসের কারণ হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন